দেশের বিভিন্ন জায়গায় গণটিকা কার্যক্রমে ভ্যাকসিন না পাওয়ার অভিযোগ উঠেছ।
হিলি: রোববার হিলিতে গণটিকা কার্যক্রমের মাধ্যমে করোনার ভ্যাকসিন শুরুর একদিন পর টিকা না পেয়ে ফিরে গেছেন অনেকে। কার্যক্রমের প্রথমদিন লক্ষ্যমাত্রা পূরণ হওয়ায় বন্ধ হয়ে যায় গণটিকা কার্যক্রম। সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স চত্বর থেকে এ দৃশ্য লক্ষ্য করা গেছে।
তবে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চলমান রয়েছে সুরক্ষা অ্যাপসের মাধ্যমে নিবন্ধিতদের করোনা টিকা কার্যক্রম। সেখানেও লক্ষ্য করা গেছে মানুষের ভিড়। এদিকে আগামী ১৪ আগস্ট থেকে আবারও গণটিকা শুরু হবে বলে জানিয়েছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।
হিলির মুহাড়াপাড়া গ্রামের নাসিমা খাতুন বলেন, করোনার টিকা নেওয়ার জন্য উপজেলাতে গিয়ে জানতে পাই টিকা শেষ তাই ঘুরে এসেছি।
নাজমা নামের আরও এক নারী বলেন, টিকা শেষ সেটা আমাদের জানালেই হতো তাহলে তো আমাদের হয়রানি হতে হতো না।
হাকিমপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে মেডিকেল অফিসার গাদ্দাফী সিকদার বলেন, গণটিকা কার্যক্রম শুরু আগে আমাদের ২ হাজার ৪শ’ জনকে টিকা প্রদানের জন্য লক্ষ্যমাত্রা দেওয়া হয়েছিল। আমাদের প্রথমদিন লক্ষ্যমাত্রা পূরণ হয়ে গেছে। গণটিকা কার্যক্রম আপাতত বন্ধ আছে। তবে আগামী ১৪ আগস্ট সরকারি নির্দেশনা আসলে আবারও গণটিকা কার্যক্রম শুরু হবে।
তিনি আরও জানান, গণটিকা কার্যক্রম বন্ধ থাকলেও সুরক্ষা অ্যাপসের মাধ্যমে নিবন্ধিতদের প্রতিদিনই মত উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে করোনার ভ্যাকসিন প্রদান কার্যক্রম স্বাভাবিক রয়েছে।
ফরিদপুর: ফরিদপুরে করোনার টিকা সংকট দেখা দেওয়ায় কাউকে আর টিকা দেওয়া হয়নি। টিকা না পেয়ে লাইনে দাঁড়িয়ে থাকা লোকজন ক্ষুব্ধ হয়ে ফিরে যেতে বাধ্য হয়েছেন। টিকা নিতে আসারা জানান, রেজিস্ট্রেশন অনুযায়ী তারা টিকা নিতে সদর হাসপাতালে যান। এসময় তারা দীর্ঘ লাইনে দাঁড়িয়েও টিকা পাননি।
তাদের অভিযোগ, টিকার সংকট থাকলে তাদের কেন মোবাইলে ফোনে তথ্য দিয়ে আসতে বলা হলো। এসময় টিকা না পেয়ে শতাধিক ব্যক্তি হতাশা নিয়ে ফিরে যান।
সকাল ৯টা থেকে টিকা দেওয়া শুরু হলেও তা অল্পক্ষণের মধ্যেই তা শেষ হয়ে যায়। হাসপাতালে টিকা দেবার দায়িত্বে থাকা নার্সরা জানান, টিকা সংকটের কারণে তারা বেশীর ভাগ লোকজনকে টিকা দিতে পারছেন না।
জেলা সিভিল সার্জন ডা. ছিদ্দিকুর রহমান জানান, গণটিকা কার্যক্রমের কারণে তাদের কাছে থাকা টিকা শেষ হয়ে যায়। এ কারণে অনেককেই টিকা দেওয়া সম্ভব হয়নি। তিনি আরো বলেন, ঢাকায় টিকার জন্য চাহিদাপত্র পাঠানো হয়েছে, আশা করা যাচ্ছে দ্রুতই এ সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে।
নারায়ণগঞ্জ: নারায়ণগঞ্জে গণটিকা কার্যক্রমের দ্বিতীয় দিনেও চরম ভোগান্তির শিকার হয়েছেন সাধারণ মানুষ। সিটি করপোরেশন এলাকার ২৭টি ওয়ার্ডের মাত্র একটি করে কেন্দ্রে টিকা প্রদান করায় পরিস্থিতি সামাল দিতে হিমশিম খেতে হয়েছে স্বাস্থ্য কর্মীদের।
একেকটি ওয়ার্ডে বিশ হাজার থেকে আটচল্লিশ হাজার পর্যন্ত ভোটার হলেও মাত্র ছয়শ’ জনের জন্য টিকা বরাদ্দ দেয়ায় এ জনভোগান্তি সৃষ্টি হয়েছে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের ১৩ নম্বর ওয়ার্ডে ভোটার সংখ্যা ৪৮ হাজার। এ ওয়ার্ডের টিকা প্রদান কেন্দ্র করা হয়েছে মাসদাইর এলাকার আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয়। সকালে সেখানে গিয়ে গেছে, টিকা নিতে ফজরের নামাজের পর থেকে দীর্ঘ লাইনে ঘণ্টার পর ঘণ্টা দাঁড়িয়ে থেকে অপেক্ষা করেন প্রায় তিন থেকে চার হাজার মানুষ। অথচ টিকা বরাদ্দ ছিল মাত্র ৬০০ জনের। বেলা ১২টার আগেই টিকা শেষ হয়ে যাওয়ায় চরম ক্ষোভ নিয়ে ফিরে গেছেন কয়েক হাজার টিকা প্রত্যাশিরা।
একই অবস্থা দেখা গেছে সিটি করপোরেশনের অন্যান্য ওয়ার্ডসহ ৫টি পৌরসভা ও ৪৬টি ইউনিয়ন পরিষদ কার্যালয়েও। কয়েক ঘণ্টা অপেক্ষা করেও টিকা দিতে না পেরে স্বাস্থ্য কর্মীদের সঙ্গে বাকবিতণ্ডাসহ হাতাহাতিতেও জড়িয়ে পড়েন অনেকে।
সিভিল সার্জন কার্যালয়ের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, নারায়ণগঞ্জে সিটি করপোরশেন, পৌরসভা ও ইউনিয়ন পরিষদগুলোর ৭৮টি কেন্দ্রে এই গণটিকা কার্যক্রম পরিচালনা করছে জেলা স্বাস্থ্য বিভাগ। এ ৭৮টি কেন্দ্রের মাধ্যমে জেলায় একদিনে টিকা বরাদ্দ হয়েছে মাত্র ৪৬ হাজার ৮০০ জনের, যেখানে মোট ভোটার রয়েছেন ২০ লাখেরও বেশি।
তবে চাহিদার তুলনায় প্রতি কেন্দ্রে ৬০০ করে টিকা কিছুই নয় বলে দাবি সাধারণ মানুষের। টিকার পরিমাণ বাড়ানোসহ তারা প্রতি কেন্দ্রে স্বাস্থ্যকর্মী বৃদ্ধির করতে সরকারের কাছে দাবি জানিয়েছেন।
এদিকে, জেলায় গত চব্বিশ ঘণ্টায় করোনায় আক্রান্ত হয়ে আরো ছয় জনের মৃত্যু হয়েছে। এটি এ বছর একদিনে সর্বোচ্চ মৃত্যু। জেলায় মৃত্যুর সংখ্যা ২৭৮। এছাড়া নতুন করে আক্রান্ত হয়েছেন ১৭৭ জন। মোট আক্রান্ত হয়েছেন ২১ হাজার ৩০৩ জন এবং সুস্থ হয়েছেন ১৭ হাজার ৮০০ জন।
সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, নগরীর খানপুর এলাকায় জেলার একমাত্র করোনা ডেডিকেটেড হাসপাতালে আইসোলোশন সেন্টার এবং আইসিউতে কোনো বেড খালি নেই। ফলে করোনা আক্রান্ত জরুরি রোগিদের ঢাকায় পাঠানো হচ্ছে।
এসএইচ-৩৯/০৮/২১ (ন্যাশনাল ডেস্ক)