স্বপ্ন পূরণ হলো না তৌহিদের

কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ার হওয়ার স্বপ্ন নিয়ে নওগাঁ পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটে ভর্তি হয়েছিলেন তৌহিদুল ইসলাম চৌধুরী।অবশেষে একটি দুর্ঘটনা তার সব স্বপ্ন শেষ করে দিয়েছে।

দীর্ঘ ২১ দিন চিকিৎসাধীন থেকে শনিবার দিবাগত রাত ২টার দিকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে মারা গেছেন তৌহিদ।

নিহত তৌহিদের গ্রামের বাড়ি নওগাঁর মান্দা উপজেলার গনেশপুর ইউনিয়নের গনেশপুর গ্রামে। বাবার নাম আতাব আলী চৌধুরী। তিনি পেশায় একজন গরু ব্যবসায়ী। তৌহিদ নওগাঁ পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের কম্পিউটার বিভাগের তৃতীয় সেমিস্টারের ছাত্র ছিলেন। তার অকাল মৃত্যুতে এলাকায় শোকের ছায়া নেমে এসেছে। বারবার মুর্ছা যাচ্ছেন তার বাবা-মা।

জানা গেছে, তৌহিদরা পাঁচ ভাই বোন। ভাইদের মধ্যে তৌহিত দ্বিতীয়। তারা সবাই পড়াশুনা করে। বড় ভাই বগুড়া পলিটেকনিক কলেজে, ছোট বোন সতিহাট জিএস বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে ও আরেক ছোট বোন পিএসসি পরীক্ষা দিয়েছে।

আর ছোট ভাইয়ের বয়স ৫ বছর। অভাবের সংসারে তৌহিদ কাজ করতো ও বাড়ি থেকে কলেজে আসা-যাওয়া করত। যেদিন দুর্ঘটনা ঘটে সেদিই তৌহিদ বাড়ি থেকে বেলা সাড়ে ১১টার দিকে বেরিয়ে কলেজ যায়।

গত ১ ডিসেম্বর (রোববার) বিকেল ৪টার দিকে দ্বিতীয় শিফটের তৃতীয় সেমিস্টার কম্পিউটার বিভাগের ৪১ জন শিক্ষার্থী রসায়ন ল্যাবে ব্যবহারিক পরীক্ষার সময় সোডিয়াম ক্লোরাইড পরীক্ষা করছিরেন।

এ সময় অসাবধানতাবশত সোডিয়াম ক্লোরাইড দ্রবণের বিস্ফোরণে সাত ছাত্রের শরীরের বিভিন্ন স্থানে ঝলসে গিয়ে আহত হয়। তাদের মধ্যে তৌহিদও ছিল।

আহতদের উদ্ধার করে নওগাঁ সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। তিনজনের অবস্থা গুরুতর হওয়ায় উন্নত চিকিৎসার জন্য সেদিনই সন্ধ্যা ৬টার দিকে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে (রামেক) পাঠানো হয়। তাদের শরীরের ৩০ শতাংশ ঝলসে গিয়েছিল।

তৌহিদসহ তিনজনের শারীরিক অবস্থা আরও খারাপ হওয়ায় পরদিন সোমবার উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়। সেখানে ২০ দিন চিকিৎসাধীন থেকে রোববার রাত ২টার দিকে তৌহিদ মারা যান।

নিহত তৌহিদের বাবা আতাব আলী চৌধুরী বলেন, আমার জায়গা জমি নাই। আট শতক জায়গার ওপর মাটির দোতলা বাড়ি ও ইটের প্রাচীর। অনেক কষ্ট করে গত বছর ছেলেকে কম্পিউটার কিনে দিয়েছিলাম।

একটা দুর্ঘটনা জীবনে অন্ধকার নিয়ে আসবে তা আমরা ভাবতেই পারিনি। একটা দুর্ঘটনা সারা জীবনের কান্না। আমার ছেলেকে নিয়ে অনেক স্বপ্ন ছিল। ছেলেরা মানুষ হবে। তারাই আমার সম্পদ।

তিনি অভিযোগ করে বলেন, যেদিন দুর্ঘটনা ঘটে সেদিন রাতে আমরা জানতে পেরেছিলাম। ছেলের চিকিৎসা করাতে গিয়ে প্রায় তিন লাখ টাকা খরচ হয়েছে। যা ধার দেনা করে নেয়া হয়েছিল। কলেজ থেকে শুধু ওষুধের টাকা বহন করা হয়েছে।

নওগাঁ পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের অধ্যক্ষ ফজলুল হক বলেন, তৌহিদের মরদের তার গ্রামের বাড়িতে নেয়া হয়েছে। রোববার দুপুর ২টায় জানাজা শেষে তাকে পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হবে।

বিএ-০২/২২-১২ (উত্তরাঞ্চল ডেস্ক)