রিজার্ভ নামল ২৯ বিলিয়ন ডলারে, সাত বছরে সর্বনিম্ন

এশিয়ান ক্লিয়ারিং ইউনিয়নের (আকু) কাছে মার্চ-এপ্রিল মাসের দায় হিসেবে ১১৮ কোটি ডলার পরিশোধ নিষ্পত্তির পর দেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ কমে ২৯ বিলিয়ন ডলারের ঘরে নেমেছে। রিজার্ভের এই পরিমাণ গত সাত বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন। আর গত এক বছরে রিজার্ভ কমেছে ১৪ বিলিয়ন ডলার।

গত রোববার রিজার্ভ ছিল ৩০ দশমিক ৯৮ বিলিয়ন বা ৩ হাজার ৯৮ কোটি ডলার। সোমবার আকুর বিল পরিশোধের পর রিজার্ভ কমে দাঁড়ায় ২৯ দশমিক ৮ বিলিয়ন বা ২ হাজার ৯৮০ কোটি ডলারে।

এর আগে ২০১৫-১৬ অর্থবছর শেষে রিজার্ভ ছিল ৩০ দশমিক ৩৫ বিলিয়ন ডলার। আর গত বছরের একই সময়ে রিজার্ভ ছিল ৪৪ দশমিক ২০ বিলিয়ন ডলার।

বাংলাদেশ, ভুটান, ভারত, ইরান, মালদ্বীপ, মিয়ানমার, নেপাল ও পাকিস্তানের মধ্যকার লেনদেনের দায় পরিশোধ করা হয় আন্তঃদেশীয় লেনদেন নিষ্পত্তি ব্যবস্থা—আকু’র মাধ্যমে। চরম অর্থনৈতিক দুরাবস্থার কারণে গত অক্টোবরে আকু থেকে নিজেদের প্রত্যাহার করে নিয়েছে শ্রীলঙ্কা। বাকি দেশগুলো প্রতি দুই মাস অন্তর নিজেদের মধ্যকার দায় নিষ্পত্তি করে।

গত মার্চে আকুতে জানুয়ারি-ফেব্রুয়ারির ১ দশমিক ০৫ বিলিয়ন ডলার, গত নভেম্বর-ডিসেম্বরে ১ দশমিক ২ বিলিয়ন, সেপ্টেম্বর-অক্টোবরে ১ দশমিক ৩২ বিলিয়ন, মে-জুন সময়ে ১ দশমিক ৯৬ বিলিয়ন এবং জুলাই-আগস্টে ১ দশমিক ৭৫ বিলিয়ন ডলার পরিশোধ করা হয়েছে।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্যানুযায়ী, বছরখানেক ধরে রিজার্ভ কমার ধারায় রয়েছে। এক বছরের ব্যবধানে রিজার্ভ কমেছে প্রায় ১৪ বিলিয়ন ডলার। অবশ্য এর বড় অংশই রিজার্ভ থেকে ডলার বিক্রি করার কারণে।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য বলছে, চলতি অর্থবছরের শুরু থেকে গত ৩ মে পর্যন্ত ব্যাংকের কাছে ১২ দশমিক ৩৫ বিলিয়ন ডলার বিক্রি করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এর আগে ২০২১-২২ অর্থবছরেও ৭ দশমিক ৬২ বিলিয়ন ডলার বিক্রি করা হয়েছিল। মূলত সরকারি কেনাকাটা ও নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের আমদানি দায় পরিশোধে রিজার্ভ থেকে ডলার বিক্রি করা হচ্ছে। করোনাভাইরাস মহামারির মধ্যে আমদানি কম থাকার পাশাপাশি উচ্চ রেমিট্যান্স প্রবাহের কারণে ২০২১ অর্থবছরে দেশের ব্যাংকগুলো থেকে প্রায় ৮ বিলিয়ন ডলার কিনেছিল বাংলাদেশ ব্যাংক।

যদিও আইএমএফের শর্ত অনুযায়ী, আগামী ৩০ জুনের মধ্যে প্রকৃত রিজার্ভ ২৪ বিলিয়ন বা ২ হাজার ৪৪৬ কোটি ডলারে উন্নীত করতে হবে। সেইসঙ্গে আগামী সেপ্টেম্বরে বাংলাদেশের রিজার্ভ ২৫ বিলিয়ন ডলার বা ২ হাজার ৫৩০ কোটি ডলার এবং ডিসেম্বরে ২৬ বিলিয়ন বা ২ হাজার ৬৮০ ডলারের নিচে থাকতে পারবে না।

আইএমএফের মানদণ্ড অনুযায়ী, রিজার্ভের অর্থে বিদেশে বিভিন্ন বন্ড, মুদ্রা ও স্বর্ণে বিনিয়োগ; রপ্তানি উন্নয়ন তহবিল গঠন; বাংলাদেশ বিমানের উড়োজাহাজ কেনা বাবদ সোনালী ব্যাংককে ধার; পায়রা বন্দরের রাবনাবাদ চ্যানেলের খনন কর্মসূচিতে অর্থ দেওয়া এবং শ্রীলঙ্কাকে অর্থ ধার দেওয়া বাবদ মোট ৮২০ কোটি ডলার দেওয়া হয়েছে। আইএমএফ সব সময়ই বলে আসছে, এগুলো বাদ দিয়ে প্রকৃত রিজার্ভের হিসাব রাখতে হবে। আইএমএফের মতে, এগুলো বাদ দিলে প্রকৃত ব্যবহারযোগ্য রিজার্ভ দাঁড়াবে ২ হাজার ১৭০ কোটি ডলারে।

এসএইচ-২৪/০৮/২৩ (ন্যাশনাল ডেস্ক)