সাজাপ্রাপ্ত ব্যক্তিরা রাষ্ট্রের যেসব সুবিধা ভোগ করতে পারেন না

দেশের বিভিন্ন আইনে সাজাপ্রাপ্ত হলে ওই ব্যক্তি আর রাষ্ট্রের বেশ কিছু অধিকার বা সুবিধা ভোগ করতে পারেন না।

ফৌজদারি আইন, কোম্পানি আইন, সরকারি চাকরিবিধিসহ বিভিন্ন আইনে দণ্ডপ্রাপ্ত ব্যক্তিরা কী করতে পারবেন আর কী পারবেন না, সেসব বিষয়ে সুস্পষ্ট নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।

আইন বিশেষজ্ঞরা বলছেন, নির্বাচনে অংশ নেওয়া, কোম্পানি বা ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদে থাকতে পারা, চাকরি থাকবে কিনা এমন অনেক গুরুতর বিষয় নির্ভর করছে কোন ব্যক্তি দণ্ডিত বা সাজাপ্রাপ্ত হলো কিনা তার ওপর।

যে কোন মেয়াদে সাজা, যাবজ্জীবন কারাদণ্ড, মৃত্যুদণ্ড হলে অর্থাৎ আদালতের রায়ে দোষী সাব্যস্ত হলে তারা কী করতে পারবেন আর কী পারবেন না তা বলা হয়েছে।

সুপ্রিম কোর্টের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী ও কোম্পানি আইন বিশেষজ্ঞ আহসানুল করিম বলেন, “ব্যাংক কোম্পানি আইনে স্পষ্টভাবে দণ্ডপ্রাপ্ত ব্যক্তির বিষয়ে বলা হয়েছে। এমনকি সরকারি চাকরি প্রত্যাশী বা সরকারি চাকরি করেন এমন ব্যক্তিদের বিষয়েও সাজাপ্রাপ্ত হলে কি হবে চাকরিবিধিতেই তা উল্লেখ করা আছে”।

১৯৯১ সালের ব্যাংক কোম্পানি আইনের একটি ধারা উল্লেখ করে মি. করিম বলেন, “স্বল্পমেয়াদী বা দীর্ঘমেয়াদী সাজা যাই হোক না কেন দণ্ডিত হলে কোন ব্যক্তি ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদে থাকতে পারবেন না।”

তিনি উল্লেখ করেন, “কোন ব্যক্তি যদি ফৌজদারি অপরাধে দণ্ডিত হন তবে কোন ব্যাংকের কোম্পানিতে পরিচালক, ব্যবস্থাপনা পরিচালক বা প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা হতে পারবে না”।

ওই ধারায় আরো বলা হয়েছে, “জাল-জালিয়াতি, আর্থিক অপরাধ বা অন্য অবৈধ কর্মকাণ্ডের সাথে যদি কোন ব্যক্তি জড়িত ছিলেন বা থাকেন তাহলেও সে পরিচালনা পর্ষদে থাকতে পারবেন না”।

আইনটির ১৫ ধারায় বলা হয়েছে, কোন দেওয়ানি বা ফৌজদারি মামলায় আদালতের রায়ে তার সম্পর্কে কোন বিরূপ পর্যবেক্ষণ বা মন্তব্য থাকে তাহলে পরিচালনা পর্ষদে থাকতে পারবেন না।

তবে বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের শীর্ষ পদে কোন সাজাপ্রাপ্ত ব্যক্তি থাকতে পারবেন কিনা, কোম্পানি আইন ১৯৯৪ সে বিষয়ে পরিষ্কারভাবে কোন কিছু বলা হয়নি।

তবে কোন কোম্পানির আর্টিকেলে যদি বলা থাকে ফৌজদারি মামলায় দণ্ডিত ব্যক্তি পরিচালক হতে পারবেন না তবে তাদের সেটা অনুসরণ করতে হবে।

২০১৮ সালের সরকারি চাকরি আইনের একটি ধারায় বলা হয়েছে, “কোন ও সরকারি কর্মচারী ফৌজদারি মামলায় আদালত কর্তৃক মৃত্যুদণ্ড বা এক বছর মেয়াদের বেশি মেয়াদে কারাদণ্ডে দণ্ডিত হলে, উক্ত দণ্ড আরোপের রায় বা আদেশ দেয়ার তারিখ থেকে চাকরি থেকে তাৎক্ষণিকভাবে বরখাস্ত হবেন”।

তবে, নতুন আইনের এ ধারাটিকে চ্যালেঞ্জ করে একটি মানবাধিকার সংগঠনের করা রিটে ওই আইনটি হাইকোর্ট বাতিল করে দিয়েছিল। পরে রাষ্ট্রপক্ষ আপিল করায় হাইকোর্টের রায়টি স্থগিত রয়েছে।

পুরনো আইনে ফৌজদারি মামলায় দণ্ডপ্রাপ্ত হলেই সরকারি কর্মচারীদের চাকরি যাওয়ার বিধান ছিলো। ২০০৩ সালে এরকম একটি আদেশে একজন পুলিশ মহাপরিদর্শকের চাকরি চলে গিয়েছিল।

তবে ২০১৮ সালের নতুন আইনে চাকরি যাওয়ার ক্ষেত্রে নিম্নে এক বছর দণ্ডপ্রাপ্ত হওয়ার বিধান করা হয়েছে।

আপিল বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি এ এইচ এম শামসুদ্দিন চৌধুরী বলেন, “সাজাপ্রাপ্ত ব্যক্তিদের ক্ষেত্রে সংবিধানের একটি অনুচ্ছেদে জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নির্বাচিত হওয়ার যোগ্যতা ও অযোগ্যতা নিয়ে বলা হয়েছে”।

সংবিধানের ৬৬ অনুচ্ছেদের (ঘ) উল্লেখ করে বিচারপতি শামসুদ্দিন বলেন, “কোন ব্যক্তি নৈতিক স্খলনজনিত কোন ফৌজদারি অপরাধে দোষী সাব্যস্ত হয়ে দুই বছরের কারাদণ্ডে দণ্ডিত হন এবং তার মুক্তিলাভের পর পাঁচ বছর অতিবাহিত না হলে নির্বাচনে অংশ নিতে পারবে না”

বিচারপতি চৌধুরী আরো বলেন, “সরকারি চাকরি-বিধিতে সুনির্দিষ্ট করে দণ্ডপ্রাপ্তদের বিষয়ে বলা হয়েছে। তবে, বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে নিয়োগ-দাতারা আলাদা করে বিধান রাখতে পারেন”।

“তারা এ বিষয়ে নিজেদের বিধি অনুসরণ করে চলতে পারে। তবে, দণ্ডপ্রাপ্ত হলে ভোট দেয়ার অধিকার ক্ষুণ্ণ হয় না” বলেন চৌধুরী।

সুপ্রিম কোর্টের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী ব্যারিস্টার তানজীব উল আলম বলেন, “ আদালতে দণ্ডপ্রাপ্ত হলে বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরি পেতে হয়তো বাধা নেই, কিন্তু পরিচালক পদে থাকতে পারে না আদালতের রায়ে দণ্ডিত কোন ব্যক্তি”।

এর আগে বিভিন্ন সময় বিচারিক আদালতে দুই বছর বা বেশি সময়ের জন্য সাজাপ্রাপ্ত হলেও পরবর্তীতে হাইকোর্ট বা অ্যাপিলেট ডিভিশনে আপিল করে নির্বাচনে অংশ নিতে দেখা গেছে।

তবে সুপ্রিম কোর্টের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী খুরশিদ আলম খান হাইকোর্টের এক রায়ের কথা উধ্বৃত করে বলেন, “দুই বছর বা তার বেশি দণ্ড ও সাজা হলে সাজা মাথায় নিয়ে কেউ নির্বাচনে অংশ নিতে পারবে না”।

২০১৮ সালে বিচারপতি নজরুল ইসলাম তালুকদার ও বিচারপতি কে এম হাফিজুল আলমের বেঞ্চ রায় দিয়েছিল যে, কেউ দুই বছরের সাজার বিরুদ্ধে আপিল করলেও নির্বাচনে অংশ নিতে পারবেন না।

“সাজার রায়ের বিরুদ্ধে করা আপিল বিচারাধীন, আবেদনকারী জামিনে আছে, জরিমানার আদেশ স্থগিত করা হয়েছে এসব দণ্ড বা সাজা স্থগিতের যুক্তি হতে পারে না। কারণ সংবিধানই সর্বোচ্চ আইন” বলেন. খান।

এসএইচ-০২/০২/২৪ (জান্নাতুল তানভী,বিবিসি)