বৈশ্বিক মেরুকরণে বাংলাদেশ

বাংলাদেশের নির্বাচনের আগে থেকেই এই ইস্যুতে স্পষ্ট দুটি ধারা দেখা যাচ্ছে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের মধ্যে। বৈশ্বিক মেরুকরণে বাংলাদেশ কি টানাপড়েনে পড়তে যাচ্ছে? বাংলাদেশের করণীয় কী?

যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্য মনে করে, বাংলাদেশের নির্বাচন সুষ্ঠু হয়নি, উদ্বেগ জানিয়েছে জাতিসংঘ। অন্যদিকে রাশিয়া, চীন, ভারতসহ অন্য অনেক দেশের প্রতিনিধিদের অভিনন্দনের বন্যায় ভাসছে আওয়ামী লীগ।

অবাধ বা সুষ্ঠু হয়নি: যুক্তরাষ্ট্র

নির্বাচনে সব দল অংশগ্রহণ না করায় হতাশা ব্যক্ত করে এক বিবৃতি প্রকাশ করেছে মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তর।

মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র ম্যাথু মিলার ৯ জানুয়ারি এক বিবৃতিতে বলেছেন, ”এই নির্বাচন অবাধ বা সুষ্ঠু হয়নি, সে বিষয়ে অন্য পর্যবেক্ষকদের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রও একমত।”

তিনি আরো বলেন, ”যুক্তরাষ্ট্র খেয়াল করেছে যে, আওয়ামী লীগ ৭ জানুয়ারির সংসদ নির্বাচনে বেশিরভাগ আসনে জয় পেয়েছে। কিন্তু বাংলাদেশের রাজনৈতিক বিরোধী দলের কয়েক হাজার সদস্য গ্রেপ্তার এবং নির্বাচনের দিন অনিয়মের খবরে আমরা উদ্বিগ্ন।”

সকল রাজনৈতিক দলের প্রতি সহিংস আচরণ পরিহারের আহ্বানও জানানো হয়েছে বিবৃতিতে। বিভিন্ন সহিংসতার বিশ্বাসযোগ্য তদন্ত এবং অপরাধীদের আইনের আওতায় আনার আহ্বানও জানানো হয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের বিবৃতিতে।

বিশ্বাসযোগ্য ও সুষ্ঠু প্রতিযোগিতার মান পূরণ হয়নি: যুক্তরাজ্য

বাংলাদেশের নির্বাচন নিয়ে ৯ জানুয়ারি বিবৃতি প্রকাশ করেছে যুক্তরাজ্যের ফরেন, কমনওয়েলথ অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট অফিস- এফসিডিও। দপ্তরটির মুখপাত্র বিবৃতিতে বলেছেন, নির্বাচনের সময়ে বিশ্বাসযোগ্য ও সুষ্ঠু প্রতিযোগিতার মান ধারাবাহিকভাবে পূরণ হয়নি।

ভোটের আগে বিরোধী নেতা-কর্মীদের গ্রেপ্তার নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়েছে বিবৃতিতে। বলা হয়েছে, ”মানবাধিকার, আইনের শাসন ও যথাযথ প্রক্রিয়ার প্রতি শ্রদ্ধা গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার অপরিহার্য উপাদান। নির্বাচনের সময় এসব মানদণ্ড ধারাবাহিকভাবে মেনে চলা হয়নি।”

সব দল অংশ নেয়নি বলে বাংলাদেশের মানুষের কাছে ভোট দেয়ার যথেষ্ট বিকল্প ছিল না বলেও উল্লেখ করা হয়েছে বিবৃতিতে।

তবে বিবৃতিতে এ-ও উল্লেখ করা হয়েছে, ”বাংলাদেশের জনগণের স্বার্থে আমরা সকল রাজনৈতিক দলকে তাদের মতপার্থক্য দূর করতে এবং একটি অভিন্ন উপায় খুঁজে বের করতে উৎসাহিত করি। আমরা এই প্রক্রিয়াকে সমর্থন অব্যাহত রাখবো।”

নির্বাচনকালীন সহিংসতায় উদ্বিগ্ন জাতিসংঘ

জাতিসংঘের নিয়মিত ব্রিফিংয়ে ৯ জানুয়ারি উঠে এসেছে বাংলাদেশের নির্বাচন প্রসঙ্গও। মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেসের মুখপাত্র ফ্লোরেন্সিয়া সোটো নিনো জানিয়েছেন, বাংলাদেশ পরিস্থিতি উদ্বেগের সঙ্গে পর্যবেক্ষণ করছেন মহাসচিব।

এক প্রশ্নের জবাবে নিনো বলেন, ”নির্বাচনের আগে এবং নির্বাচন চলাকালীন সহিংসতার ঘটনা নিয়ে জাতিসংঘ মহাসচিব উদ্বিগ্ন। তিনি সব পক্ষকে সব রকম সহিংসতা পরিহার এবং মানবাধিকার ও আইনের শাসনকে শ্রদ্ধা করার আহ্বান জানিয়েছেন।”

পথ পালটান: জাতিসংঘ মানবাধিকার প্রধান

জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক সংস্থা ওএইচসিএইচআর সোমবার (৮ জানুয়ারি) বাংলাদেশের নির্বাচন নিয়ে একটি বিবৃতি প্রকাশ করেছে৷ বাংলাদেশের নবনির্বাচিত সরকারকে গণতন্ত্র ও মানবাধিকারের প্রতি দেশের প্রতিশ্রুতি নবায়নের পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন জাতিসংঘের মানবাধিকার প্রধান ফলকার টুর্ক৷

বিবৃতিতে সংস্থাটির প্রধান ফলকার টুর্ক বলেছেন, “ভোট শুরুর আগের কয়েক মাস হাজার হাজার বিরোধী সমর্থককে নির্বিচারে আটক করা হয়েছে বা ভয় দেখানো হয়েছে৷ এই ধরনের কৌশল সত্যিকারের আন্তরিক প্রক্রিয়ার জন্য সহায়ক নয়৷”

তিনি বলেন, ‘‘আমি সরকারের কাছে অনুরোধ করছি যেন সব বাংলাদেশির মানবাধিকার সম্পূর্ণরূপে বিবেচনায় নেওয়া হয় এবং দেশে সত্যিকারের অন্তর্ভুক্তিমূলক গণতন্ত্রের ভিত্তিকে শক্তিশালী করার জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়৷”

জাতিসংঘের মানবাধিকার প্রধান বলেন, ‘‘বাংলাদেশ কঠিন পথে গণতন্ত্র অর্জন করেছিল, সেটিকে কৃত্রিমতায় পর্যবসিত করা যাবে না৷ বাংলাদেশ উন্নয়নের রোল মডেল এবং আমি আন্তরিকভাবে আশা করবো এটি রাজনৈতিক ও প্রাতিষ্ঠানিক ক্ষেত্রেও প্রতিফলিত হবে। সকল বাংলাদেশির ভবিষ্যৎ ঝুঁকিতে৷”

নানা দেশের অভিনন্দন

এরই মধ্যে নানা দেশের প্রতিনিধিদের অভিনন্দনের বন্যায় ভাসতে শুরু করেছেন টানা চতুর্থবারের মতো ক্ষমতায় আসা আওয়ামী লীগ সভাপতি, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। নির্বাচনের পরদিন, অর্থাৎ ৮ জানুয়ারি বেসরকারি ফল প্রকাশের পরই রাশিয়া, চীন, ভারত, পাকিস্তান, ফিলিপাইন্স, সিঙ্গাপুরসহ বেশ কিছু দেশের রাষ্ট্রদূত শেখ হাসিনার সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করেন।

৯ জানুয়ারিও এই ধারা অব্যাহত রয়েছে। সরকারের তথ্য অধিদপ্তর পিআইডি সূত্রে জানা গেছে, গণভবনে এসে শেখ হাসিনার সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করেছেন বাংলাদেশে নিযুক্ত জাপান, থাইল্যান্ড, ভিয়েতনাম, আর্জেন্টিনা, ইন্দোনেশিয়া, রিপাবলিক অব কোরিয়া, ব্রুনেই দারুসসালাম, মালয়েশিয়া, মিসর, আলজেরিয়া, কুয়েত, লিবিয়া, ইরান, ইরাক, ওমান, কাতার, সৌদি আরব, সংযুক্ত আরব আমিরাত, ফিলিস্তিনের রাষ্ট্রদূতেরা।

এসএইচ-০১/০৯/২৪ (অনুপম দেব কানুনজ্ঞ, ডয়চে ভেলে)