নির্বাচনকে ঘিরে আ’লীগ ও বিএনপির পক্ষে-বিপক্ষে ভুয়া খবর ছড়ানো হচ্ছে!

গত ৯ই ডিসেম্বর সন্ধ্যায় একটি ফেসবুক পেজ থেকে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভীর নামে লেখা একটি ভুয়া বক্তব্য প্রকাশ করা হয়।

মনোনয়ন বাণিজ্য ও স্বতন্ত্র প্রার্থী নিয়ে দলটির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে জড়িয়ে লেখা ঐ ভুয়া বক্তব্যটি কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই অন্তত ১৯টি ফেসবুক পেজ পুনরায় প্রকাশ করে।

এর মধ্যে ১৮টি পেজেই হুবহু একই শিরোনাম এবং হ্যাশট্যাগ ব্যবহার করা হয়।

প্রায় কাছাকাছি সময়ে ক্ষমতাসীন দলের ছাত্র সংগঠনকে জড়িয়েও একটি ভুয়া খবর ছড়ানো হয়।

গ্রাফিক কার্ড আকারে ছড়ানো ঐ ভুয়া খবরে স্থানীয় গণমাধ্যমের বরাত দিয়ে দাবি করা হয়, ‘বিএনপির অবরোধ চলাকালে পেট্রোল ঢেলে যাত্রীবাহী বাসে আগুন দেওয়ার সময় দুই ছাত্রলীগ কর্মীকে আটক করেছে পুলিশ’।

এটিও অল্প সময়ে মধ্যে অসংখ্য ফেসবুক পেজ ও গ্রুপে ছড়িয়ে পড়ে।

বাংলাদেশে সাম্প্রতিক সময়ে প্রায়ই এ ধরনের ভুয়া খবর ও অপতথ্য ছড়ানোর ঘটনা ঘটতে দেখা যাচ্ছে।

বিশেষ করে নির্বাচনের দিন যতই ঘনিয়ে আসছে, ততই এ ধরনের ঘটনার সংখ্যা বাড়ছে।

ভুয়া খবর ও অপতথ্য যাচাইকারী প্রতিষ্ঠান ডিসমিসল্যাব বলছে, চলতি বছর বাংলাদেশ সম্পর্কে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে যত বিভ্রান্তিকর তথ্য পাওয়া গেছে, তার ৪৪ শতাংশই ছিল রাজনীতি নিয়ে।

এক্ষেত্রে চলতি বছরের প্রথম তিন মাসে যেখানে ৭২টি রাজনৈতিক ভুয়া খবর প্রকাশিত হয়েছিল, গত তিন মাসে সেটি তিন গুণেরও বেশি পরিমাণে বেড়ে আড়াইশ ছুঁয়েছে।

“চলতি বছরের প্রতিটি প্রান্তিকেই রাজনৈতিক অপতথ্যের সংখ্যা লাফিয়ে লাফিয়ে বেড়েছে”, বিবিসি বাংলাকে বলেন ডিসমিসল্যাবের গবেষণা বিভাগের প্রধান মিনহাজ আমান।

রাজনৈতিক এসব অপতথ্য ও ভুয়া খবরের অধিকাংশ ছড়িয়েছে বাংলাদেশের প্রধান দুই দল আওয়ামী লীগ ও বিএনপিকে নিয়ে।

বাংলাদেশে ২০১৮ সালের জাতীয় নির্বাচনের সময়ও এই দুই দলের পক্ষে-বিপক্ষে ভুয়া খবর ছড়ানোর ঘটনা ঘটেছিল। তখন অবশ্য তারা দু’দলই নির্বাচনে ছিল।

কিন্তু এবার বিএনপি নির্বাচনে অংশ নেয়নি। তারপরও রাজনৈতিক ভুয়া খবর ও অপতথ্য ছড়ানোর ঘটনা ক্রমশ বেড়ে চলেছে।

“নির্বাচনকে সামনে রেখে জনমতে প্রভাব বিস্তার করাই এসব কর্মকাণ্ডের লক্ষ্য”, বলেন ভুয়া খবর যাচাইকারী প্রতিষ্ঠান ফ্যাক্ট ওয়াচের পরিচালক অধ্যাপক সুমন রহমান।

রহমানের মতে, বিএনপি নির্বাচনে না আসায় আওয়ামী লীগ যে চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছে, সেটি মোকাবেলার অংশ হিসেবেই দলটির কর্মী-সমর্থকরা বিএনপির ভাবমূর্তি নষ্ট করার চেষ্টা চালাচ্ছে।

অন্যদিকে, বিএনপির কর্মী-সমর্থকরাও ক্ষমতাসীন দলের ভাবমূর্তি নষ্ট করার চেষ্টা করছে যেন সাধারণ ভোটাররা আগামী নির্বাচনে ভোট দেয়ার আগ্রহ না পায়।

ফলে নির্বাচনকে সামনে রেখে দু’দলের পক্ষে-বিপক্ষে “উদ্দেশ্যমূলক প্রোপাগান্ডা” চালানো হচ্ছে বলে মনে করছেন অধ্যাপক সুমন রহমান।

বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশনের (বিটিআরসি) হিসেবে, বাংলাদেশে বর্তমানে ১৩ কোটিরও বেশি মানুষ ইন্টারনেট ব্যবহার করেন, যাদের একটি বড় অংশই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম, বিশেষ করে ফেসবুক ব্যবহার করেন।

দেশটিতে ঠিক কতজন ফেসবুক ব্যবহার করেন, সে ব্যাপারে নির্দিষ্ট কোন তথ্য প্রকাশ করেনি এর মালিকানা প্রতিষ্ঠান মেটা। তবে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবস্থাপনার সাথে যুক্ত প্রতিষ্ঠান নেপোলিয়নক্যাটের এক হিসেবে দেখা যাচ্ছে, বাংলাদেশে সাড়ে চার কোটিরও বেশি মানুষ ফেসবুকে যুক্ত আছেন।

ফলে বিপুল সংখ্যক এই মানুষকে নিজেদের পক্ষে আনতে সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমকেই বেছে নিচ্ছে রাজনৈতিক দল ও তাদের কর্মী-সমর্থকরা।

২০২৩ সালে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বাংলাদেশে সম্পর্কে সবচেয়ে বেশি বিভ্রান্তিকর তথ্য ছড়ানো হয়েছে রাজনীতি নিয়ে।

চলতি বছর বাংলাদেশে যেসব বিষয়ে ভুয়া খবর ও অপতথ্য ছেড়ানো হয়েছে, সেগুলোর বেশিরভাগই ছিল- তত্ত্বাবধায়ক সরকার, মার্কিন ভিসানীতি ও নিষেধাজ্ঞা, বিএনপির আন্দোলন, আওয়ামী লীগ, প্রধানমন্ত্রী ও সরকারের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের পদত্যাগ, নেতাদের মৃত্যু, হরতাল-অবরোধ এবং সংঘর্ষ নিয়ে।

এর মধ্যে বছরের শুরু থেকেই তত্ত্বাবধায়ক সরকার নিয়ে বেশ আলোচনা থাকায় এ বিষয়ে ভুয়া খবরেও ছড়িয়েছে বেশি। ভুয়া খবরগুলোর মধ্যে ছিল ‘যুক্তরাষ্ট্রের সমর্থন নিয়ে ড. মুহাম্মদ ইউনূস তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান হচ্ছেন এবং সেনাবাহিনী বা বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি সেই সরকার ব্যবস্থার “অনুমোদন” দিয়েছেন’।

এরপর সেপ্টেম্বরে এসে অপতথ্যের নতুন ক্ষেত্র হয়ে ওঠে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ভিসানীতি ও নিষেধাজ্ঞা। এসময় ভিসা নিষেধাজ্ঞার নানা রকম ভুয়া তালিকা সামাজিক মাধ্যমে ছড়ানো হয়েছে।

একপক্ষের তালিকায় প্রধানমন্ত্রীসহ সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রী ও উপদেষ্টা, সরকার সমর্থক আমলা ও বুদ্ধিজীবীরা ভিসা নিষেধাজ্ঞায় পড়েছেন বলে দাবি করা হয়।

অপর পক্ষের তালিকায় মার্কিন রাষ্ট্রদূতের ভুয়া বক্তব্য প্রচার করে দাবি করা হয় যে, বিএনপির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি তারেক রহমান, মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ বিএনপির অনেক শীর্ষ নেতা যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা নিষেধাজ্ঞার আওতায় পড়েছেন।

এই সময়ে মধ্যে বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া, আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের, তথ্যমন্ত্রী হাসান মাহমুদ, সঙ্গীতশিল্পী ও সংসদ সদস্য মমতাজ-সহ আধ ডজন রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বের মৃত্যুর খবরও ছড়াতে দেখা যায়।

অক্টোবরে বিএনপির হরতাল-অবরোধ শুরু হলে সংঘর্ষ ও মৃত্যুর বিষয়ে নানান ধরনের ভুয়া খবর ছড়াতে দেখা গেছে।

এবছর ডিপফেক ভিডিওর মাধ্যমেও ভুয়া খবর ছড়ানোর নতুন এক প্রবণতা দেখা যাচ্ছে।

গত অক্টোবরে ইসরায়েল-গাজা যুদ্ধ শুরুর পর বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের নামে একটি ডিপফেক ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়ানো হয়।

এছাড়া বছরব্যাপী বিভিন্ন সময়ে আওয়ামী লীগ ও বিএনপির নারী নেত্রীদের নিয়ে বেশকিছু অপতথ্য ছড়ানো হয়েছে।

বাংলাদেশে এসব ভুয়া খবর ও অপতথ্যের বেশিরভাগই ছড়িয়েছে ফেসবুক ও ইউটিউব চ্যানেলে।

“বাংলাদেশে যখন যে ইস্যু আলোচনায় থাকে, তখন সেটি নিয়ে ভুয়া খবর ও অপতথ্য ছড়াতে দেখা যায়” বিবিসি বাংলাকে বলেন ফ্যাক্ট ওয়াচের পরিচালক অধ্যাপক সুমন রহমান।

বাংলাদেশে ২০১৮ সালের জাতীয় নির্বাচনের আগে শীর্ষস্থানীয় সংবাদ মাধ্যমগুলোর ওয়েবসাইটের নকশা নকল করে হুবহু আরেকটি ওয়েবসাইট তৈরি করে ভুয়া খবর ছড়ানোর ঘটনা ঘটেছিল।

তখন ফেসবুকে লিখিত পোস্টেরও মাধ্যমেও বিভ্রান্তি ছড়ানো হয়েছিল। কিন্তু এবার সেগুলোর কোনটিই দেখা যাচ্ছে না।

তার বদলে ছবি, গ্রাফিক্সকার্ড এবং ভিডিওর মাধ্যমে সুকৌশলে ভুয়া খবর ও অপতথ্য ছড়ানো হচ্ছে।

ছবি বা গ্রাফিক্সকার্ডের মাধ্যমে ভুয়া খবর ছড়ানোর ক্ষেত্রে সেগুলোতে মূলধারার গণমাধ্যমগুলোর নাম এবং লোগা ব্যবহার করা হচ্ছে। ফলে সাধারণ মানুষ সহজেই এগুলো দেখে বিভ্রান্ত হচ্ছে।

ভুয়া ভিডিওর ক্ষেত্রে চটকদার শিরোনাম এবং ‘থাম্বনেল’ ব্যবহার করা হচ্ছে যাতে দর্শকরা সেটি দেখার আগ্রহ পায়।

এছাড়া এনিমেশন এবং ডিপফেক প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে ভিডিও তৈরি ঘটনাও এবার দেখা যাচ্ছে।

বিভিন্ন আইডি, পেজ এবং গ্রুপের মাধ্যমে এগুলো দ্রুততার সাথে সামাজিক মাধ্যমে ছড়ানো হচ্ছে।

এটি করার জন্য অনেকক্ষেত্রে “সংঘবদ্ধ” প্রচেষ্টাও দেখা যাচ্ছে।

“অনেক সময় দেখা যাচ্ছে একই পোস্ট একই বা কাছাকাছি সময়ে অনেকগুলো পেজ বা আইডি থেকে পোস্ট করা হচ্ছে। আবার ঐ একই ধরনের আইডি থেকেই একে অন্যের পোস্টে কমেন্ট বা শেয়ার করছে।” বিবিসি বাংলাকে বলেন ডিসমিসল্যাবের গবেষণা বিভাগের প্রধান মিনহাজ আমান।

এক্ষেত্রে ব্যক্তির নিজের খোলা আইডি যেমন ব্যবহার করা হচ্ছে, তেমনি কম্পিউটারে সৃষ্ট ভুয়া প্রোফাইল বা বটের ব্যবহারও দেখা যাচ্ছে।

সাধারণ মানুষকে ভুয়া খবরের ফাঁদে ফেলার আরেকটি কৌশল হচ্ছে সুন্দরী নারীর নামে ফেসবুক আইডি বা পেজ খোলা।

এ ধরনের আইডি বা পেজ খোলার পর প্রথমে আকর্ষণীয় ছবি ও ভিডিও পোস্ট করে ফ্যান-ফলোয়ার বাড়ানো। এরপর সুযোগ বুঝে বিভিন্ন ইস্যুতে ভুয়া খবর বা অপতথ্য ছড়ানো হয়।

এ ধরনের পেজ বা আইডিগুলো অনেকটা বটের মতো কাজ করে। তাছাড়া এসব পেজ বা আইডিতে ব্যবহারকারী সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্যও পাওয়া যায় না।

প্রোফাইল বা পেজের ছবি হিসেবে অন্য মানুষ বা এআইয়ের মাধ্যমে তৈরি ছবি ব্যবহার করা হচ্ছে।

এছাড়া বাস্তবে অস্তিত্ব নেই এমন কিছু গণমাধ্যমের নামে পেজ খুলেও সেখান থেকে বিভ্রান্তিকর খবর ছড়াতে দেখা যাচ্ছে।

আবার অর্থ আয়ের সুযোগ থাকার কারণেও অনেক সময় সামাজিক মাধ্যমে ভুয়া খবর ছড়িয়ে পড়ছে।

“এক্ষেত্রে দেখা যায়, শুরুতে হয়তো রাজনৈতিক প্রোপাগান্ডার অংশ হিসেবেই একটি বিষয়ে ভুয়া খবর ছড়ানো হয়েছে এবং মানুষ বেশ সাড়া দিচ্ছে। তখন কনটেন্ট ক্রিয়েটররা অর্থ আয়ের উদ্দেশ্যে ক্লিক-বেজড ভিডিও বানাতে গিয়ে ভুয়া খবর বা অপতথ্য ছড়ানো শুরু করে।” বলেন ফ্যাক্ট ওয়াচের পরিচালক অধ্যাপক সুমন রহমান।

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভুয়া খবর ছড়ানোর নতুন অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার হচ্ছে গণমাধ্যমের নামে বানানো নকল ফটোকার্ড।

একটি সংবাদকে সহজে এবং আকর্ষণীয় পন্থায় পাঠকের কাছে তুলে ধরার উদ্দেশ্যে গত কয়েক বছর ধরেই ফটোকার্ড ব্যবহার করছে মূলধারার গণমাধ্যমগুলো।

সাধারণত বড় কোন রাজনৈতিক নেতার বক্তব্য বা উদ্বৃতির তুলে ধরার জন্যই এটি ব্যবহার হয়ে থাকে। পাশাপাশি পোস্টের কমেন্ট বিভাগে পুরো খবরের লিংক দেওয়া হয়।

এক্ষেত্রে গণমাধ্যম ভেদে ভিন্ন ভিন্ন নকশার ফটোকার্ড দেখা যায়, যেখানে তাদের নাম এবং লোগোও থাকে।

ফেসবুকে এ ধরনের ফটোকার্ড বেশ জনপ্রিয়ও হয়ে উঠেছে। আর সেই সুযোগটাই কাজে লাগাচ্ছে অপতথ্য প্রচারকারীরা।

ভুয়া খবর যাচাইকারী গবেষণা প্রতিষ্ঠান ডিসমিসল্যাবের হিসেবে, গত জুন মাসের পর ভুয়া তথ্য ছড়ানোর কৌশল হিসেবে গ্রাফিক্সের ব্যবহার প্রায় ৪২ শতাংশ বেড়েছে।

আমান এ বিষয়ে বলেন, “একটি লেখা পোস্ট বা আর্টিকেলের চেয়ে একটি ছবি বা ভিডিও সহজেই মানুষের মনোযোগ আকর্ষণ করতে পারে। এটি বুঝতে পেরেই এবার তারা আগের কৌশল পরিবর্তন করে ছবি এবং ভিডিওর মাধ্যমে ভুয়া খবর ছড়াচ্ছে।”

একই বিষয়ে কাজ করা আরেকটি গবেষণা প্রতিষ্ঠান ফ্যাক্ট ওয়াচের পরিচালক অধ্যাপক সুমন রহমান বিবিসি বাংলাকে বলেন, “দেশের মূলধারার গণমাধ্যমগুলোর যে বিশ্বাসযোগ্যতা রয়েছে, সেটিকে পুঁজি করে নিজেদের উদ্দেশ্য হাসিল করতেই নতুন এই কৌশল গ্রহণ করেছে অপতথ্য প্রচারকারীরা।”

এ ধরনের ঘটনায় গণমাধ্যমগুলোও বেশ উদ্বিগ্ন হয়ে উঠেছে। ফলে প্রায়ই তাদেরকে ‘ডিসক্লেইমার’ দিতে দেখা যাচ্ছে, যেখানে বলা হচ্ছে “এই সংবাদটি আমরা প্রকাশ করিনি। এটি ভুয়া সংবাদ।”।

ইসরায়েল-গাজা যুদ্ধ নিয়ে বিএনপি’র ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের বক্তব্যের একটি ভিডিও সম্প্রতি বাংলাদেশে বেশ শোরগোল ফেলে দেয়।

গত অক্টোবরে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে প্রকাশিত ঐ ভিডিওর শিরোনামে বলা হয়, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে খুশি রাখতে ইসরায়েলকে সমর্থন দিচ্ছে বিএনপি।

আর ভিডিওতে তারেক রহমানের মতো দেখতে একজনকে বলতে শোনা যায় যে, যুক্তরাষ্ট্রের সাথে সুসম্পর্ক নষ্ট হওয়ার ভয়ে তারা ফিলিস্তিন ইস্যুতে কথা বলছেন না।

কিন্তু ভিডিওটি আসলে ছিল একটি ভুয়া ভিডিও, যেখানে ডিপফেক প্রযুক্তি ব্যবহার করা হয়েছে। বাস্তবে মিস্টার রহমান এ ধরনের কোন বক্তব্য দেননি।

সম্প্রতি বাংলাদেশে এমন আরও কয়েকটি ডিপফেক ভিডিও ছড়িয়ে পড়তে দেখা গেছে, যা ভুয়া বা অপতথ্য ছড়ানোর ক্ষেত্রে নতুন এক প্রবণতা হিসেবে দেখছেন গবেষকরা।

“বাংলাদেশে এর আগেও আমরা কিছু ডিপফেক ভিডিও ছড়াতে দেখেছি। তবে সেগুলো ছিল বিদেশে তৈরি ভিডিও। কিন্তু এবারের ভিডিওটি দেশে তৈরি হয়েছে এবং সেটাই সবচেয়ে শঙ্কার ব্যাপার”, বিবিসি বাংলাকে বলছিলেন ফ্যাক্ট ওয়াচের পরিচালক অধ্যাপক সুমন রহমান।

অপপ্রচার এবং প্রোপাগান্ডা ক্ষেত্রে যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা অনেক দেশে গত কয়েক বছর ধরেই এ ধরনের ভুয়া ভিডিওর ব্যবহার ক্রমেই বাড়তে দেখা যাচ্ছে, বিশেষ করে নির্বাচনের মৌসুমে। এখন বাংলাদেশেও সেটি শুরু হয়েছে, যা ভুয়া খবর ছড়ানোর ক্ষেত্রে আগামীতে আরও “ভয়ঙ্কর অস্ত্র” হয়ে উঠতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন বিশ্লেষকরা।

বাংলাদেশে এখনও এটি পরীক্ষামূলক পর্যায়ে আছে এবং নির্বাচনের মৌসুমেই পরীক্ষাটা করা হচ্ছে বলে মনে করেন মিনহাজ আমান।

তিনি বলেন, “বাংলাদেশের অধিকাংশ মানুষ যেখানে একটি সাধারণ কারচুপি করা ছবিই চিনতে ব্যর্থ হন, সেখানে ভুয়াখবর ও অপতথ্য ছড়ানোর ক্ষেত্রে ডিপফেক ভিডিও আগামীতে সবচেয়ে ভয়ঙ্কর অস্ত্র হয়ে উঠতে পারে।”

যুক্তরাজ্যভিত্তিক ইংরেজি দৈনিক ‘ফিন্যান্সিয়াল টাইমস’ থেকে সম্প্রতি প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে দেখা যাচ্ছে, বাংলাদেশে ডিপফেক ভিডিও তৈরি করতে যে ধরনের ‘এআই টুলস’ ব্যবহার করা হচ্ছে, তার পেছনে ব্যবহারকারীকে মাসে খবর করতে হচ্ছে মাত্র তিন হাজার টাকার মতো।

“সবচেয়ে শঙ্কার ব্যাপার হচ্ছে, খুব সস্তায় এ ধরনের বিপদজনক ভিডিও বানানো যাচ্ছে এবং বিদেশে কিছু প্রতিষ্ঠান তৈরি হয়ে গেছে যারা এরকম সুবিধা দিচ্ছে”, বিবিসিকে বলেন মিস্টার রহমান।

ডিপফেক এমন একটি প্রযুক্তি যাতে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) ব্যবহার করে অডিও বা ভিডিওতে কারচুপি করা যায়।

অর্থাৎ এই কৌশলের সাহায্যে এআই ব্যবহার করে সহজেই ভুয়া ভিডিও তৈরি করা যায়, যা দেখতে হুবহু আসলেরই মতো ।

ফলে এটি দিয়ে সহজেই মানুষকে বিভ্রান্ত করা যায়।

রাজনীতির সাথে জড়িত বা রাজনৈতিক পরিবারের নারী সদস্যদের হেয় করে অপতথ্য ও ভুয়া খবর ছড়ানোর প্রবণতা সাম্প্রতিক সময়ে বেশি দেখা যাচ্ছে বলে জানিয়েছেন গবেষকরা।

সম্প্রতি এ ধরনের ভুয়া খবরের শিকার হয়েছেন বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক রুমিন ফারহানা। ঢাকা থেকে প্রকাশিত একটি জাতীয় দৈনিকের লোগো ব্যবহার করে মিজ ফারহানার বিরুদ্ধে এই বলে ভুয়া খবর ছড়ানো হয়েছে যে, তিনি “মানসিক রোগে ভুগছেন।”

একইভাবে কয়েক মাস আগে আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য ও কণ্ঠশিল্পী মমতাজ বেগমের নামেও একটি ভুয়া খবর ছড়ানো হয়েছিল এই বলে যে, তিনি মারা গেছেন।

“নারীদের আক্রমণের শিকার বানানোর মাধ্যমে দ্বিগুণ লাভ পাওয়া যায় বলেই নির্বাচনের আগে এ ধরনের ঘটনা বার বার ঘটছে” বলেন অধ্যাপক রহমান।

বিষয়টি ব্যাখ্যা করে তিনি আরও বলেন, “একটি নির্দিষ্ট রাজনৈতিক দলকে উদ্দেশ্য করে অপতথ্য ছড়ালে কেবল ঐ দলেরই ভাবমূর্তি নষ্ট হচ্ছে, কিন্তু ঐ একই দলের কোন নারী নেত্রীকে নিয়ে অপতথ্য ছড়ালে একই সাথে ঐ নেত্রী এবং তার দল- উভয়েরই ভারমূর্তি নষ্ট করা যাচ্ছে।”

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম, বিশেষ করে ফেসবুকে নিজেদের মত প্রচারের উদ্দেশ্যে বিভিন্ন ব্যক্তি, দল ও প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে বিজ্ঞাপন দিতে দেখা যায়। এসব পোস্ট মাঝে মধ্যেই ভুয়া খবর ও অপতথ্যের “আখড়া” হয়ে উঠে বলে জানাচ্ছেন গবেষকরা।

“আমরা এমন অনেক পেজ ও আইডি পাচ্ছি, যেগুলোকে আসলে ভুয়া খবর, অপতথ্য ও বিভ্রান্তিকর তথ্যের আখড়া বলা চলে। এসব পেজ ও আইডি থেকে বিভিন্ন ব্যক্তি বা দলের পক্ষে-বিপক্ষে উদ্দেশ্যমূলক নানা প্রোপাগান্ডা চালানো হচ্ছে।”, বিবিসি বাংলাকে বলেন এজেন্সি ফ্রান্স- প্রেস (এএফপি) ফ্যাক্ট চেকের (বাংলাভাষার) সম্পাদক কদরুদ্দীন শিশির।

সম্প্রতি সামাজিক মাধ্যম ফেসবুকে বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়ার বক্তব্যের একটি অংশ ভিডিও ও রিল আকারে ছড়াতে দেখা গেছে, যেখানে দেখা যাচ্ছে তিনি দলের আন্দোলন, পুত্র তারেক রহমান এবং পুত্রবধূকে নিয়ে নেতিবাচক মন্তব্য করছেন।

কিন্তু পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর একাধিক ফ্যাক্টচেকিং প্রতিষ্ঠান জানিয়েছে ঐ ভিডিওটি আসলে একটি “বিকৃত ভিডিও”। অথচ ভিডিওটি এখনও বিভিন্ন পেজ থেকে বিজ্ঞাপন দিয়ে ফেসবুকে প্রচার করা হচ্ছে।

অন্যদিকে, নির্বাচনকে সামনে রেখে বাংলাদেশে এবার ফেসবুকে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল, সংগঠন ও জনপ্রতিনিধিদের রাজনৈতিক বিজ্ঞাপনও দেখা যাচ্ছে।

এদের মধ্যে আওয়ামী লীগ ও বিএনপির মতো বড় রাজনৈতিক দল ও দলের নেতারা যেমন বিজ্ঞাপন দিয়ে রাজনৈতিক প্রচার চালাচ্ছেন, তেমনি স্বল্পপরিচিত বিভিন্ন পেজ থেকে রাজনৈতিক প্রচার-প্রচারণা চালাতে দেখা যাচ্ছে।

এ ধরনের বিজ্ঞাপন বাবদ শুধুমাত্র ফেসবুকে গত এক বছরে বাংলাদেশ থেকে প্রায় চার কোটি টাকা ব্যয় করা হয়েছে বলে জানিয়েছে গবেষণা প্রতিষ্ঠান ডিজিটালি রাইট লিমিটেড (ডিআরএল)।

কিন্তু অনেক ক্ষেত্রেই দেখা যাচ্ছে, ফেসবুকের নীতি অনুযায়ী বিজ্ঞাপনদাতারা স্বচ্ছতার জন্য প্রয়োজনীয় তথ্য দিচ্ছেন না।

বিজ্ঞাপনের ‘ডিসক্লেইমার’ বিশ্লেষণ করে ডিআরএলের একটি গবেষণায় দেখা গেছে, প্রায় ৮০ শতাংশ ক্ষেত্রেই বিজ্ঞাপনটির জন্য অর্থ ব্যয় করা ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের ঠিকানার পর্যাপ্ত তথ্য নেই।

ফলে বিজ্ঞাপনটি কারা দিচ্ছেন, সে ব্যাপারে বিস্তারিত কিছুই জানা যাচ্ছে না। এতে অপপ্রচার, মিথ্যা ও বিভ্রান্তিকর তথ্য ছড়ানোর ঝুঁকি বাড়ছে বলে মনে করছেন অনেকে।

“তারা সচেতনভাবেই নিজের সম্পর্কে বিস্তারিত কোন তথ্য প্রকাশ করছে না, যাতে অপতথ্য ছড়ানোর পর তাদেরকে সহজে চিহ্নিত করা না যায় বলেন কদরুদ্দিন শিশির।

স্বচ্ছতার জন্যই বিজ্ঞাপনদাতার তথ্য প্রকাশ করা জরুরী বলে মনে করছেন ডিজিটালি রাইট লিমিটেডের প্রতিষ্ঠাতা ও গবেষক মিরাজ আহমেদ চৌধুরী।

তিনি বলেন, “বাংলাদেশে রাজনৈতিক দলের নেতা-কর্মীরা বাড়ি বাড়ি গিয়ে ভোটারদের সঙ্গে দেখা করেন, কথা বলেন। ফলে কোন প্রার্থীর পক্ষে কে কী বলছে, ভোটাররা তা জানতে পারেন। কিন্তু ভার্চ্যুয়াল জগতে যারা বিজ্ঞাপন দিচ্ছেন, তাদের সম্পর্কে সঠিক তথ্য প্রকাশ করা না হলে সাধারণ মানুষের পক্ষে এটা জানা সম্ভব না যে, বিজ্ঞাপনটি কে বা কারা দিচ্ছে”।

নির্বাচনকে সামনে রেখে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে যত ভুয়া খবর বা অপতথ্য ছড়ানো হচ্ছে, তার বড় একটি অংশই ছড়ানো হচ্ছে ভুয়া আইডির মাধ্যমে।

এক্ষেত্রে দুই ধরনের ভুয়া আইডি দেখা যাচ্ছে। একটি হচ্ছে, মনুষ্য সৃষ্ট ভুয়া আইডি, অন্যটি কম্পিউটার সৃষ্ট ভুয়া আইডি বা বট।

একজন মানুষ চাইলে অর্থ খরচ ছাড়াই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভুয়া আইডি খুলতে পারেন। তবে বট তৈরির জন্য অনেক সময় অর্থ খরচ করতে হয়।

“অনেকগুলো প্রতিষ্ঠান বাজারে আছে, যারা অর্থের বিনিময়ে হাজার হাজার বট অ্যাকাউন্টের মাধ্যমে লাইক, কমেন্ট করে থাকে” বিবিসি বাংলাকে বলেন এএফপি ফ্যাক্ট চেকের (বাংলাভাষার) সম্পাদক কদরুদ্দীন শিশির।

এবার নির্বাচনের আগে ‘প্রোপাগান্ডা’ চালানোর ক্ষেত্রে বটের ব্যবহার বেশি দেখা যাচ্ছে বলে জানান মি. কদরুদ্দিন।

“এ ধরনের আইডির তৎপরতা এখন আগের তুলনায় বেশি দেখা যাচ্ছে। পোস্টে লাইক, কমেন্ট ও শেয়ারের দিকে লক্ষ্য করলেই অনেক সময় বিষয়টি স্পষ্ট হয়ে যায়।” বলেন তিনি।

বিষয়টি আরেকটু ব্যাখ্যা করে কদরুদ্দীন শিশির বলেন, কোন একটি নির্দিষ্ট ব্যক্তি বা দলের বিরুদ্ধে ছড়ানো একাধিক ভুয়া খবরের পোস্ট নিয়ে কাজ করতে গিয়ে আমরা দেখেছি, প্রতিবারই একই ধরনের আইডি বা পেজ থেকে সেগুলো ছড়ানো হয়েছে। পোস্টের কমেন্টেসও দেখা যাচ্ছে, ঐসব আইডি থেকেই একই রকম মতামত জানানো হচ্ছে।

ভুয়া আইডি বা পেজের মাধ্যমে ভুয়া খবর পোস্ট করার পর “পরিকল্পিতভাবে” সেগুলো যেমন ছড়ানো হচ্ছে, তেমনি পোস্টে প্রতিক্রিয়া জানানোর মাধ্যমে নিজেদের মতকে প্রতিষ্ঠা করার চেষ্টাও দেখা যাচ্ছে।

গত ৯ই ডিসেম্বর সন্ধ্যায় বিএনপি নেতা রুহুল কবির রিজভীর ভুয়া বক্তব্যের গ্রাফিক কার্ডটি যেসব ফেসবুকে পেজে ছড়ানো হয়েছিল, সেখানেও সবগুলো পেজে হুবহু একই শিরোনাম ও হ্যাশট্যাগ ব্যবহার করা হয়েছিল।

“পোস্টগুলোর সময়ের দিকে লক্ষ্য করলে দেখা যাবে, সবগুলো পেজেই কাছাকাছি সময়ের মধ্যে পোস্টটি প্রকাশ করা হয়েছে। অথ্যাৎ বেশ পরিকল্পিতভাবেই এটি করা হয়েছে বলে মনে হচ্ছে।” বিবিসি বাংলাকে বলেন ডিসমিসল্যাবের গবেষণা বিভাগের প্রধান মিনহাজ আমান।

পেজের নাম দেখে যে দলের মনে হবে আওয়ামী লীগের সমর্থক, কিন্তু সেখানে আসলে প্রোপাগাণ্ডা চালানো হচ্ছে দলটির বিরুদ্ধে। এ ধরনের প্রচারণাকে বলা হচ্ছে ‘রিভার্স প্রোপাগান্ডা’।

বাংলাদেশের দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে ফেসবুকে এ ধরনের প্রোপাগান্ডা বেড়েছে বলে জানিয়েছেন গবেষকরা।

“সাম্প্রতিক সময়ে এ ধরনের প্রোপাগান্ডা যত বেশি দেখা যাচ্ছে, আগে এতো দেখা যায়নি” বিবিসি বাংলাকে বলছিলেন ডিসমিসল্যাবের গবেষণা বিভাগের প্রধান মিনহাজ আমান।

ভুয়া খবরকে আরও বেশি বিশ্বাসযোগ্য করে উপস্থাপনের কৌশল হিসেবেই এ ধরনের তৎপরতা চালানো হচ্ছে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।

“একটি দলের সমর্থক যখন তার দলের বা নেতার নামে পেজ দেখেন, সেখানে প্রকাশ হওয়া তথ্যকে তিনি অধিকাংশক্ষেত্রেই সত্য হিসেবে গ্রহণ করছেন” বলেন মিস্টার আমান।

ফলে এ ধরনের আইডি বা পেজ থেকে অপতথ্য বা ভুয়া খবর সহজেই ছড়ানো যায়।

গত ৯ই ডিসেম্বর যেসব পেজ থেকে বিএনপি নেতা রুহুল কবির রিজভীর নামে ভুয়া বক্তব্য প্রকাশ করা হয়েছে, সেগুলোর নামের মধ্য বিএনপি, মেজর জিয়া, খালেদা জিয়া এবং তারেক রহমান ইত্যাদি শব্দগুলো ছিল।

একইভাবে, আওয়ামী লীগের নামে ভুয়া সংবাদ বা অপতথ্য ছড়ানোর ক্ষেত্রে যেসব পেজ খোলা হয়েছে, সেগুলোর নামে মধ্যে আওয়ামী লীগ, বঙ্গবন্ধু, শেখ মুজিব, শেখ হাসিনা ইত্যাদি শব্দ ব্যবহার করতে দেখা গেছে।

নির্বাচনকে সামনে রেখে এবার যে ধরনের ভুয়া তথ্য ছড়ানো প্রবণতা দেখা যাচ্ছে এবং যে কৌশলে সেগুলো ছড়ানো হচ্ছে, সেটি নিয়ে অনেকেই উদ্বেগ প্রকাশ করছেন।

ডিসমিসল্যাবের গবেষণা বিভাগের প্রধান মিনহাজ আমান বিবিসি বাংলাকে বলেন, “ভুয়া বা বিভ্রান্তিকর খবর ছড়ানোর ক্ষেত্রে এবার যেভাবে ব্যক্তিগত আক্রমণ করা হচ্ছে, বিশেষ করে নারীদেরকে যেভাবে লক্ষ্যবস্তু বানানো হচ্ছে, সেটি ভীষণ উদ্বেগের।”

এদিকে, গণমাধ্যমের নাম ও লোগো ব্যবহার করে ভুয়া খবর ছড়ানোর যে কৌশল এবার দেখা যাচ্ছে, সেটি মাধ্যমের বিশ্বাসযোগ্যতা কঠিন চ্যালেঞ্জের মুখে ফেলে দিবে বলে মনে করছেন ভুয়া খবর যাচাইকারী প্রতিষ্ঠান ফ্যাক্ট ওয়াচের পরিচালক অধ্যাপক সুমন রহমান।

তিনি বলেন, “গণমাধ্যমের নাম ও লোগো ব্যবহার করে বিভিন্ন ছবি ও গ্রাফিক্স কার্ডের মাধ্যমে যেভাবে ভুয়া ও বিভ্রান্তিকর তথ্য ছড়ানো হচ্ছে, সেটি বন্ধ করা না গেলে গণমাধ্যমের বিশ্বাসযোগ্যতা অচিরেই প্রশ্নের মুখে পড়বে। কারণ একবার দেখেই ভুয়া ধরনের ছবি বা গ্রাফিক্স কার্ড চিহ্নিত করা একজন সাধারণ মানুষের পক্ষে কঠিন।”

অন্যদিকে, নারী রাজনীতিকদের হেয় করার যে প্রবণতা এখন দেখা যাচ্ছে, ডিপফেক প্রযুক্তির মাধ্যমে সেটি আরও খারাপ পর্যায়ে পৌঁছাতে পারে বলেও আশঙ্কা করছেন গবেষকরা।

তাই আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের পাশাপাশি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোর সাথে যোগাযোগের মাধ্যমে ভুয়া খবর ও অপতথ্য ছড়ানো বন্ধ করার তাগিদ দিচ্ছেন তারা। একই সাথে সাধারণ মানুষের মধ্যে ভুয়া খবরের বিষয়ে সচেতনতা বাড়ানোর প্রতিও গুরুত্ব দিতে বলা হচ্ছে।

এসএইচ-০১/৩০/২৩ (তারেকুজ্জামান শিমুল,বিবিসি)