বিপ্লব খুন হননি, বুড়িগঙ্গায় ডুবে মৃত্যু হয়েছে: পিবিআই

নৌকা-লঞ্চের সংঘর্ষে নৌকা থেকে পড়ে যান আওয়ামী লীগ নেতা ও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় (জাবি) ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক দুরন্ত বিপ্লব। ঢাকা থেকে বরিশালগামী মর্নিংসান -৫ লঞ্চের সঙ্গে ধাক্কায় নৌকাডুবে পানিতে তলিয়ে যান তিনি। তাকে খুন করা হয়নি। শনিবার  রাতে দুরন্ত বিপ্লবের মৃত্যুর ঘটনার করা ছায়া তদন্তকারী সংস্থা পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) সময় সংবাদকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

দুরন্ত বিপ্লব ৭ নভেম্বর নিখোঁজ হন। নিখোঁজোর পাঁচ দিন পর নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লায় বুড়িগঙ্গা নদীতে ভাসমান অবস্থায় তার মরদেহ উদ্ধার করা হয়। তার ময়নাতদন্ত শেষে চিকিৎসক তার শরীরে আঘাতের চিহ্ন পাওয়ার কথা জানান। দুরন্ত বিপ্লবকে মাথায় ও বুকে আঘাত করে হত্যা করা হয়েছে বলে সাংবাদিকদের জানান ময়নাতদন্তকারী চিকিৎসক মফিজুল উদ্দিন প্রধান।

কিন্তু ছায়া তদন্তকারী সংস্থা পিবিআই বলছে ভিন্ন কথা। তাদের তদন্তে বেরিয়ে এসেছে নৌকা থেকে লঞ্চের ধাক্কায় পড়ে গিয়ে বুড়িগঙ্গায় ডুবে মারা গেছেন বিপ্লব।

বিষয়টি নিয়ে ছায়া তদন্তকারী সংস্থা পিবিআই-এর ঢাকা জেলার উপপরিদর্শক সালেহ ইমরান শনিবার রাতে সময় সংবাদকে জানান, দুরন্ত বিপ্লব নৌকাডুবিতেই প্রাণ হারিয়েছেন বলে অনুসন্ধানে নিশ্চিত হয়েছেন।

সালেহ ইমরান আরও জানান, ৭ নভেম্বর বিকেল ৫টার পর কেরানীগঞ্জের বটতলা ঘাট থেকে বুড়িগঙ্গা পাড়ি দিয়ে সোয়ারীঘাট আসছিলেন বিপ্লব। ওই নৌকার মাঝি ছিলেন শামসু নামের একজন। একই সময়ে ঢাকা-বরিশাল রুটের মর্নিংসান-৫ লঞ্চটি সোয়ারীঘাট থেকে সদরঘাটের উদ্দেশে যাত্রা করে। দুরন্ত বিপ্লবসহ আরও চারজনকে বহন করা শামসু মাঝির নৌকাটি নদীর দুই-তৃতীয়াংশ পাড়ি দেয়ার পর মর্নিংসান-৫ লঞ্চটির ডান পাশে ধাক্কা লাগে। এতে উল্টে যায় নৌকাটি।

দুর্ঘটনার পর আশপাশের নৌকা গিয়ে চার যাত্রী ও শামসু মাঝিকে উদ্ধার করে। তবে নিখোঁজ হন একযাত্রী।

দুর্ঘটনার পর শামসু মাঝি তার গ্রামের বাড়ি ফরিদপুরে পালিয়ে গেলেও তাকে আটক করেছে পিবিআই। ডুবে যাওয়া নৌকার পাটাতনের নিচ থেকে বিপ্লবের জুতা উদ্ধারের কথা জানিয়েছে পিবিআই।

নিখোঁজের দিন বিপ্লব কেরানীগঞ্জের তার খামার থেকে বের হয়ে কোন রাস্তা দিয়ে সোয়ারীঘাটি গিয়েছিলেন তা ধরা পড়েছে সিসি ক্যামেরার ফুটেজে। সেসব ফুটেজ এসেছে সময় সংবাদের হাতে।

ঘটনার দিন বিকেল ৪টা ৪৭ মিনিটে দুরন্ত বিপ্লব নিজের খামার থেকে ঢাকার উদ্দেশে বের হন। তার খামারের পাশের একটি পেট্রল পাম্পের সিসিটিভি ক্যামেরায় এ দৃশ্য ধরা পড়ে। ওই ফুটেজে দেখা গেছে, দুরন্ত বিপ্লবের পরনে ছিল পাঞ্জাবি ও প্যান্ট, পায়ে ছিল চামড়ার স্যান্ডেল। হেঁটেই তিনি কোনাখোলা মোড়ের অটোরিকশা স্ট্যান্ডে আসেন। আরেকটি সিসিটিভি ফুটেজে দেখা যায়, দুরন্ত বিপ্লব অটোরিকশা স্ট্যান্ডে পৌঁছান ৪টা ৫৫ মিনিটে। এরপর বিল্লাল নামের একজনের অটোরিকশায় চড়ে জিঞ্জিরার বটতলা ঘাটে পৌঁছান বিকেল ৫টা ১৭ মিনিটে। ঘাট এলাকার একটি সিসিটিভি ফুটেজে দুরন্ত বিপ্লবকে দেখা গেছে বিকেল ৫টা ২৭ মিনিটে।

তদন্ত কর্মকর্তা সালেহ ইমরান বলেন, ‘দুরন্ত বিপ্লব ঘাট থেকে শামসু নামে এক মাঝির নৌকায় চড়েন। এরপর লঞ্চের ধাক্কায় তার নৌকাটি ডুবে যায়। নৌকার মাঝি আমাদেরকে বলেছেন, চার যাত্রীকে উদ্ধার করা সম্ভব হলেও একজন ডুবে যান।’

এদিকে এই ঘটনায় রোববার সকালে সংবাদ সম্মেলন ডেকেছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ।

এসএইচ-২৩/১৯/২২ (ন্যাশনাল ডেস্ক)