এবার ঈদেও কারাবন্দীদের সঙ্গে স্বজনের সাক্ষাৎ মিলছে না

করোনাভাইরাস পরিস্থিতি বিবেচনায় এবার ঈদেও কারাবন্দীদের সঙ্গে তাদের স্বজনের সাক্ষাতের সুযোগ মিলছে না। মোবাইল ফোনেই বন্দীদের সঙ্গে স্বজনরা শুভেচ্ছা বিনিময় করবেন। প্রতিবছর ঈদের সময় বন্দীদের সঙ্গে তার স্বজনরা সাক্ষাত করতে যান। অনেক কারাগারে এই দিনে দীর্ঘ লাইনও তৈরি হয়। কারাগারের একাধিক দায়িত্বশীল সূত্র সমকালকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে কারা মহাপরিদর্শক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এ কে এম মোস্তফা কামাল পাশা সমকালকে বলেন, আবেগ নয়, অনেক সময় পরিস্থিতি বিবেচনায় নিয়ে কাজ করতে হয়। ঈদেও স্বজনদের সঙ্গে বন্দীদের সাক্ষাৎ বন্ধ রাখা হতে পারে। সেইভাবে বিষয়টি ভাবা হচ্ছে। স্বজনদের সঙ্গে তারা মোবাইলে কুশলাদি বিনিময় করতে পারবেন। তারা বন্দীদের পিসিতে মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে টাকা পাঠাতে পারছেন।

মোস্তফা কামাল পাশা আরও বলেন, শুরু থেকে সতর্কতামূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করায় এখনো কারাগারের ভেতরে কেউ আক্রান্ত হননি। যারা আক্রান্ত হয়েছেন তারা বাইরে ডিউটিতে ছিলেন।

কারাগারের দায়িত্বশীল সূত্র জানায়, কারাগারকে করোনামুক্ত করতে এরই মধ্যে বেশ কিছু উদ্যোগ নেওয়া হয়। এর অংশ হিসেবে ২ হাজার ৮৮৪ বন্দীকে মুক্তি দেওয়া হয়েছে। যারা মুক্তি পেয়েছেন তাদের লঘুদণ্ডে সাজা হয়েছিল। সম্প্রতি বন্দীদের সঙ্গে স্বজনের সাক্ষাৎ বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। করোনা পরিস্থিতি বিবেচনায় বন্দীদের সঙ্গে স্বজনের সাক্ষাতের ব্যবস্থা ঈদের সময়ও বন্ধ থাকবে। তাই স্বজনদের ঈদের সময় অহেতুক কারাগারের আশপাশে ভিড় না করতে বলা হয়েছে।

করোনাভাইরাস (কোভিড-১৯) পরিস্থিতিতে সারা দেশে বন্দীদের জন্য সাতটি আইসোলেশন কেন্দ্র প্রস্তুত করা হয়েছে। সব কারাগারে আসা নতুন বন্দীদের ১৪ দিন কোয়ারেন্টাইনে রাখা বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। যাদের শরীরে জ্বর বা অন্য কোনো উপসর্গ রয়েছে তাদের প্রতি বিশেষ নজর রাখা হচ্ছে।

দেশে ৬৮টি কারাগারে ৯০ হাজারের মতো বন্দী রয়েছে- যা কারাগারগুলোর ধারণক্ষমতার কয়েকগুণ বেশি। কোভিড-১৯ অতিমাত্রায় ছোঁয়াচে বলে কারাগারগুলোতে ঝুঁকির মাত্রা থাকে অত্যন্ত বেশি। নাজিমউদ্দিন রোডের পুরাতন কারাগারের স্টাফ কোয়ার্টারে থেকে বিভিন্ন হাসপাতালে বন্দীদের ডিউটি করার সময় ২৩ জন কারারক্ষী এরই মধ্যে ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন।

করোনাভাইরাস মোকাবিলায় কারাবন্দী ও কারাগারের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সব কর্মকর্তা-কর্মচারীর মধ্যে সচেতনতামূলক কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়েছে। সাবান, হ্যান্ডওয়াশ বা স্যানিটাইজার ব্যবহার ছাড়া কেউ কারাগারে ঢুকতে পারছেন না। শরীরের তাপমাত্রা পরীক্ষা কারার জন্য ইনফ্রারেড থার্মোমিটার ব্যবহার করা হচ্ছে।

কারাগারের একজন দায়িত্বশীল কর্মকর্তা জানান, করোনা থেকে কারাগারকে মুক্ত রাখা জরুরি। কারণ কারাগারে অল্প জায়গার মধ্যে অনেককে থাকতে হয়। তাই কারাগারকে ভাইরাসমুক্ত রাখার জন্য অনেক বেশি সতর্কামূলক পদক্ষেপ নিতে হয়।

কেরাণীগঞ্জের ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের জেলার মাহবুব আলম বলেন, ১০ হাজার বন্দী ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে রয়েছে। কেউ এখনো করোনায় আক্রান্ত হননি। নানা ধরনের সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নেওয়ার বিষয়ে বন্দীরা সহযোগিতা করছেন। তারা সব নির্দেশনা মেনে চলছেন।

জানা গেছে– করোনাভাইরাস পরিস্থিতি মোকাবিলার জন্য সারা দেশে সাতটি আইসোলেশন কেন্দ্র করা হয়। ঢাকা ও ময়মনসিংহ বিভাগের কারাগারগুলোর বন্দীদের জন্য কিশোরগঞ্জের পুরোনো কারাগার, সিলেট বিভাগের বন্দীদের জন্য সিলেটের পুরোনো কারাগার, চট্টগ্রাম বিভাগের বন্দীদের ফেনীর পুরোনো কারাগার, বরিশাল বিভাগ ও যশোরের জন্য পিরোজপুরের পুরোনো কারাগার, রংপুর বিভাগের বন্দীদের জন্য দিনাজপুরের পুরোনো কারাগার, শরীয়তপুর ও মাদারীপুরের বন্দীদের জন্য মাদারীপুরের পুরোনো কারাগার, রাজশাহী বিভাগের বন্দীদের জন্য কারা উপমহাপরিদর্শকের (ডিআইজি প্রিজন্স রাজশাহী) বাংলোকে আইসোলেশন কেন্দ্র হিসেবে প্রস্তুত করা হয়েছে।

বিএ-১৯/১৫-০৫ (ন্যাশনাল ডেস্ক)