দেখা মেলেনি ওয়াসার এমডির, শরবত নিয়ে ফিরে এলেন মিজান

ওয়াটার সাপ্লাই অ্যান্ড সুয়ারেজ অথরিটির (ওয়াসা) ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) তাকসিম এ খান সাক্ষাৎ দেননি। তাই ওয়াসার ‘সুপেয় পানি’ দিয়ে বানানো শরবত পান করাতে পারে নি জুরাইনবাসী।

শরবতের জন্য ওয়াসার নলের পানি, চিনি এবং লেবু নিয়ে মঙ্গলবার ঢাকার কারওয়ানবাজারে ওয়াসা ভবনে হাজির হন জুরাইনবাসী। এই কর্মসূচিতে নেতৃত্ব দেন মিজানুর রহমান।

পূর্ব ঘোষণা অনুযায়ী, ওয়াসার এমডি তাকসিম এ খানকে শরবত পান করানোর জন্য ওয়াসা ভবনে প্রবেশের চেষ্টা করেন তিনি। তবে কার্যালয়ে এমডি না থাকার অজুহাতে তাকে প্রবেশ করতে দেননি দায়িত্বরত পুলিশ ও নিরাপত্তা কর্মীরা। এসময় তার সঙ্গে কথা বলেন ওয়াসার প্রকৌশলী সহিদ উদ্দিন।তিনি জানান, আজ শরবত পান করবেন না।জুরাইনবাসীর পানির পাইপ ঠিক করে সেই পানির শরবত পান করবেন।

প্রকৌশলী দেখা দিলেও ওয়াসার এমডির সাক্ষাৎ পাননি মিজানুর রহমান। এর সমালোচনা করে মিজান বলেন, তার (ওয়াসার) পানি যদি নিরাপদই হয়, তাহলে তার এই পানি পান করতে সমস্যা বা ভয় কোথায়? তিনি যদি ‘সভ্য’ হতেন, দায়িত্ববান হতেন, তাহলে এমন কথা বলতেন না। আমরা চাই, তিনি দুঃখ প্রকাশ করে এমন দায়িত্বপূর্ণ পদ থেকে পদত্যাগ করবেন।

বিকাল ৩টায় এ প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত ওয়াসার এমডির সঙ্গে সাক্ষাতের উদ্দেশে ওয়াসা ভবনের প্রধান ফটকের সিড়িতে মিজানুর রহমানের নেতৃত্বে অবস্থান কর্মসূচি পালন করছেন আন্দোলনকারীরা। এগুলো হলো- পানি নিষ্কাশনের খাল ও নর্দমাগুলো পূর্ণ খনন করার স্বল্প ও দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা গ্রহণ এবং বাস্তবায়ন করা, পয়নিষ্কাশনের জন্য আন্ডার সুয়ারেজ ব্যবস্থার পরিকল্পনা গ্রহণ ও বাস্তবায়ন করা এবং গ্যাসের চাপ বৃদ্ধিকল্পে গ্যাস সঞ্চালন পাইপ পরিবর্তন করে বর্তমান ও ভবিষ্যৎ চাহিদা অনুযায়ী মোটা পাইপ স্থাপন করে নিরবিচ্ছিন্ন গ্যাস প্রাপ্তি নিশ্চিত করা।

এর আগে বেলা ১১টার দিকে ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) তাকসিম এ খানকে ওয়াসার ‘শতভাগ বিশুদ্ধ পানি’ দিয়ে তৈরি শরবত খাওয়াতে রাজধানীর কারওয়ানবাজারে ওয়াসা ভবনের সামনে হাজির হন জুরাইন এলাকার বাসিন্দারা। এ সময় তাদের সঙ্গে ঢাকা ওয়াসার সরবরাহ করা পানি, চিনির প্যাকেট ও লেবু ছিল।

প্রসঙ্গত ১৭ এপ্রিল ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) পক্ষ থেকে ‘ঢাকা ওয়াসা : সুশাসনের চ্যালেঞ্জ ও উত্তরণের উপায়’ শীর্ষক এক গবেষণা প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়। প্রতিবেদনে ওয়াসায় অনিয়ম ও দুর্নীতির বিষয়টি উল্লেখ করে টিআইবি।

এতে বলা হয়, ঢাকা ওয়াসার পানির নিম্নমানের কারণে ৯৩ শতাংশ গ্রাহক বিভিন্ন পদ্ধতিতে পানি পানের উপযোগী করেন। এর মধ্যে ৯১ শতাংশ গ্রাহকই পানি ফুটিয়ে বা সিদ্ধ করে পান করেন। গৃহস্থালি পর্যায়ে পানি ফুটিয়ে পানের উপযোগী করতে প্রতিবছর আনুমানিক ৩৩২ কোটি টাকার গ্যাসের অপচয় হচ্ছে।

এ প্রতিবেদনের প্রতিবাদে শনিবার এক সংবাদ সম্মেলন করে ওয়াসার এমডি তাকসিম এ খান বলেন, ‘ওয়াসার পানি শতভাগ সুপেয় ও বিশুদ্ধ। একে ফুটিয়ে খাওয়ার প্রয়োজন হয় না।’ এ ছাড়া টিআইবির এই প্রতিবেদনকে তিনি নিম্নমানের বলে উল্লেখ করেন।

তাকসিম এ খানের এই বক্তব্যের প্রতিবাদ জানান পুরান ঢাকার বাসিন্দারা। তারা নিরাপদ পানির দাবি করে আসছেন। এরই অংশ হিসেবে তারা মঙ্গলবার বেলা সোয়া ১১টায় কারওয়ানবাজারে অবস্থিত ওয়াসা ভবনের সামনে অবস্থান নেন।

কর্মসূচিতে নেতৃত্ব দেয়া মিজানুর রহমানের ভাষ্য, আমাদের এলাকায় ওয়াসার পানি ড্রেনের পানির মতো অপরিষ্কার। ময়লা ও দুর্গন্ধযুক্ত এ পানি কাপড় কাচায়ও ব্যবহার করা যায় না। এটি তো খাওয়া দূরের কথা, গন্ধে হাতে নেয়াই দায়। এ অবস্থায় ওয়াসার এমডি কীভাবে বলেন- ওয়াসার পানি শতভাগ সুপেয় ও বিশুদ্ধ! তাই আমরা এই ‘বিশুদ্ধ পানি’ দিয়ে শরবত বানিয়ে উনাকে খাওয়াতে এসেছি। দেখি উনি কী করেন।

জুরাইনে বহু আগে থেকেই দুর্গন্ধযুক্ত পানি সরবরাহ করা হচ্ছে, এমনটি জানিয়ে প্রতিবাদী মিজানুর বলেন, ২০১২ সালে আমরা জুরাইনের সাড়ে তিন হাজার বাসিন্দা গণস্বাক্ষর নিয়ে ওয়াসার এমডি বরাবর একটি অভিযোগ করেছিলাম, যেখানে বলেছিলাম- এই পানি খাওয়া যায় না, ব্যবস্থা নিন। সেই অভিযোগে কোনো কাজ হয়নি। এখনও রোজ ময়লা পানি সরবরাহ করা হচ্ছে।

এই পানি খাওয়া যায় না। বাধ্য হয়ে মসজিদের টিউবওয়েলের পানি ব্যবহার করতে হচ্ছে। কিংবা মিনারেল ওয়াটার কিনে পান করতে হচ্ছে। এ অবস্থায় ওয়াসার এমডির বক্তব্য আমাদের পীড়া দিয়েছে। তিনি বলেছেন- এই পানি শতভাগ সুপেয়। যদি সুপেয় পানি হয়, তবে তাকে এই পানির শরবত আমাদের সামনে খেতে হবে। আজ আমরা একটা সমাধান নিয়েই এখান থেকে যাব।

বিএ-০৬/২৩-০৪ (ন্যাশনাল ডেস্ক)