শিশুদের করোনা টিকা কার্যক্রম শুরু ১১ অক্টোবর

করোনাভাইরাস প্রতিরোধে ৫ থেকে ১১ বছর বয়সী শিশুদের আগামী ১১ অক্টোবর থেকে জেলা-উপজেলা পর্যায়ে টিকাদান কর্মসূচি শুরু হবে। তবে ঢাকায় ৫ থেকে ১১ বছরের শিশুদের টিকার নিবন্ধন ২৫ আগস্ট থেকেই শুরু হয়েছে। এরই মধ্যে ১০ লাখ শিশু টিকার আওতায় এসেছে।

শনিবার দুপুরে ঢাকার হোটেল রেডিসনে ‘৫-১১ বছরের শিশুদের কোভিড-১৯ টিকা কার্যক্রমবিষয়ক জাতীয় অ্যাডভোকেসি ওয়ার্কশপ’ শীর্ষক অনুষ্ঠানে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক এসব কথা বলেন।

স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, ‘বাংলাদেশ ছাড়া অন্য কোনো দেশ এত বিপুল সংখ্যক ভ্যাকসিন পায়নি। শুধু বাংলাদেশই একমাত্র দেশ, যারা সবচেয়ে বেশি ভ্যাকসিন বরাদ্দ পেয়েছে। আমাদের ১৭ কোটি মানুষের মধ্যে ৭৭ শতাংশ মানুষকে আমরা এরই মধ্যে ভ্যাকসিন দিতে সক্ষম হয়েছি। এর মধ্যে দ্বিতীয় ডোজ ৭১ শতাংশ ও বুস্টার ডোজ ২৬ শতাংশ দেয়া হয়েছে। সব মিলিয়ে ৩০ কোটি ভ্যাকসিন আমরা দিয়েছি। এরই ধারাবাহিকতায় আমরা এখন শিশুদের ভ্যাকসিন দেয়ার কাজ শুরু করেছি। ১০ লাখ অলরেডি দেয়া হয়েছে। সব মিলিয়ে দেশে ২ কোটি ২৬ লাখ ৩৮ হাজার ৭৩৭ শিশুকে এ টিকার আওতায় আনা হবে।’

স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, ‘ভ্যাকসিনে গঙ্গার পানি আছে বলে অপপ্রচার হয়েছে। অনেক সমালোচনাও হয়েছে। তারপরও আমরা কাজ করে গিয়েছি। টিকা কার্যক্রম, করোনা মোকাবিলা, অক্সিজেন ঘাটতিসহ স্বাস্থ্যখাতে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় বলিষ্ঠ ভূমিকা রেখেছে। করোনা মোকাবিলায় বাংলাদেশের মানুষকে আমরা যথাযথ স্বাস্থ্যসেবা দিতে সক্ষম হয়েছি। ১০০ টন অক্সিজেনের জায়গায় আমরা ৩০০/৪০০ টন অক্সিজেন সরবরাহ করেছি।’

সেপ্টেম্বর ২৮ থেকে ৩ অক্টোবর পর্যন্ত করোনার প্রথম ও দ্বিতীয় ডোজের ভ্যাকসিন ক্যাম্পেইন চলবে। ৩ অক্টোবরের পর আর প্রখম ডোজের ভ্যাকসিন দেয়া হবে না। এমনকি দ্বিতীয় ডোজ ভ্যাকসিনের কার্যক্রমও কমে আসবে। তাই যারা এখনো ভ্যাকসিন নেননি, তাদের এ ক্যাম্পেইনে ভ্যাকসিন নিয়ে নেয়ার জন্য আহ্বান জানান স্বাস্থ্যমন্ত্রী।

টিকাদানের গুরুত্ব বিষয়ে স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্যসচিব আনোয়ার হোসেন হাওলাদার বলেন, ‘অনেক দেশেই বাচ্চাদের টিকাদান শুরু হয়নি, আমরা শুরু করেছি। প্রথম থেকেই টিকা প্রয়োগে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বরাবর আবেদন করে রেখেছিলাম, আমরা অনুমোদন পাওয়ার পরপরই কার্যকর করেছি। এর আগে থেকেই আমরা টিকার সোর্স নিশ্চিত করে রেখেছি। আগামী ১১ অক্টোবর থেকে জেলা-উপজেলা, পৌরসভা ও ইউনিয়ন পর্যায়ে টিকাদান শুরু হবে। এতে কমিউনিটি পর্যায়ে আমাদের শিশুদের কাছে টিকা পৌঁছে যাবে। এর মাধ্যমে টিকা না পাওয়া বাকি শিশুরাও আমাদের আওতায় চলে আসবে।’

তিনি আরও বলেন, ‘আমাদের মানুষের মধ্যে একটা অভ্যাস গড়ে উঠেছে যে, করোনার প্রকোপ দেখা দিলেই তাদের মধ্যে টিকা নেয়ার প্রবণতা বেড়ে যায়। এ ক্ষেত্রে আমাদের মানসিকতার পরিবর্তন দরকার। এখন পর্যন্ত করোনায় যারা মারা যাচ্ছেন, তারা টিকা নেননি। এমনকি টিকা না নিয়ে কোভিডে আক্রান্ত হচ্ছেন, তারা অনেকটাই ঝুঁকিতে চলে যাচ্ছেন।’

স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আবুল বাসার খুরশিদ আলম বলেন, ‘ভ্যাকসিন এমন একটা জিনিস, যা বাধ্যতামূলক করা সম্ভব নয়। তারপরও আমাদের চেষ্টা ও মোটিভেশনের মাধ্যমে যে বিপুল সংখ্যক মানুষকে টিকা দিতে পেরেছি তা গর্বের বিষয়। তবে বাচ্চাদের ভ্যাকসিন দেয়ার ক্ষেত্রে কিছু চ্যালেঞ্জে আছে। বাচ্চারা বরাবরই ইনজেকশন ভয় পায়। তাদের কোনো উপহারের মাধ্যমে, চকলেটের মাধ্যমে ভ্যাকসিন কার্যক্রম পরিচালনা করার চেষ্টা করা উচিত। মূলত বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা থেকে বাচ্চাদের উপযোগী করে ভ্যাকসিন তৈরি করা ও তাদের ভ্যাকসিনের জন্য অনুমোদন পেতে দেরি হওয়ায় আমাদেরও কার্যক্রম শুরু করতে বিলম্ব হয়েছে।’

অতিরিক্ত মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আহমেদুল কবির বলেন, ‘বাংলাদেশের স্বাস্থ্যখাতে বিপুল পরিবর্তন আনা সম্ভব। আমরা নিজেরাই আমাদের মোটিভেশন। ১২টি সিটি করপোরেশনে আমরা সফলতার সঙ্গে কাজ করেছি। এখন আমরা জেলা-উপজেলা পর্যায়ে কাজ করব। আশা করি, এতেও আমরা সফল হব। এই বয়সী শিশুদের মধ্যে প্রায় ৯০ ভাগ শিশু স্কুলে আছে। তাই স্কুলের মাধ্যমেই শিশুদের টিকা কার্যক্রম চালু করেছি।’

এ সময় উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশের ৬৪ জেলার সিভিল সার্জন ও বিভাগীয় প্রধানরা।

এসএইচ-১৮/১৭/২২ (ন্যাশনাল ডেস্ক)