পোশাক কারখানা খোলার ঘোষণায় সীমাহীন দুর্ভোগ মাথায় নিয়ে বিভিন্ন রুটে রাজধানী ঢাকার পথে ছুটছেন শ্রমিকরা।
বরিশাল থেকে রাজধানীমুখী শ্রমিকদের ঢল নেমেছে পোশাক কারখানা খোলার ঘোষণায়। যানবাহন না থাকায় পায়ে হেঁটেই রওয়ানা হয়েছেন তারা। দুর্ভোগের কথা জানান ভুক্তভোগীরা।
শনিবার সকাল থেকে বরিশাল নগরীর নথুল্লাবাদ বাস টার্মিনাল এলাকায় রাজধানীমুখী পোশাক শ্রমিকদের ভিড় বাড়তে দেখা গেছে। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বাস টার্মিনাল এলাকায় লোকে লোকারণ্য হয়ে পড়ে।
কোনো যানবাহন না থাকায় রাজধানী পর্যন্ত এতে দূরের পথ কীভাবে তারা পৌঁছাবে এ নিয়ে ক্ষুব্ধ তারা। একপর্যায়ে বরিশাল-ঢাকা মহাসড়কে চলাচালরত পণ্যবাহী ট্রাক যেতে বাধা দেন তারা। খবর পেয়ে বিমানবন্দর থানা পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে পণ্যবাহী ট্রাকের চলাচল ব্যবস্থা করেন।
এ সময় পোশাক শ্রমিকরা জানান, সরকার পোশাক কারখানা খুলে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। পোশাক কারখানা কর্তৃপক্ষ শ্রমিকদের ১ আগস্ট উপস্থিত হওয়ার নির্দেশ দিয়েছে। তাহলে আমরা এতদূরের পথ কীভাবে যাব? এ কারণে বৈরি আবহাওয়া উপেক্ষা করে আমাদের রাজধানীমুখী হতে হচ্ছে।
কোনো যানবাহন না থাকায় দারুণ বিপাকে পড়ার কথা জানান তারা। সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে এ বিষয়টি সুরাহা না করায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন পোশাক শ্রমিকরা।
প্রসঙ্গত, বরিশাল বিভাগের বিভিন্ন জেলার অসংখ্য শ্রমিক রাজধানীর বিভিন্ন পোশাক কারখানায় কাজ করেন। ঈদুল আজহার সময় ৮ দিন যানবাহন চলাচল স্বাভাবিক হওয়ায় পোশাক শ্রমিকরা ওই সময়ে বাড়ি ফিরেছিলেন। সেই পোশাক শ্রমিকরাই এখন বিপাকে পড়েছেন। সীমাহীন কষ্ট নিয়ে তারা ঢাকা ফিরছেন।
আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রয়েছে বলে জানিয়েছেন বরিশাল এয়ারপোর্ট থানার পরিদর্শক (তদন্ত) বিপ্লব মিস্তি।
এদিকে ১৪ দিনের লকডাউন শেষ হওয়ার আগেই গার্মেন্টস খুলে দেয়ার খবরে নেত্রকোনায় ঢাকামুখী মানুষের উপচে পড়া ভিড় দেখা গেছে। পায়ে হেঁটেই রওনা দিয়েছেন তারা।
সকাল থেকেই জেলার বিভিন্ন উপজেলা থেকে ঢাকাগামী কর্মজীবী মানুষ বিরামহীনভাবে ছুটে চলেছেন। যদিও পৌর শহরে সিএনজি ইজিবাইক চলাচল অনেকটাই বন্ধ রয়েছে।
এমন অবস্থায় চাকরি বাঁচাতে পায়ে হেঁটেই গন্তব্যে ছুটছেন তারা। এদিকে মানুষের ভিড় সামলাতে হিমশিম খাচ্ছেন জেলা আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা। এমন অবস্থায় করোনা সংক্রমণ বৃদ্ধির আশঙ্কা করছেন স্থানীয়রা।
এ ঘোষণায় পাটুরিয়া-দৌলতদিয়া নৌরুট দিয়ে ঢাকামুখী বিভিন্ন জেলার মানুষের ঢল নেমেছে। গাদাগাদি অবস্থায় সংক্রমণের ঝুঁকি তৈরি করেই ঘাট পার হচ্ছেন তারা। ঘাটে যানবাহন সংকটে সীমাহীন দুর্ভেোগ মাথায় নিয়ে অতিরিক্ত ভাড়া দিয়ে রাজধানীতে ফিরছেন তারা।
শনিবার ভোরে দৌলতদিয়া থেকে আসা ফেরিগুলোতে তিল ধারনের জায়গা ছিল না। শুধু মানুষ আর মানুষ। ফেরি ঘাটে ভিড়তেই হুমড়ি খেয়ে পড়ছে মানুষ। গণপরিবহন বন্ধ থাকায় যে যেভাবে পারছেন চেষ্টা করছেন কর্মস্থলে ফিরতে। রোববার পোশাক কারখানা খোলার ঘোষণায় বাধ্য হয়েই ফিরছেন তারা।
সিরাজগঞ্জে বঙ্গবন্ধু সেতু পশ্চিম মহাসড়কে ঢাকামুখী মানুষের উপচে পড়া ভিড়। সব শিল্পকারখানা খোলার ঘোষণার পরেই শুক্রবার রাত থেকে মহাসড়কে ঢাকামুখী মানুষের ভিড় বাড়তে থাকে। শনিবার সকাল থেকে এ ভিড় আরো বেড়ে যায়। সকাল থেকে পণ্যবাহী ট্রাক, পিক আপ ভ্যান, মাইক্রোবাস, মোটরসাইকেলসহ বিভিন্ন যানবাহনে করে যে যেভাবে পারছেন ছুটছেন ঢাকায়। শিল্প প্রতিষ্ঠান খোলায় বাধ্য হয়ে জীবনের ঝুঁকি নিয়েই ফিরছেন তারা।
সিরাজগঞ্জের কড্ডার মোড়, হাটিকুমরুল গোল চত্বরে পরিবহনের অপেক্ষায় ঢাকামুখী যাত্রীদের উপচে পড়া ভিড় রয়েছে। তবে এসব পরিবহনে যাত্রীদের কাছ থেকে কয়েক গুণ বেশি ভাড়া নেয়া হচ্ছে বলে অভিযোগ যাত্রীদের। স্বাস্থ্য বিধি না মেনে গাদাগাদি করে গন্তব্য যাওয়ার চেষ্টা করছেন তারা।
এছাড়াও সকাল থেকে দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের জেলার মানুষ কর্মস্থলে যোগ দিতে ঢাকায় ফিরছেন। ফলে, মুন্সীগঞ্জের শিমুলিয়া ঘাটে ঢাকামুখী যাত্রীদের ভিড় বেড়েছে।
শিমুলিয়া ঘাট সূত্রে জানা যায়, করোনা মহামারির কারণে চলাচলে বিধিনিষেধ থাকায় শিমুলিয়া-বাংলাবাজার নৌপথে লঞ্চ, স্পিডবোট ও ট্রলার চলাচল বন্ধ রয়েছে। এ কারণে যাত্রীদের চাপ বেড়েছে ফেরিগুলোয়।
এর আগে ব্যবসায়ীদের দাবির মুখে চলমান কঠোর বিধিনিষেধের মধ্যেই তৈরি পোশাকসহ সব রপ্তানিমুখী শিল্পকারখানা আগামী রোববার খুলে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। ফলে রপ্তানিকারকরা হাফ ছেড়েন। যদিও চলমান বিধিনিষেধে শ্রমিকেরা দূর-দূরান্ত থেকে কিভাবে কর্মস্থলে ফিরবেন তার কোনো নির্দেশনা নেই।
রোববার সকাল ছয়টা থেকে পোশাকসহ সব রপ্তানিমুখী শিল্পকারখানাকে বিধিনিষেধের আওতামুক্ত ঘোষণা করে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ গতকাল শুক্রবার বিকেলে প্রজ্ঞাপন জারি করেছে। গত বৃহস্পতিবার ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআই সভাপতি মো. জসিম উদ্দিনের নেতৃত্বে একদল ব্যবসায়ী মন্ত্রিপরিষদ সচিবের সঙ্গে বৈঠক করেন। যত দ্রুত সম্ভব শিল্পকারখানা খুলে দেওয়ার অনুরোধ জানান তারা। ফলে এর একদিন পরই রপ্তানিমুখী সব শিল্পকারখানা খুলে দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে সরকার।
সর্বশেষ গত ২৮ জুন শুরু হওয়া সীমিত ও পরে ১ থেকে ১৪ জুলাই কঠোর বিধিনিষেধেও পোশাকসহ অন্যান্য শিল্প কারখানা চালু ছিল। তবে ২৩ জুলাই থেকে শুরু হওয়া ১৪ দিনের কঠোরতম বিধিনিষেধে সব ধরণের শিল্প-কারখানা বন্ধ থাকবে। সেই প্রজ্ঞাপন জারির পর থেকে সরকারের সঙ্গে দেন দরবারের নামেন পোশাক ও বস্ত্র খাতের পাঁচ সংগঠনের নেতারা। মন্ত্রিপরিষদ সচিবের সঙ্গে বৈঠক করে প্রধানমন্ত্রীকে চিঠিও দেন তারা। তবে শেষ পর্যন্ত কোনো কিছুই কাজে আসেনি। সরকার নমনীয় হয়নি। ফলে চামড়া, ওষুধ, খাদ্য প্রক্রিয়াজাত শিল্প ছাড়া অধিকাংশ শিল্পকারখানা বন্ধ ছিল।
এসএইচ-০৩/৩১/২১ (ন্যাশনাল ডেস্ক)