সেই রাজীব-দিয়া নিহতের মামলার রায় ১ ডিসেম্বর

দেশজুড়ে আলোড়ন সৃষ্টিকারী বাসচাপায় শহীদ রমিজউদ্দিন ক্যান্টনমেন্ট কলেজের দুই শিক্ষার্থী নিহতের ঘটনায় দায়েরকৃত মামলার রায় ঘোষণার জন্য আগামী ১ ডিসেম্বর দিন ধার্য করেছেন আদালত।

রাষ্ট্রপক্ষ ও আসামিপক্ষের যুক্তিতর্ক শেষে বৃহস্পতিবার ঢাকা মহানগর দায়রা জজ কে এম ইমরুল কায়েশ রায় ঘোষণার এ দিন ধার্য করেন।

গত বছরের ২৯ জুলাই বাসচাপায় দ্বাদশ শ্রেণীর ছাত্র আবদুল করিম রাজীব (১৭) ও একাদশ শ্রেণীর ছাত্রী দিয়া খানম মীম (১৬) নিহত হন। বেপরোয়া বাসের চাপায় দুই শিক্ষার্থী নিহতের ঘটনায় দেশজুড়ে আলোড়ন সৃষ্টি হয়।

সড়কের শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে রাজধানীসহ দেশজুড়ে শিক্ষার্থীরা রাস্তায় নামেন। সবাইকে ট্রাফিক আইন মেনে চলতে উৎসাহিত করেন। একই সঙ্গে ফিটনেসবিহীন গাড়ি ও লাইসেন্স বিহীন চালকদের বিরুদ্ধেও অবস্থান নেন। ওই সময় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীও অনেকটা তৎপর হয়।

জানতে চাইলে সংশ্লিষ্ট আদালতের রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী তাপস কুমার পাল যুগান্তরকে বলেন, চাঞ্চল্যকর এ মামলাটি সর্বাধিক গুরুত্বসহকারে পরিচালনা করা হয়েছে। সাক্ষ্য-প্রমাণ দিয়ে আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণে রাষ্ট্রপক্ষ সক্ষম হয়েছে। চাঞ্চল্যকর এ মামলার আসামিদের সর্বোচ্চ শান্তি প্রত্যাশা করছি।

নিহত শিক্ষার্থী দিয়া খানম মীমের মা রোকসানা বেগম যুগান্তরকে বলেন, আমার মেয়ে যদি রাস্তা পার হওয়ার সময় এক্সিডেন্ট হতো, তাহলেও মনে এতটা দুঃখ থাকত না। মনে করতাম, হয়তো আমার মেয়েরই ভুল ছিল। হয়তো মেয়েই দেখে রাস্তা পার হতে পারেনি। কিন্তু আমার মেয়ে গাড়িতে উঠার জন্য রাস্তার পাশে দাঁড়িয়ে ছিল। যেখান থেকে যাত্রীরা গাড়িতে উঠে সেখানেই দাঁড়িয়ে ছিল। ড্রাইভারটা যদি একটু সাবধানে গাড়ি চালাত, তাহলে আমার মেয়ে মারা যেত না। আদালতের কাছে ন্যায় বিচার প্রার্থনা করি।

আদালত সূত্র জানায়, গত বছরের ২৯ জুলাই দুপুরে রাজধানীর হোটেল র‌্যাডিসনের বিপরীত পাশের জিল্লুর রহমান উড়ালসড়কের ঢালের সামনের রাস্তার ওপর জাবালে নূর পরিবহনের তিনটি বাস রেষারেষিতে একটি বাস রাস্তায় দাঁড়িয়ে থাকা লোকজনের ওপর উঠে পড়ে। এতে দুই শিক্ষার্থী নিহত ও নয়জন আহত হয়।

এ ঘটনায় নিহত শিক্ষার্থী দিয়া খানম মীমের বাবা মো. জাহাঙ্গীর আলম বাদী হয়ে রাজধানীর ক্যান্টনমেন্ট থানায় মামলাটি করেন। তদন্ত শেষে দুই মাস পর ৬ সেপ্টেম্বর ছয়জনের বিরুদ্ধে ডিবির পরিদর্শক কাজী শরিফুল ইসলাম আদালতে মামলার চার্জশিট দাখিল করেন।

চার্জশিটে বাসের চালকেরা ও হেলপারদের সহযোগিতায় পাল্লাপাল্লি ও রেষারেষি করে বেশি যাত্রী বেশি ভাড়া পাওয়ার লোভে দ্রুত ও বেপরোয়া গতিতে বাস চালাায় বলে উল্লেখ করা হয়।

তবে চার্জশিটের কোথাও লাইসেন্স বিহীন চালক নিয়োগ দেয়ার মূল হোতাদের কথা উল্লেখ করা হয়নি। এরপর গত বছরের ২৫ অক্টোবর এ মামলায় জাবালে নূরের মালিকসহ ওই ছয় আসামির বিরুদ্ধে চার্জ (অভিযোগ) গঠন করেন আদালত।

গত বছরের ১ নভেম্বর এ মামলায় সাক্ষ্যগ্রহণ শুরু হয়। মামলার আসামিরা হলেন- জাবালে নূর পরিবহনের দুটি বাসের মালিক শাহাদাত হোসেন ও জাহাঙ্গীর আলম, দুই চালক মাসুম বিল্লাহ ও জুবায়ের সুমন এবং দুই চালকের দুই সহকারী এনায়েত হোসেন ও কাজী আসাদ।

এদের মধ্যে শাহাদাত হোসেনের মালিকানাধীন বাসটির চাপায় দুই শিক্ষার্থী মারা যায়। আসামিদের মধ্যে কাজী আসাদ পলাতক রয়েছে। আর আসামি শাহাদাত হোসেনের পক্ষে উচ্চ আদালতের স্থগিতাদেশ থাকায় তার অংশ বাদ দিয়ে বিচার কার্যক্রম চলেছে। এছাড়া বাকি চার আসামি কারাগারে আছেন। মামলায় চার্জশিটভুক্ত ৪১ জন সাক্ষীর মধ্যে শিক্ষার্থী, চিকিৎসক ও তদন্ত কর্মকর্তাসহ ৩৭ জনের সাক্ষ্যগ্রহণ হয়েছে।

বিএ-১৬/১৪-১১ (ন্যাশনাল ডেস্ক)