বিভিন্ন সময়ে দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গের দায়ে নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে গঠনতন্ত্র অনুযায়ী সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেয়া হয়। সাংগঠনিক ব্যবস্থার প্রথম পদক্ষেপ হিসেবে কারণ দর্শানোর নোটিশ অর্থাৎ শোকজ করা হয়। শোকজের জবাব সন্তোষজনক হলে দায়মুক্তি মেলে অন্যথায় শাস্তি। তবে সংশ্লিষ্টরা বলছেন, শোকজেই সীমাবদ্ধ থাকছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ।
দলটির কেন্দ্রীয় নেতারা মনে করেন, শোকজ কোনো শাস্তি নয়, এটা সতর্কবার্তা। শোকজের জবাব সন্তোষজনক মনে হলে পরবর্তীতে আর ওই নেতা বা কর্মীর বিরুদ্ধে কোনো ধরনের সাংগঠনিক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয় না।
একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিদ্রোহী প্রার্থীদের ক্ষেত্রে এমন চিত্র দেখা গেছে। সম্প্রতি শেষ হওয়ায় পাঁচ ধাপের উপজেলা নির্বাচনে ব্যাপক সংখ্যক বিদ্রোহী প্রার্থী নির্বাচন করেন। দলের মনোনীত প্রার্থীর বিরুদ্ধে নির্বাচন করে জয়ও ছিনিয়ে আনেন অনেকে। এসব বিদ্রোহী প্রার্থীর ক্ষেত্রে কী ব্যবস্থা নেয়া হবে সেটাই এখন দেখার বিষয়।
পাঁচ ধাপে অনুষ্ঠিত উপজেলা নির্বাচনের ফলাফল বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, দেশের ৪৪৫টি উপজেলা পরিষদের মধ্যে ১০৭টিতে চেয়ারম্যান পদে ভোটের প্রয়োজন হয়নি। সবমিলিয়ে ৩০৪টিতে আওয়ামী লীগের প্রার্থীরা বিজয়ী হয়েছেন। প্রায় ১৩৫টি উপজেলায় জয়ী হয়েছেন স্বতন্ত্র প্রার্থীরা। এর প্রায় সবাই আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী। অনুসন্ধানে দেখা গেছে, প্রায় ৪০ সংসদ সদস্যের এলাকায় নৌকার প্রার্থীরা পরাজিত হয়েছেন। এর মধ্যে দুজন মন্ত্রী ও দুজন প্রতিমন্ত্রীর এলাকাও রয়েছে। পরাজয়ের পেছনে তাদের সংশ্লিষ্টতারও অভিযোগ পেয়েছে আওয়ামী লীগের হাইকমান্ড।
স্থানীয় সরকার নির্বাচনে এমন চিত্র ফুটে ওঠার পর গত ৫ এপ্রিল অনুষ্ঠিত আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের সভায় অভিযুক্তদের শোকজ নোটিশ দেয়ার সিদ্ধান্ত হয়।
আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম বলেন, এটা নিয়ে তদন্ত হবে, শোকজ করা হবে। যারা দলের প্রার্থীর বিরুদ্ধে, নৌকার বিরুদ্ধে দাঁড়িয়েছেন; নৌকার বিরুদ্ধে ভোট করেছেন, তাদের বিরুদ্ধে গঠনতন্ত্র অনুযায়ী ব্যবস্থা নেয়া হবে।
আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ফারুক খান বলেন, শোকজের পর অভিযুক্তদের জবাব পেলে পরবর্তী পদক্ষেপ নেয়া হবে। এখন বলা যাবে না কারা শাস্তি পাচ্ছেন, কারা পাচ্ছেন না। তবে এটাও এক ধরনের শাস্তি।
দলটির বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে, দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গ, দল মনোনীত প্রার্থীর বিরোধিতা, সাংগঠনিক আচরণবিধি লঙ্ঘনের অভিযোগে বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাকর্মীদের শোকজ করা হলেও কাউকে বহিষ্কার করা হয়নি। বিগত প্রায় ১০ বছরে শুধুমাত্র দলটির সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য আব্দুল লতিফ সিদ্দিকীকে হজ নিয়ে আপত্তিকর মন্তব্যের জন্য বহিষ্কার করা হয়। এর বাইরে উল্লেখযোগ্য কোনো ঘটনাই নেই। তারা বলছেন, কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগ বিভিন্ন অপরাধের অভিযোগে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা হিসেবে নেতাদের কেবল শোকজের মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকে, স্থায়ীভাবে বহিষ্কারের কোনো ঘটনা ঘটে না।
আওয়ামী লীগ সূত্রে জানা গেছে, দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দলীয় মনোনয়নের বিরোধিতা করে অন্তত দুজন নেতা সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। তাদের বিরুদ্ধেও কোনো ধরনের শাস্তিমূলক সাংগঠনিক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়নি। সর্বশেষ বড় শোকজের ঘটনা ঘটে ২০১৮ সালের ১০ সেপ্টেম্বর। ওইদিন কেন্দ্রীয় কমিটির পক্ষ থেকে দুই কেন্দ্রীয় নেতা, তিন সংসদ সদস্য ও ১৪ জনকে শোকজ করা হয়। তবে ওই নেতাদের বিরুদ্ধে পরবর্তীতে কোনো ধরনের সাংগঠনিক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়নি।
দলীয় সূত্রে আরও জানা গেছে, সর্বশেষ অনুষ্ঠিত উপজেলা নির্বাচনে যাদের বিরুদ্ধে দলীয় প্রার্থীরা অভিযোগ উত্থাপন করেছেন তাদেরও শোকজের সিদ্ধান্ত নিয়েছে দলটি। তবে সেই শোকজ আসলে কতটা কার্যকর হবে তা নিয়ে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে তৃণমূল নেতাকর্মীদের মাঝে। এ বিষয়ে নাম প্রকাশ না করার শর্তে দলটির সম্পাদকমণ্ডলীর এক সদস্য বলেন, এমপি-মন্ত্রীদের কিছুই হবে না, বড়জোর শোকজ নোটিশ দেয়া হবে।
আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল আলম হানিফ এ প্রসঙ্গে বলেন, কোন কোন নেতাকে শোকজ করা হবে সেই তালিকা এখনও হয়নি। অভিযোগগুলো যাচাই-বাছাই চলছে। সত্যতা নিশ্চিত করে খুব শিগগিরই শোকজ করা হবে।
দলটির সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য কাজী জাফরউল্যাহ বলেন, যেসব নেতার বিরুদ্ধে অভিযোগ উত্থাপন হয় তাদের প্রথমে শোকজ করা হয়। শোকজের জবাব সন্তোষজনক হয়েছে মনে হলে পরবর্তীতে আর কোনো পদক্ষেপ নেয়া হয় না। নিকট অতীতে কারও বিরুদ্ধে কঠোর কোনো পদক্ষেপ নেয়া হয়নি।
বিএ-১৯/১০-০৫ (ন্যাশনাল ডেস্ক, তথ্যসূত্র: জাগো নিউজ)