বাড়ির বারান্দায় এক যুগ কেটে গেল সুজনের

বাড়ির বারান্দায় ১২ বছর ধরে দড়ি দিয়ে বেঁধে রাখা হয়েছে সুজন আলীকে (২৫)। অর্থের অভাবে তার ভাগ্যে জোটেনি উন্নত চিকিৎসা। তাই বাধ্য হয়ে পরিবারের সদস্যরা তাকে বাড়ির বারান্দায় দড়ি দিয়ে বেঁধে রেখেছেন।

মানসিক ভারসাম্যহীন সুজন আলীর বাড়ি নওগাঁ রানীনগর উপজেলার কালীগ্রাম ইউনিয়নের করজগ্রামে।জানা গেছে, করজগ্রামের মৃত লিতব আলী মন্ডলের ছেলে সুজন।

৯ ভাই-বোনের মধ্যে সুজন ৬ নম্বর। জন্মের পর ১০/১১ বছর বয়স পর্যন্ত স্বাভাবিকভাবেই চলত সুজন। কিন্তু যতই বড় হতে থাকে ততই তার মাঝে কিছু অস্বাভাবিক আচরণ ধরা পড়ে।

বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে পাগলামি বেড়ে যাওয়ায় বাবা লিতব আলী জমিজমা বিক্রি করে সাধ্যমতো তার চিকিৎসার চেষ্টা করেন। পাবনা মানসিক হাসপাতালে নেয়া হলে সুজন কোনো দিন ভালো হবে না বলে জানিয়ে কিছু ওষুধ দেন চিকিৎসকরা। সেই ওষুধগুলো খাওয়ার পর সুজনের অবস্থার আরও অবনতি হয় বলে জানান পরিবারের সদস্যরা।

২০১০ সালে বাবা লিতব আলী মারা যাওয়ার পর সুজনের ভাগ্যে আর কোনো উন্নত চিকিৎসা জোটেনি। বাবা মারা যাওয়ার পর সুজনের ভাইয়েরা আলাদা বসবাস শুরু করে। দিন যতই যাচ্ছে ততই সুজনের আচরণের অবনতি হচ্ছে। শীত, গ্রীষ্ম ও বর্ষা মৌসুমেও সুজনের একমাত্র আশ্রয়স্থল বাড়ির উঠান।

সকালে উঠানে বেঁধে রাখা হয়। আর সন্ধ্যা হলে ঘরে ঢুকানো হয় তাকে। হাতের দড়ি খুলে দিলেই সুজন পথচারীদের বিরক্ত করে, উদ্ভট আচরণ করে। তাই তাকে দড়ি দিয়ে বেঁধে রাখা হয়েছে।

সুজনের মা রিজিয়া বেওয়া বলেন, জন্মের পর থেকেই সুজনের মাঝে কিছুটা অস্বাভাবিক আচার-আচরণ ধরা পড়ে। তবে বয়স বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে পাগলামি বেড়ে যায়। আমরা গরিব মানুষ। তারপরও সাধ্যের মধ্যে ছেলের চিকিৎসা করানোর চেষ্টা করেছি। কিন্তু বর্তমানে আমাদের তেমন সামর্থ নেই।

সম্প্রতি সুজন প্রতিবন্ধী ভাতার আওতায় এসে ভাতা পেলেও চিকিৎসার জন্য তা যথেষ্ট নয়। সরকারিভাবে যদি কোনো সহযোগিতা পাওয়া যায় তাহলে সুজনের উন্নত চিকিৎসা করা সম্ভব। উন্নত চিকিৎসা পেলে সুজন ভালো হয়ে উঠতে পারে।

রানীনগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আল মামুন বলেন, ইতোমধ্যে আমরা জেলা প্রশাসক স্যারের নির্দেশনা মোতাবেক উপজেলার কয়েকজন এ রকম মানসিক ভারসাম্যহীন রোগীর উন্নত চিকিৎসার ব্যবস্থা করেছি। সুজনের বাড়িতে গিয়ে তার সর্বশেষ অবস্থা জেনে পরিবারের সঙ্গে কথা বলে উন্নত চিকিৎসার ব্যবস্থা গ্রহণের চেষ্টা করা হবে।

বিএ-০৩/২১-০১ (উত্তরাঞ্চল ডেস্ক)