উপমহাদেশের প্রখ্যাত কথাসাহিত্যিক হাসান আজিজুল হক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বিএসএমএমইউ) চিকিৎসাধীন। বর্তমানে তার অবস্থা অপরিবর্তিত।
সোমবার বিএসএমএমইউর ইন্টারনাল মেডিসিন বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. সোহেল মাহমুদ আরাফাত সংবাদমাধ্যমকে এ তথ্য জানান।
তিনি বলেন, হাসান আজিজুল হকের দ্বিতীয়বারের নমুনা পরীক্ষায় করোনা নেগেটিভ আসছে। তারপরও আমরা তাকে সাসপেক্টেড কোভিড রোগী হিসেবে চিকিৎসা দিচ্ছি। উনাকে অ্যান্টিবায়োটিক দেওয়া হয়েছে। হার্টের একটা সমস্যা আগে থেকেই ছিল, ওটারও চিকিৎসা চলছে। উনি এখন স্টেবল আছেন, তবে অক্সিজেন লাগছে এখনও। অবস্থার উন্নতি না হলেও অবনতি হয়নি।
হাসান আজিজুল হকের চিকিৎসায় গঠিত মেডিকেল বোর্ডের সদস্য ক্লিনিক্যাল কার্ডিওলজি বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ডা. মো. হারিসুল হক সংবাদমাধ্যমকে বলেন, রোববার মেডিকেল বোর্ড তাদের পর্যবেক্ষণ জানিয়েছে। মঙ্গলবার হাসান আজিজুল হকের বিষয়ে বোর্ডের আরেকটি বৈঠক আছে।
এর আগে শনিবার উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকে এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে করে ঢাকায় আনা হয়। বিমানবন্দরে সাংবাদিকদের রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) মার্কেটিং বিভাগের শিক্ষক শাহ আজম শান্তনু জানান, সকাল সাড়ে ১০টার দিকে রাজশাহী বিমানবন্দর থেকে তাকে নিয়ে উড্ডয়ন করে এয়ার অ্যাম্বুলেন্স।
গত বুধবার পারিবারিক সূত্রে জানা গেছে, এ কথাসাহিত্যিক অসুস্থ হয়ে বাসায় চিকিৎসা নিচ্ছিলেন।
হাসান আজিজুল হকের ছেলে ও রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণরসায়ন ও অণুপ্রাণবিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ইমতিয়াজ হাসান সাংবাদিকদের বলেন, চিকিৎসকের পরামর্শ অনুসারে বাবাকে স্যালাইন ও ওষুধ দেওয়া হয়। এছাড়া বাসাতেই তার ইসিজি করানো হয়।
তিনি আরও বলেন, দীর্ঘদিন ধরে বাবা বার্ধক্যজনিত সমস্যা ছাড়াও হার্টে সমস্যা ও ডায়াবেটিসে ভুগছেন। বর্তমানে বেশি ভুগছেন হাইপোন্যাট্রিমিয়ায়।
চিকিৎসক বলছেন, তার শরীরে লবণের ঘাটতি আছে। তাই তিনি শারীরিকভাবে খুব দুর্বল আছেন বলেও ওই সময় জানিয়েছিলেন তিনি।
অধ্যাপক ইমতিয়াজ হাসান বলেন, বাবা কয়েক দিন আগে পড়ে যাওয়ায় তার পায়ে ফ্র্যাকচার হয়েছে।
হাসান আজিজুল হক ভারতের পশ্চিমবঙ্গের বর্ধমান জেলার যবগ্রামে ১৯৩৯ সালের ২ ফেব্রুয়ারিতে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি ১৯৭৩ সালে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের দর্শন বিভাগে অধ্যাপক হিসেবে যোগদান করেন। ২০০৪ সাল পর্যন্ত তিনি সেখানে অধ্যাপনা করেন।
জীবনসংগ্রামে লিপ্ত মানুষের কথকতা তার গল্প-উপন্যাসের প্রধানতম অনুষঙ্গ। ১৯৬০-এর দশকে তিনি কথাসাহিত্যিক হিসেবে সুনাম অর্জন করেন।
১৯৭০ সালে তিনি বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার পান। ১৯৯৯ সালে বাংলাদেশ সরকার তাকে একুশে পদকে এবং ২০১৯ সালে স্বাধীনতা পুরস্কারে ভূষিত করেছেন।
সার্বজৈবনিক সাহিত্যচর্চার স্বীকৃতিস্বরূপ ২০১৮ সালে তাকে একটি বেসরকারি ব্যাংকের পক্ষ থেকে ‘সাহিত্যরত্ন’ উপাধি দেওয়া হয়।
কথাসাহিত্যিক হাসান আজিজুল হকের বয়স এখন ৮২। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে ৩১ বছর শিক্ষকতার পর ২০০৪ সালে তিনি অবসর নিয়েছেন। এরপর রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় সংলগ্ন শিক্ষকদের আবাসন এলাকা ‘বিহাস’- এ নিজের বাসায় থাকছেন।
এসএইচ-০৮/২৩/২১ (ন্যাশনাল ডেস্ক)