পাচার হওয়া বোনকে খুঁজতে গিয়ে নিজেই পাচারের শিকার তরুণী

ভারতে পাচার হওয়া বোনকে খুঁজতে গিয়ে নিজেই পাচারের শিকার হন এক তরুণী এবং তার খালা। ৬ মাসের বন্দিদশায় হয়ে পড়েন অন্তঃসত্ত্বা। কৌশলে পালিয়ে ফিরতে পারলেও খোঁজ পাননি বোন ও খালার।
এদিকে বিউটি পার্লারে চাকরির লোভ দেখিয়ে পাচারের শিকার হন আরও দুই তরুণী। হাতিরঝিল থানায় মানবপাচার আইনে তিন ভুক্তভোগী নারীর মামলার পর পুলিশ বলছে, টিকটিক হৃদয় বাবু এবং নদী নামের এক দালাল তাদেরকে পাচার করে দিয়েছিলেন ভারতে।

গত বছরের শেষের দিকে এক তরুণীর বড় বোনকে বিউটি পার্লারে চাকরির নামে ভারতে পাচার করে দিয়েছিলেন নদী নামের এক দালাল। কিছুদিন পর নদী জানান, ভারতে খুব ভালো বেতনে চাকরি করছেন তার বোন। তবে সে কিছুটা অসুস্থ। অসুস্থ বোনকে দেখতে তাকেও ভারতে যাওয়ার প্রস্তাব দেওয়া হয়। বোনকে দেখতে এই তরুণী তার খালাসহ পাড়ি দেন ভারতে।

ঢাকা থেকে প্রথমে যশোরের বেনাপোল। সীমান্ত পাড়ি দিতে গিয়ে বিজিবির হাতে ধরা পড়ার পর দালাল তাকে সাতক্ষীরা সীমান্ত দিয়ে কলকাতায় পাঠানোর ব্যবস্থা করেন। কলকাতা থেকে বেঙ্গালুরু। সেখানে দেখা হয় বোনের সঙ্গে। জানতে পারেন বিউটি পার্লারে চাকরি নয়, তার বোনকে পতিতাবৃত্তিতে বাধ্য করা হয়েছে। বোনের মত একই পরিণতি নেমে আসে তারও। বেঙ্গালুরু আর চেন্নাইয়ের হোটেলে হোটেলে কাটে ৬ মাস। অবশেষে অন্তঃসত্ত্বা এই তরুণী একদিন খুঁজে পান পালানোর পথ।

তিনি বলেন, আমাকে তারা একদিন কাজে পাঠায়। আমি তাদের বলি, অনেক অসুস্থতায় ভুগছি। শরীর চলছে না। আমাকে আপনারা দেশে পাঠিয়ে দেন। তখন তারা আমাকে কিছু বলেনি। মিথ্যা কথা বলে আমাকে কাজে পাঠিয়ে দিত। একদিন আমি অন্তঃসত্ত্বা হয়ে যাই। তারা আমার গর্ভপাত করাতে চায়। আমি তখন ভয় পেয়ে যাই। এরপরও তারা আমাকে কাজে পাঠাতো। একদিন একটা রুমে একা রেখে আসে চেন্নাইয়ে। সে রুমের জানালা ভাঙা ছিল। আমি সেই ভাঙা জানালা দিয়ে পালিয়ে আসি। ওখান থেকে সরাসরি ট্রেনে করে কলকাতা হয়ে বাংলাদেশে আসি।

একই চাকরির কথা বলে টিকটিক হৃদয় বাবু এই তরুণী এবং তার আরেক বান্ধবীকেও সাতক্ষীরা সীমান্ত দিয়ে ভারতে পাচার করে দেন।

বেঙ্গালুরু যাওয়ার পর টের পান তারা পাচারের শিকার হয়েছেন। পতিতাবৃত্তিতে রাজি না হওয়ায় তাদের ওপর চালানো হয় নির্মম নির্যাতন। দাবি করা লাখ লাখ টাকা মুক্তিপণ।

ভিকটিমরা বলেন, ওই বাসায় গিয়ে দেখি আরও চার-পাঁচজন মেয়ে। সেখানে সাগর, হৃদয় ও আকিল ছিল। আমি বর্ডার পার হওয়ার সময় অসুস্থ হয়ে পড়ি। ওখানে গিয়ে যখন বাজে কাজ করতে রাজি হইনি তখন তারা আমাদের খুব মারধর করে। এরপর ব্ল্যাকমেইল করে টাকা দাবি করে।

পাচারের শিকার এই তিন তরুণী বলছে ভারতে যাওয়ার পর তাদের দেখা হয় হৃদয় বাবুর সঙ্গে। সেখানে হৃদয় বাবুর বিলাসী জীবনের তথ্য দিলেন তারা।

তারা বলেন, আমরা যে বাসায় গিয়েছি সেখানে হৃদয় বাবুরা অনেক দিন ধরে থাকত। যতটুকু জানি, ওই বাড়ির মালিকও এসব জানত। এ কারণে মালিক তাদের জোরে গান বাজাতে বলত। যাতে শব্দ বাইরে না যায়। তাই তারা আমাদের মারধরের সময় অনেক জোরে গান চালাত।

দেশে ফিরে হাতিরঝিল থানায় এই তিন তরুণী মানবপাচার আইনে মামলা করেছেন।

এ প্রসঙ্গে ডিএমপির তেজগাঁও বিভাগের উপপুলিশ কমিশনার মোহাম্মদ শহিদুল্লাহ বলেন, হৃদয় বাবু এবং নদী সীমান্তে কিছু দালালদের সহায়তায় তাদের পাচার করে নিয়ে যায়।

এনিয়ে মোট ৫টি মামলা হয়েছে হাতিরঝিল থানায়। এখন পর্যন্ত গ্রেপ্তার করা হয়েছে ১৩ জনকে। ভারতের পুলিশ গ্রেপ্তার করেছে ১২ জনকে। যাদের মধ্যে ১১ জনই বাংলাদেশি।

এসএইচ-০৫/২০/২১ (ন্যাশনাল ডেস্ক)