২০ লাখে কিডনি বিক্রি করে ডোনার পেতেন দুই লাখ

টাকার লোভ দেখিয়ে প্রত্যন্ত অঞ্চলের দরিদ্র মানুষের কাছ থেকে কিডনি কিনে পাচার করত সক্রিয় একটি চক্র। এখন পর্যন্ত শতাধিক মানুষের কিডনি ভারতে বিক্রি করেছে বলে জানিয়েছে র‌্যাব।

কিডনি কেনাবেচা চক্রের ফেসবুক পেজের অন্যতম হোতা মো. শাহরিয়ার ইমরানসহ পাঁচজনকে ধরে র‍্যাব। ঢাকা ও জয়পুরহাট থেকে এ চক্রের ৫ সদস্যকে গ্রেপ্তার করা হয়।

কিডনিপ্রতি তিন থেকে চার লাখ টাকা। প্রত্যন্ত অঞ্চলের নিম্ন আয়ের মানুষদের টার্গেট করে মানবদেহের গুরুত্বপূর্ণ এ অঙ্গ বিক্রি করতে প্রলুব্ধ করত একটি চক্র। তবে কিডনি পাওয়ার পর প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী টাকা পরিশোধ না করেই লাপাত্তা হয়ে যেত চক্রের সদস্যরা।

মূলহোতা শাহরিয়ার আবার দুটি পেজের অ্যাডমিন। একটির নাম ‘বাংলাদেশ কিডনি ও লিভার পেশেন্ট চিকিৎসা সেবা’ এবং অপরটি ‘কিডনি লিভার চিকিৎসা সেবা’।

র‍্যাব বলছে, দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলের গরিব মানুষ চিহ্নিত করে তাদের অর্থের বিনিময়ে কিডনি ট্রান্সপ্লান্টেশনের জন্য ডোনার হতে প্রলুব্ধ করা হত। এরপর ডোনারকে পাশের দেশ ভারতে পাঠানো হত।

জয়পুরহাটে টাকা না পাওয়া ভুক্তভোগীদের অভিযোগের ভিত্তিতে চক্রের মূল হোতা শাহরিয়ার ইমরানসহ পাঁচজনকে ধরা হয়। জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায়, প্রতি কিডনি বাবদ রোগীদের কাছ থেকে ১৫ থেকে ২০ লাখ টাকা নিত এ ব্যবসায়ী চক্র। বিপরীতে ডোনারদের মাত্র ২ লাখ টাকা দিত চক্রটি।

এ চক্রের মূলহোতা হলেন- মো. শাহরিয়ার ইমরান আহম্মেদ (৩৬), মো. মেহেদী হাসান (২৪), মো. সাইফুল ইসলাম (২৮), মো. আব্দুল মান্নান (৪৫) ও মো. তাজুল ইসলাম ওরফে তাজু (৩৮)।

অভিযানে ভুক্তভোগী কিডনি দাতাদের ৪টি পাসপোর্ট, মেডিকেল চিকিৎসার জন্য পাসপোর্ট, ভিসা সম্পর্কিত বেশকিছু কাগজপত্র, ৫টি মোবাইল ফোন ও দেশি-বিদেশি মুদ্রা জব্দ করা হয়।

মঙ্গলবার সংবাদ সম্মেলনে কমান্ডার খন্দকার আল মঈন বলেন, প্রতারণার মাধ্যমে কিডনিসহ মানবদেহের নানা অঙ্গের অবৈধ ট্রান্সপ্লান্টেশনের সঙ্গে সক্রিয় রয়েছে কয়েকটি চক্র। এসব চক্রের ফাঁদে পড়ে অসহায় নিম্নআয়ের মানুষ প্রতারিত হচ্ছেন।

তিনটি চক্রে বিভক্ত হয়ে এ কাজ চালিয়ে আসছিল চক্রটি। একজন-দুজন নয় এভাবে শতাধিক মানুষের কিডনি দেশের বাইরে পাচার করেছে চক্রটি। এ চক্রের কয়েকজন সদস্য এর আগে জেল খাটলেও লাভজনক হওয়ায় আবার ফিরে আসে ব্যবসায়।

র‍্যাবের এ কর্মকর্তা আরও বলেন, এ চক্রটি এভাবে বিপুল পরিমাণ অর্থ অবৈধ উপায়ে হাতিয়ে নিয়েছে।

চক্রের মূলহোতা ও অন্যতম আসামি শাহরিয়ার ইমরান ভারতে অবস্থান করে স্থানীয় দালাল ও অনলাইনের মাধ্যমে কিডনি রোগীদের সঙ্গে যোগাযোগ করতেন। এ পর্যন্ত তিনি কিডনি বিক্রির জন্য প্রায় শতাধিক মানুষকে ভারতে পাচার করেছেন বলে জানান কমান্ডার খন্দকার আল মঈন। তার বিরুদ্ধে মানবদেহের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ সংযোজন আইনে ৬টির বেশি মামলা রয়েছে।

কিডনি কেনাবেচা চক্রের সদস্যরা দেশীয় কোনো হাসপাতাল বা ক্লিনিকের সঙ্গে জড়িত কি না এ প্রশ্নের জবাবে র‍্যাব কর্মকর্তা বলেন, দেশের হাসপাতালের তথ্য আমরা পাইনি। তবে তারা পার্শ্ববর্তী দেশে কোন হাসপাতাল-ক্লিনিকে কিডনি প্রতিস্থাপন করতেন সে বিষয়ে জানতে তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে।

এসএইচ-২০/১২/২১ (ন্যাশনাল ডেস্ক)