এলাকায় গাড়ির গ্লাস খুলতে পারি না, লজ্জা লাগে

সড়কের অবস্থা ভালো না থাকায় জনপ্রতিনিধিরা নির্বাচনী এলাকায় যেতে পারেন না। এলাকার লোকজন নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের গালি দেয়। সড়কের কারণে এলাকায় গিয়ে গাড়ির গ্লাস খুলে জনগণের সঙ্গে কথা বলতে পারি না, লজ্জা লাগে।

বৃহস্পতিবার ঢাকার শেরেবাংলা নগরের এনইসি সম্মেলনকক্ষে মহাসড়কের লাইফ টাইম: চ্যালেঞ্জ ও করণীয়’ শীর্ষক এক সেমিনার সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্য একথা বলেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল।

মন্ত্রী বলেন, রাস্তার খারাপ অবস্থার কারণে নিজের এলাকায় যেতে লজ্জা লাগে। শুধু নতুন রাস্তা তৈরির জন্য বহু প্রকল্প নেওয়া হয়। অথচ রক্ষণাবেক্ষণে নজর দেওয়া হয় না। সড়কের অবস্থা খারাপ। সড়ক সংস্কারের টাকাও আমরা দিচ্ছি। তারপরও বেহালদশা কেন। আমরা কি সারাজীবন রাস্তার পেছনে বসে থাকবো। যে সব রাস্তা করেছেন সেগুলো শেষ করেন। পরে আবারও নতুন রাস্তা করবেন। রাস্তা ভেঙে গেলে কেন সংস্কার করা হচ্ছে না। অনেক ঠিকাদার এমনভাবে রাস্তা নির্মাণ করেন এটা ভাঙবেই।

বাইপাস সড়ক প্রসঙ্গে অর্থমন্ত্রী বলেন, জমিস্বল্পতার কারণে বাইপাস করা হবে না। এ বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী একদিন বলেছিলেন সারাদেশ কী বাইপাস হয়ে যাবে নাকি?

তিনি বলেন, বিটুমিন সড়ক দ্রুত নষ্ট হয়ে যায়। এর বদলে কংক্রিট নিয়ে আসতে হবে- প্রধানমন্ত্রী এ বিষয়ে বারবার তাগিদ দিয়েছেন। আমাদের জনগণ অনেক শক্তিশালী। তাদের চাহিদা প্রাধান্য দিয়েই কাজ করতে হবে। অনেক দেশি কোম্পানিও ভালো ভালো কাজ করছে। অনেক ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি নেই, তারপরও শুধু তারাই কাজ পায়। এদের কারণে বিদেশি ভালো প্রতিষ্ঠানও কাজ পায় না।

‘অনেক রাস্তার দিকনির্দেশনা নেই। এই সাধারণ কাজগুলো আমরা কেন করতে পারি না। আমরা যখন সিঙ্গাপুর যায় তখন দিকনির্দেশনা দেখতে অনেক ভালো লাগে। আমি অনুরোধ করবো আপানারা এই কাজগুলো সঠিকভাবে বাস্তবায়ন করেন। রাস্তার লাইফটাইম হচ্ছে ৫০ বছর। তৈরির প্রথম দশ বছর কিছুই করা লাগবে না। দশ বছর পর ৫ শতাংশ এগ্রি গ্যাস মেশাবে, এর ফলে আরও দশ বছর চলবে। এভাবে প্রতি ১০ বছর পর পর এগ্রি গ্যাস মেশালেই এর লাইফটাইম ৫০ বছর হবে।’

অর্থমন্ত্রী বলেন, ইংল্যান্ড, শ্রীলংকায় পাহাড়-পর্বত রয়েছে। আমরা তো মহাসাগরবিস্তৃত দেশও দেখি। তারাও তো রাস্তা করে, সেখানে রাস্তার লাইফটাইম ৫০ বছর। তাহলে আমরা কেন পারবো না।

মুস্তফা কামাল বলেন, ‘কারণটা কী? আমরা কী অন্যায় করেছি? ইংল্যান্ডের একটি এক নম্বর কোম্পানি নিয়ে এসেছিলাম। কিন্তু তাদের কাজ করতে দেওয়া হয়নি। কেন দেওয়া হয়নি তা আমরা জানি। ওই কোম্পানি রাস্তাঘাট তৈরি করতে তিনটি গাড়ি ব্যবহার করে। তিনটি গাড়ি মিলে চোখের নিমিষেই ১ কিলোমিটার রাস্তা করে ফেলে।’

চিত্র নায়ক ইলিয়াস কাঞ্চন বলেন, বৃষ্টির কারণে রাস্তাঘাট নষ্ট হয়, এর কোনো ভিত্তি নেই। মালয়েশিয়ায় সারাবছর বৃষ্টি হয়, কিন্তু সেখানে তো রাস্তা টেকসই। আমরা কেন এখনও কংক্রিটের রাস্তা নির্মাণ করছি না। কংক্রিটের রাস্তা নির্মাণের কথা প্রধানমন্ত্রী অনেকবার বলেছেন। পাশের দেশ ভারতের রাস্তাঘাটও অনেক টেকসই।

‘যারা সড়ক নির্মাণ করে রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব তাদেরই দেওয়া উচিত। এটা করা হলে একদিকে কাজের মান ভালো হবে অন্যদিকে রক্ষণাবেক্ষণ নিয়ে ভাবনাও কমে আসবে।’

সেমিনারে উপস্থিত ছিলেন বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ, সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি মো. একাব্বর হোসেন, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সাবেক এসডিজি বিষয়ক সমন্বয়ক আবুল কালাম আজাদ, লেখক ও গবেষক সৈয়দ আবুল মকসুদ, নিরাপদ সড়ক চাই আন্দোলনের চেয়ারম্যান চিত্রনায়ক ইলিয়াস কাঞ্চন প্রমুখ।

সভাপতিত্ব করেন সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের সচিব মো. নজরুল ইসলাম। সেমিনারে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন সড়ক ও জনপথ অধিদফতরের প্রকৌশলী এ কে মোহাম্মদ ফজলুল করিম।

বিএ-১০/১৯-১২ (ন্যাশনাল ডেস্ক)