শেষ ভরসা গবাদি পশু রেখে ফেরা ট্রাক

সরকারি বিধি নিষেধ এবং পুলিশের চেকপোস্ট গলিয়ে ঈদে ঝুঁকি নিয়ে বাড়ি ফিরছে বেপরোয়া মানুষ। করোনাভাইরাস সংক্রমণ এড়াতে দূরপাল্লার বাস বন্ধ থাকলেও থেমে নেই মানুষের স্রোত। পোশাকশিল্প মালিকদের দুই সংগঠন বিজিএমইএ ও বিকেএমইএ’কে করোনা সংক্রমণ রোধে তিন দিনের ছুটি ও শ্রমিকদের কর্মস্থলে অবস্থান করার সরকারি নির্দেশনা দেওয়া হলেও সেটিও কার্যকর হয়নি।

গত ৯ মে শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ে অনুষ্ঠিত তৈরি পোশাক শিল্পবিষয়ক ত্রিপক্ষীয় পরামর্শ পরিষদের সভায় করোনাভাইরাসের সংক্রমণজনিত সার্বিক পরিস্থিতি ও ঈদের ছুটি নিয়ে সরকারি নির্দেশনা পরিপালন বিষয়ে বেশকিছু সিদ্ধান্ত হয়। সিদ্ধান্ত অনুসারে, সরকারি ছুটি তিনদিনই থাকবে। এর বাইরে মালিক-শ্রমিক আলোচনার মাধ্যমে শ্রমিকদের কর্মস্থল ত্যাগ না করার শর্তে দু-একদিন বেশি ছুটি দিতে পারবে কারখানা কর্তৃপক্ষ।

তবে শ্রমিক অসন্তোষ বাড়তে পারে- এমন আশঙ্কায় সাভার-আশুলিয়ার সকল তৈরি পোশাক ও শিল্প কারখানায় আজ বুধবার থেকেই ৭ থেকে ১০ দিনের ছুটি ঘোষণা করায় শ্রমিকরা এখন বাড়ির পথ ধরেছেন। তারা বলছেন, ঈদে ৮ থেকে ১০ দিন ছুটি পাবেন এই আশায় গত দেড় মাস ধরে প্রত্যেক শুক্রবার তারা ডিউটি করেছেন। তাই মাত্র তিনদিন ছুটি দেওয়া হলে এটা তারা কেউ মানতেন না।

সার্বিক বিবেচনায়, সবকিছুই আগের মত স্বাভাবিক থাকলেও কেবলমাত্র বন্ধ রয়েছে দূরপাল্লার যান চলাচল। তাই ঘরমুখী এসব মানুষ প্রাইভেট কার, মাইক্রোবাস, অ্যাম্বুলেন্স, মোটরসাইকেল ও পণ্য পরিবহনের গাড়িতে ঝুঁকি নিয়ে বাড়ি ফিরছেন। বিশেষ করে রাজনীতির পশুর হাটগুলোতে আসা ফিরতি ট্রাকে স্বল্পআয়ের মানুষদের অনেকেই গাদাগাদি করে গন্তব্যে ফিরছেন।

সাভারে ট্রাফিক পুলিশের ইনচার্জ ইন্সপেক্টর আবদুস সালাম জানান, ঘরমুখো মানুষদের কেউই মানছেন না কোনো বিধিনিষেধ। স্বাস্থ্যবিধির তোয়াক্কা না করেই যে যার মতো করে ছুঁটছেন গ্রামের পথে। করোনা মহামারি নিয়ন্ত্রণে ঈদযাত্রা ঠেকাতে স্থানীয় প্রশাসন ও পুলিশের পাশাপাশি বিজিবি মোতায়েন করার পরও গ্রামমুখী মানুষের ঢল থামেনি।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক পুলিশ কর্মকর্তা জানিয়েছেন, স্বজনদের সঙ্গে দেখা করতে মরিয়া মানুষগুলোর গ্রামের ফিরতে বেপরোয়া আচরণের কারণে এখন অলিখিতভাবে পুলিশের চেকপোস্টগুলোতেও ঈদ যাত্রায় কড়াকড়ির বদলে শিথিল করা হয়েছে। এই সুযোগে কেউ এম্বুলেন্সে চেপে, কেউ মোটরসাইকেল কেউ আবার বন্ধুবান্ধব ও স্বজনরা মিলে স্বল্প পাল্লার রুটে চলাচলকারী বাস রিজার্ভ করেই ছুটছেন নিজ নিজ গন্তব্যে। অনেকে ভাড়া করছেন গবাদি পশু বহনকারী ট্রাগগুলোকে।

কুষ্টিয়ার ভেড়ামারা গামী ইশতিয়াক হোসেন নামে একজন বেসরকারী প্রতিষ্ঠান কর্মী জানান, তারা কয়েকজন মিলে ১৫ হাজার টাকায় মাইক্রোবাস ভাড়া করে রওনা দিয়েছেন।

দূরপাল্লার বাস চলাচলে সরকার শিথিলতা দেখাতে পারে এমন আশায় সকাল থেকে পরিবহন শ্রমিকরা গাবতলীতে ভিড় করেন। তবে এখন পর্যন্ত সবুজ সংকেত না পেয়ে দূরপাল্লার বাস চলাচল বন্ধ রয়েছে। এ সুযোগে স্বল্প পাল্লায় চলাচলকারি স্থানে রুটের বাস গুলো দ্বিগুণ ভাড়া নিয়ে যাত্রী বোঝাই করে যাত্রা করছে দূরপাল্লার পথে।

সবুজ আলম নামে এক ব্যক্তির সঙ্গে কথা হলে তিনি জানান, অনেক চেষ্টা করেও কার, মাইক্রো বা অন্য বাহন পাননি। তাই বাধ্য হয়ে গাবতলীতে আসা একটি গরুবাহী ট্রাকে করে গ্রামের বাড়ি যাবেন তিনি। বড় ট্রাকটিতে গরু ধরে ১২ টি। সেখানে তিনিসহ আরও ১৮ জন যাবেন। সকলের যাত্রা যশোরে।

ঈদের আর একদিন বাকি থাকতে ঢাকা-আরিচা মহাসড়কে বেড়েছে ব্যক্তিগত গাড়ির চাপ। কোথাও কোথাও সৃষ্টি হয়েছে যানজটের। অপরদিকে বৃষ্টি এসব নাড়ির টানে বাড়ি ফেরা মানুষদের ভোগান্তি বাড়িয়েছে।

ঢাকার সাভার ট্রাফিক ইনচার্জ (টিআই) আব্দুস সালাম জানান, ন্যূনতম স্বাস্থ্যবিধির তোয়াক্কা না করেই লোকজন গ্রামের পথ ধরেছেন। পথে পথে ভোগান্তি হচ্ছে, নিরসনে কাজ করছে পুলিশ। এ ছাড়া অনাকাঙ্খিত কোনো সমস্যার সমাধানে ট্রাফিক পুলিশ সর্বদা সচেষ্ট রয়েছে।

এসএইচ-১৭/১২/২১ (ন্যাশনাল ডেস্ক)