মাত্র ত্রিশ হাজার টাকার জন্য আঁখিকে অপহরণ

নিখোঁজের তিন মাস পর সন্ধান মিলল দেড় বছরের শিশু আঁখির। সন্তানকে পেয়ে কান্নায় ভেঙে পড়েন মা।
ছবি: গ্রেফতার রাশেদ (বায়ে) ও তার ফুফু রোকসানা পারভিন (ডানে)।)

অপহরণের সঙ্গে জড়িত দুই জনকে গ্রেফতারের পর রাজধানীর কারওয়ানবাজারে মিডিয়া সেন্টারে ব্রিফিং করে র‌্যাব জানায় মাত্র ৩০ হাজার টাকার জন্য অপহরণ করা হয় আঁখিকে।

গত ৩১ মার্চ দেড় বছর বয়সী কন্যাশিশু তার ভাইয়ের সঙ্গে খেলার সময় আশুলিয়া থেকে অপহৃত হয়। পরবর্তীতে শিশুর স্বজনরা আশুলিয়া থানায় অজ্ঞাত আসামিদের নামে মামলা, একই সঙ্গে আশুলিয়া ও আশপাশের এলাকায় নিখোঁজ সংবাদ দিয়ে প্রচারণা চালায়।

এক পর্যায়ে অপহরণকারী রাশেদুল বিকাশে ত্রিশ হাজার টাকা দাবি করলে সেটা পরিবার প্রদান করে। এরপরই তদন্তে নামে র‌্যাব। তারই ধারাবাহিকতায় সোমবার রাতে রংপুর শহরে অভিযান চালিয়ে অপহরণকারী রাশেদুলকে গ্রফতার করে র‌্যাব।

র‍্যাব-৪ এর অধিনায়ক মোজাম্মেল হক বলেন, মিরাজ এবং আঁখি বাড়ির বাইরে খেলা করছিল তখন দশ টাকার একটা নোট দিয়ে চকলেট আনার জন্য মিরাজকে দোকানে পাঠায়। এই ফাঁকে অজ্ঞাতনামা ব্যক্তি শিশু আঁখিকে নিয়ে চম্পট দেয়। সাতদিন পর ফোন দিয়ে আসামি রাশেদ জানায় যদি তোমরা আখিকে ফেরত পেতে চাও তাহলে তার স্ত্রী নুরজাহানের ঠিকানা জানাতে হবে। কিন্তু তারা কান্নাকাটি করে বারবার মোবাইল ফোনে বলে যে আসলে তার স্ত্রীর ঠিকানা তারা জানে না কোথায় আছে সেটাও বলতে পারবে না।

তিনি বলেন, পালিয়ে থাকায় সে একটা ফন্দি আঁটে যে এখান থেকে কিছু টাকা-পয়সা ইচ্ছা করলে নেয়া যাবে। যেহেতু তাদের সামর্থ্য কম তাই তাদের কাছে ত্রিশ হাজার টাকা দাবি করে। পরে বিশ হাজার টাকা বিকাশে পাঠানো হয়, কিন্তু সে ভয়ে টাকা তুলে না। কারণ, টাকা তুলতে গেলে যদি আইনশৃঙ্খলা বাহিনী গ্রেফতার করে নেয়। পরে সে মোবাইল ফোন বন্ধ করে দিয়ে রংপুরে চলে যায় এবং আত্মগোপন করে। গ্রেফতার হওয়ার আগ পর্যন্ত সে আর কোনো তথ্য শেয়ার করেনি।

তার দেয়া তথ্যের ভিত্তিতে গাজীপুরের কালিয়াকৈর এলাকার রতনপুরের একটি বাসা থেকে শিশু আঁখিকে উদ্ধার করা হয়। এসময় রোকসানা নামে আরেকজনকে গ্রেফতার করা হয়।

মোজাম্মেল হক আরও বলেন, রাশেদের স্ত্রী ও আঁখির মা মিরা একই গার্মেন্টসে চাকরি করতো। পরে নুরজাহান পরকীয়া আসক্ত হয়ে তার স্বামীকে না জানিয়ে সাত বছরের বাচ্চা ছেলেকে রেখে অন্য একটি ছেলের সঙ্গে পালিয়ে যায়। তখন নুরজাহানের ঠিকানা জানার জন্য মিরার সঙ্গে বলে তার স্ত্রীর ঠিকানা দিতে। মিরা-সাদ্দাম দম্পতি তার ওয়াইফের বর্তমান ঠিকানা জানে না কিন্তু রাশেদের বিশ্বাস ছিল মিরা তার অবস্থান সম্পর্কে জানে। এ বিষয়টি জানতে পেরে এবং মীরা কে বাধ্য করার জন্য সে পরিকল্পনা করে যে তার শিশু কন্যা আঁখিকে সে অপহরণ করবে।

তিনি আরও বলেন, সেই পূর্বপরিকল্পনা অনুযায়ী ৩১ মার্চ সকাল ৯টা ৪০ মিনিটে চকলেট কিনার নামে তার ভাইকে দোকানে পাঠিয়ে একপর্যায়ে তাকে নিয়ে কালিয়াকৈরে তার ফুফু রোকসানা পারভিনের কাছে গিয়ে বলে যে এটি তার মেয়ে। যখন আমরা মেয়েটিকে উদ্ধার করতে যাই তখন সে মেয়েটিকে দিতে চাচ্ছিল না। আসামি রাশেদ এবং রোকসানা পারভিনের বিরুদ্ধে ইতিমধ্যেই মামলা দায়ের করা হয়েছে।

এর আগেও এমন ঘটনায় বেশ কয়েকজন অপহরণকারীকে গ্রেফতার করেছে র‌্যাব -৪।

এসএইচ-২০/৩১/২২ (ন্যাশনাল ডেস্ক)