বিএনপির ডাকা হরতালে বাসে আগুন,গাড়ি ভাঙচুর, গুলি, আহত ১০

বিএনপির ডাকা হরতালের কারণে ঢাকার গাবতলী বাসটার্মিনাল থেকে দূরপাল্লার বাস ছাড়ছেন না বলে জানিয়েছেন কাউন্টার মালিকেররা। তারা জানান, যাত্রী সংকটের কারণে আজ একটিও বাস ছাড়তে পারেননি।
রোববার গাবতলী বাস টার্মিনালে দূরপাল্লার কোনো বাসও এসে পৌঁছায়নি বলে জানান বিভিন্ন বাস কাউন্টারের কর্মচারীরা।

সকাল সাড়ে ৯টা থেকে সোয়া ১০টা পর্যন্ত গাবতলী বাস টার্মিনাল এলাকা ঘুরে দূরপাল্লার কোনো বাস আসতে ও ছেড়ে যেতে দেখা যায়নি। দুএকজন অপেক্ষারত যাত্রী থাকলেও অধিকাংশ কাউন্টার বন্ধ দেখা গেছে।

বাস না ছাড়ার বিষয়ে কথা বলেছে অন্তত ৫ জন কাউন্টার মাস্টারের সঙ্গে। তাদের প্রত্যেকে জানান, যাত্রী সংকটের কারণে বাস ছাড়ছেন না।

এদিকে মোটরসাইকেল বহর নিয়ে সকাল সাড়ে ১০টার দিকে আওয়ামী লীগ সমর্থিত এক দল যুবক কাউন্টারে কাউন্টারে ঘুরে গাড়ি ছাড়ার জন্য নির্দেশনা দেন।

হরতালকে কেন্দ্র করে বিএনপির কোনো সমর্থককে গাবতলী এলাকায় প্রকাশ্যে দেখা যায়নি। তবে আওয়ামী লীগ সমর্থিত বিপুল সংখ্যক নেতাকর্মী গাবতলী বাসটার্মিনালের সামনে অবস্থান করছিলেন।

ঢাকার মোহাম্মদপুর, তাঁতিবাজার ও বায়তুল মোকাররমের দক্ষিণ গেট এলাকায় তিনটি বাসে আগুন দিয়েছে দুর্বৃত্তরা ।

রোববার সকাল ৯টা থেকে সাড়ে ১০টা পর্যন্ত এসব বাসে আগুন দেওয়া হয় বলে জানিয়েছে ফায়ার সার্ভিস । এতে কোনো হতাহতের খবর জানা যায়নি।

ফায়ার সার্ভিস বলছে, মোহাম্মদপুরে টাউন হল বাজারের কাছে ‘পরিস্থান পরিবহন’ নামের একটি বাসে দুর্বৃত্তরা আজ সকাল ১০টা ২২ মিনিটের দিকে আগুন লাগিয়ে দেয়। পরে ফায়ার সার্ভিস আগুন নিভিয়েছে।

এদিকে তাঁতিবাজার মোড়ে সকাল ১০টা ২৮ মিনিটের দিকে বিহঙ্গ পরিবহনের একটি বাসে দুর্বৃত্তরা আগুন দিয়েছে বলে জানিয়েছে ফায়ার সার্ভিস। পরে ফায়ার সার্ভিস আগুন নেভায়।

এর আগে সকাল ৯টার পরে বায়তুল মোকাররমের দক্ষিণ গেট এলাকায় একটি বাসে দুর্বৃত্তরা আগুন দিয়েছে বলে ফায়ার সার্ভিস জানিয়েছে। এতে কেউ হতাহত হওয়ার খবর পাওয়া যায়নি। বাসটি শিকড় পরিবহনের। ফায়ার সার্ভিস সকাল সোয়া নয়টার দিকে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে। এ সময় বাসের ভেতরে কেউ ছিলেন না।

শনিবার দিবাগত রাত সাড়ে তিনটার দিকে ঢাকার ডেমরার দেইলা এলাকায় দুর্বৃত্তরা একটি বাসে আগুন লাগিয়েছে বলে জানিয়েছে ফায়ার সার্ভিস । এতে ওই বাসের চালকের সহকারীর মৃত্যু হয়েছে। চালকের আরেকজন সহকারী দগ্ধ হয়েছেন। তাঁরা দুজনেই বাসের ভেতর ঘুমিয়ে ছিলেন

এদিকে মানিকগঞ্জে যাত্রীবেশে গাড়িতে উঠে কয়েক ব্যক্তি অন্য যাত্রীদের নামিয়ে দেন। পরে গাড়িতে পেট্রল ঢেলে আগুন লাগিয়ে দেন তাঁরা। রোববার সকালে মানিকগঞ্জ সদর উপজেলার তরা এলাকায় ঢাকা-আরিচা মহাসড়কে এ ঘটনা ঘটে।

মানিকগঞ্জ সদর থানা-পুলিশ, ফায়ার সার্ভিস ও গাড়িটির চালকের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, সকাল পৌনে আটটার দিকে মানিকগঞ্জের শিবালয় উপজেলার আরিচা বাসস্ট্যান্ড এলাকা থেকে কয়েক যাত্রী নিয়ে স্বপ্ন পরিবহনের একটি গাড়ি মানিকগঞ্জ বাসস্ট্যান্ড এলাকার দিকে যাত্রা করে। লোকাল গাড়িটি ঢাকা-আরিচা মহাসড়কের বিভিন্ন স্টোপেজে যাত্রী ওঠানামা হয়। মহাসড়কের ঘিওর উপজেলার বানিয়াজুরী বাসস্ট্যান্ড থেকে তিন ব্যক্তি যাত্রীবেশে গাড়িতে ওঠেন। এরপর মানিকগঞ্জ জেলা সদরের তরা সেতুর পূর্ব প্রান্ত থেকে আরও তিন-চার ব্যক্তি গাড়িটিতে ওঠেন। সকাল সাড়ে আটটার দিকে মানিকগঞ্জ সদর উপজেলার তরা এলাকায় ছয় থেকে সাত ব্যক্তি গাড়ির চালককে গাড়ি থামাতে বলেন। পরে সব যাত্রী নামিয়ে গাড়িতে পেট্রল ঢেলে আগুন ধরিয়ে দেন তাঁরা।

মানিকগঞ্জ ফায়ার সার্ভিস স্টেশনের জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা মো. জহিরুল ইসলাম বলেন, খবর পেয়ে পৌনে নয়টার দিকে মানিকগঞ্জ ফায়ার সার্ভিসের দুটি ইউনিট ঘটনাস্থলে পৌঁছে আগুন নেভাতে শুরু করে। সকাল নয়টার দিকে বাসের আগুন পুরোপুরি নিভে যায়। ততক্ষণে বাসটির অধিকাংশ আগুনে পুড়ে গেছে। প্রাথমিকভাবে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ এবং হতাহতের খবর পাওয়া যায়নি।

সরেজমিনে গাড়িটিতে আগুন জ্বলতে দেখা গেছে। সদর থানার পুলিশ ও জেলা পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের ঘটনাস্থলে দেখা যায়। এরপর ফায়ার সার্ভিসের সদস্যরা আগুন নেভানোর কাজে যুক্ত হন। ঘটনাস্থলের উভয় পাশে স্থানীয় উৎসুক লোকজন জড়ো হন। স্থানীয় দীঘি ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরাও ঘটনাস্থলে আসেন।

গাড়িটির চালক আনোয়ার হোসেন সংবাদমাধ্যমকে বলেন, তরা এলাকায় থামানোর পর বাসের অন্য যাত্রীদের নামিয়ে দিয়ে ছয় থেকে সাত যুবক পেট্রল ঢেলে বাসে আগুন ধরিয়ে দেন। তাৎক্ষণিক বাস থেকে তিনি ও তাঁর সহকারী নেমে নিরাপদ স্থানে দাঁড়ান। পরে দুই থেকে তিনটি মোটরসাইকেলে করে দুর্বৃত্তরা পালিয়ে যায়।

মানিকগঞ্জ সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আবদুর রউফ সরকার সংবাদমাধ্যমকে বলেন, কে বা কারা বাসটিতে আগুন দিয়েছে, তা নিশ্চিত হওয়া যায়নি। তবে বাসের চালক জানিয়েছেন, অগ্নিসংযোগকারীদের দেখলে তিনি চিনবেন। তবে এ ঘটনার সঙ্গে কারা জড়িত, তা তদন্ত করে দেখা হবে। এ ঘটনায় আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।

অপরদিকে কিশোরগঞ্জে বিএনপির ডাকা হরতালে রোববার সকালে দলটির নেতা-কর্মীদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষ এবং পাল্টাপাল্টি ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। এতে পুলিশসহ বেশ কয়েকজন আহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশ ১৪টি ফাঁকা গুলি ও ২টি কাঁদানে গ্যাসের শেল নিক্ষেপ করেছে। এ সময় ইটনা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) গাড়ি ভাঙচুর করা হয়।

পুলিশ, প্রত্যক্ষদর্শী ও বিএনপি কর্মীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, রোববার সকাল সাড়ে ছয়টার দিকে জেলা শহরের পুরাতন থানা রেললাইনের কাছে পুলিশের সঙ্গে বিএনপি-ছাত্রদলের নেতা-কর্মীদের মধ্যে সংঘর্ষ হয়। এ সময় হরতাল পালনকারীরা পুলিশকে লক্ষ্য করে রেললাইনের পাথর ও ইটপাটকেল নিক্ষেপ করেন। পুলিশ পাল্টা ১৪টি ফাঁকা গুলি ও কাঁদানে গ্যাসের শেল ছোড়ে।

পুলিশের দাবি, হরতাল পালনকারীরা পুলিশের টহলরত গাড়ি লক্ষ্য করে পাথর নিক্ষেপ করেন। এরপর তাঁদের ছত্রভঙ্গ করতে পুলিশ গুলি ছোড়ে।

সকাল ৬টা থেকে সাড়ে ১০টা পর্যন্ত কিশোরগঞ্জ জেলা শহরের শোলাকিয়া, রেলস্টেশন, একরামপুর, পুরাতন থানা, স্টেশন রোড, কালীবাড়ি মোড়, গাইটাল ফার্মের মোড়, গাইটাল বাসস্ট্যান্ড, আখড়াবাজার, নগুয়া ও হয়বতনগর এলাকা ঘুরে দেখা যায়, মোড়ে মোড়ে পুলিশের টহল। এর মধ্যে স্টেশন রোডের সার্কিট হাউসের পাশে, একরামপুর, নগুয়াসহ কয়েকটি এলাকায় হরতাল পালনকারীরা টায়ারে আগুন ধরিয়ে গাড়ি চলাচলে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে। তবে পুলিশকে তাৎক্ষণিকভাবে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা করতে দেখা যায়। সার্কিট হাউস এলাকায় দুটি টায়ারে আগুন দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গে একদল পুলিশ গিয়ে পা দিয়ে রাস্তা থেকে টায়ার সরিয়ে আগুন নিভিয়ে ফেলে।

এ বিষয়ে কথা বলতে জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক ও জেলা ছাত্রদলের সভাপতিসহ বেশ কয়েকজন বিএনপি নেতার মুঠোফোন নম্বরে কল দিলে সেগুলো বন্ধ পাওয়া যায়।

কিশোরগঞ্জ সদর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ দাউদ বলেন, পুলিশের টহলরত গাড়িকে লক্ষ্য করে দুষ্কৃতকারীরা অতর্কিত রেললাইনের পাথর ও ইটপাটকেল নিক্ষেপ করেছে। এতে তিনিসহ অন্তত ১০ জন পুলিশ সদস্য আহত হয়েছেন। এ ছাড়া দুষ্কৃতকারীরা ইটনার ইউএনও ও দুদকের উপপরিচালকের গাড়িতেও হামলা চালায়।

ইটনা উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. আবু রিয়াদ বলেন, তিনি শনিবার কিশোরগঞ্জে চিকিৎসক দেখাতে এসেছিলেন। রোববার সকালে তাঁকে করিমগঞ্জে বালিখলা ফেরিঘাটে নামিয়ে গাড়ি আবার কিশোরগঞ্জে আসার পথে শোলাকিয়া এলাকায় গাড়িতে হামলা হয়। গাড়ির সামনের ও পেছনের কাচ ভেঙে ফেলা হয়েছে। তিনি এ বিষয়ে আইনগত ব্যবস্থা নেবেন।

হরতালের কারণে সকাল ১০টা পর্যন্ত কিশোরগঞ্জ জেলা শহরে যানবাহনের চলাচল কম ছিল। সকাল সাড়ে সাতটা থেকে আটটা পর্যন্ত কিশোরগঞ্জ গাইটাল বাসস্ট্যান্ড এলাকায় অবস্থান করে দেখা যায়, বাসগুলো সারিবদ্ধভাবে দাঁড়ানো। যাত্রীসহ অনেক মানুষের জটলা বাসস্ট্যান্ডে। এ সময় কয়েকজন জানান, সকাল থেকে কোনো বাস ছেড়ে যায়নি। যে কারণে দূরদূরান্ত থেকে আসা অনেক যাত্রীকে ব্যাগ ও ল্যাগেজ নিয়ে ফিরে যেতে দেখা যায়।

তবে কিশোরগঞ্জ থেকে ট্রেনের চলাচল স্বাভাবিক আছে। সকাল সাড়ে ছয়টায় আন্তনগর এগারসিন্দুর এক্সপ্রেস ঢাকার উদ্দেশে কিশোরগঞ্জ থেকে ছেড়ে যায়।

করিমগঞ্জের কিরাটন থেকে গাইটাল বাসস্ট্যান্ডে আসা ওমর নাসিফ নামের একজন এইচএসসি পরীক্ষার্থী বলেন, আজ সকালে নরসিংদী গিয়ে কলেজের ক্লাস করার জন্য বাসস্ট্যান্ডে এসেছিলেন তিনি। এসে দেখেন সব বাস বন্ধ। মাঝেমধ্যে একটা করে সিএনজি চলছে। তবে দ্বিগুণেরও বেশি ভাড়া হাঁকছেন চালকেরা। আগে যেখানে ১০০ টাকা ভাড়া ছিল, এখন ২০০ বা এর বেশি নিচ্ছে। এ জন্য ঘণ্টাখানেক সেখানে দাঁড়িয়ে থেকে উপায় না পেয়ে বাড়ি ফিরে যাচ্ছেন তিনি।

এদিকে নারায়ণগঞ্জ শহরের চাষাঢ়ায় হরতালের সমর্থনে মিছিলের জন্য জড়ো হওয়ার সময় বিএনপির সঙ্গে পুলিশের পাল্টপাল্টি ধাওয়ার ঘটনা ঘটেছে। এ সময় পুলিশ শটগানের গুলি ছুড়লে বিএনপির লোকজনও ইট-পাটকেল ছোড়ে৷ রোববার সকাল পৌনে আটটার দিকে নারায়ণগঞ্জ প্রেসক্লাব এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।

ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে নারায়ণগঞ্জ সদর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আনিচুর রহমান মোল্লা বলেন, ‘হরতালকে কেন্দ্র করে কোনো প্রকার অরাজকতা যাতে না হয় সেজন্য পুলিশ সতর্ক অবস্থানে আছে৷ বিএনপির কিছু নেতাকর্মী প্রেসক্লাবের সামনে জড়ো হয়ে গাড়ি ভাঙচুরের চেষ্টা করলে পুলিশ তাদের ছত্রভঙ্গ করে দেয়৷ এ সময় তারা পুলিশের দিকে ইট-পাটকেল ছুড়লে পুলিশ তাদের ছত্রভঙ্গ করতে শটগানের কয়েক রাউন্ড গুলি ছোড়ে।’

এর আগে সকাল সাড়ে ছয়টার দিকে গণতন্ত্র মঞ্চের নেতাকর্মীরা মিছিল করলে তাদের সঙ্গে পুলিশের ধস্তাধস্তি হয়৷ এ সময় পুলিশ গণতন্ত্র মঞ্চের ব্যানার কেড়ে নিয়ে একজনকে আটক করে৷

এদিকে সারাদেশে বিএনপির ডাকা হরতালের সমর্থনে মিছিল বের করলে সেখান থেকেই সিদ্ধিরগঞ্জ থানা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক ও নাসিক ২নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর ইকবালসহ অন্তত ছয়জনকে আটক করা হয়। এর আগে শনিবার ঢাকায় বিএনপির মহাসমাবেশে সংঘর্ষের কারণে দলটির পক্ষ থেকে আজ সারাদেশে হরতালের কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়।

এরই পরিপ্রেক্ষিতে ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ লিংক রোডের পাসপোর্ট অফিস সংলগ্ন এলাকায় মিছিল নিয়ে বের হন সিদ্ধিরগঞ্জ থানা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক ইকবালসহ বেশকিছু নেতাকর্মী। এ সময় ফতুল্লা থানা পুলিশ ইকবালসহ মোট ছয়জনকে আটক করে।

বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন ফতুল্লা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ নুরে আযম মিয়া। তিনি বলেন, ‌‌‘রবিবার সকালে হরতালের সমর্থনে ঢাকা নারায়ণগঞ্জ লিং রোডের পাসপোর্ট অফিসের সামনে একটি মিছিল বের হয়। সেখান থেকে আমরা ছয়জনকে আটক করি। যেকোনো ধরনের নাশকতা এড়াতে পুলিশ নারায়ণগঞ্জের সব জায়গায় সতর্ক অবস্থানে রয়েছে।’

বিএনপি-জামায়াতের ডাকা হরতালের সমর্থনে রোববার সকাল সাড়ে আটটার দিকে বগুড়া শহরের নওয়াববাড়ি সড়কে জেলা বিএনপির কার্যালয় থেকে কিছু নেতা-কর্মী মিছিল বের করেন। সদর পুলিশ ফাঁড়ির সামনে মিছিলে বাধা দেয় পুলিশ। বাধা অতিক্রম করে মিছিল রানার প্লাজার দিকে এগোনোর চেষ্টা করলে পুলিশ শটগানের গুলি ছুড়ে নেতা-কর্মীদের ছত্রভঙ্গ করে দেয়।

পরে হরতাল-সমর্থকেরা ফতেহ আলী বাজারের সামনে গালাপট্টি সড়ক মোড়ে অবস্থান নেন। এ সময় দু-তিনটি ককটেল বিস্ফোরিত হয়। পুলিশ এ সময় মুন হোমিও হলের সামনে গালাপট্টি মোড়ে অবস্থান নেয়। ১০০ গজের মধ্যে হরতাল–সমর্থক এবং হরতালবিরোধীদের মুখোমুখি অবস্থানে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। পরে পুলিশ এসে কাঁদানে গ্যাসের শেল নিক্ষেপ করে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।

এর আগে শহরের সাতমাথায়, পুলিশ সতর্কাবস্থায়। সকাল সাতটার দিকে সাতমাথায় জিলা স্কুল ফটকসংলগ্ন এলাকায় অতিরিক্ত পুলিশ সুপার স্নিগ্ধ আকতারের নেতৃত্বে অর্ধশতাধিক পুলিশ ও গোয়েন্দা পুলিশকে মহড়া দিতে দেখা যায়। র‍্যাব-১২ বগুড়া ক্রাইম প্রিভেনশন স্পেশাল কোম্পানির অধিনায়ক মীর মনির হোসেনের নেতৃত্বে সাড়ে সাতটার দিকে সাতমাথায় সশস্ত্র মহড়া দেন র‍্যাব সদস্যরা। এ সময় রাজশাহী অভিমুখে ঝটিকা পরিবহনের একটি বাস এবং জয়পুরহাট অভিমুখে আরেকটি যাত্রীবাহী মিনিবাস ছেড়ে যেতে দেখা যায়। তবে জয়পুরহাটগামী বাসটি সদর উপজেলার গোকুল এলাকায় ও রাজশাহী অভিমুখী বাসটি শহরতলির শাকপালা এলাকায় হরতাল-সমর্থকদের বাধার মুখে পড়ে।

সকাল সাতটার পর থেকে সাতমাথার সড়কগুলোয় বাড়তে থাকে রিকশা ও অটোরিকশা চলাচলের চিত্র। সকাল আটটা পর্যন্ত শহরে হরতাল–সমর্থকদের কোনো ধরনের পিকেটিং চোখে পড়েনি। তবে শহরতলির বারপুর, মাটিডালি, বনানী, শাকপালাসহ শহরের প্রবেশপথে যানবাহন চলাচলে বাঁধা দিয়েছে হরতাল–সমর্থকেরা। বেলা ১১টা পর্যন্ত শহরের দোকানপাট খোলেনি, ব্যক্তিগত গাড়ি ও বাস, ট্রাকসহ ভারী যানবাহন চলাচল করেনি। স্কুল-কলেজ, অফিস-আদালত, ব্যাংক-বিমা খোলা থাকলেও মানুষের উপস্থিতি অন্যদিনের তুলনায় ছিল কম।

এছাড়া রংপুরের বদরগঞ্জেও হরতাল সমর্থকদের সাথে আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের সংঘর্ষ হয়েছে। এ সময় দু’পক্ষের ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটেছে। এ ঘটনায় মিতা সিনেমাহল এলাকায় উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। পরে পুলিশ লাঠিচার্জ করে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।

কুমিল্লা নগরীর কান্দিরপাড়ে হরতাল সমর্থনে বের হওয়া মিছিল পুলিশি বাধার মুখে পড়ে। এ সময় ধাওয়া দিয়ে এবং টিয়ারশেল ছুড়ে তা ছত্রভঙ্গ করে দেয় পুলিশ। এছাড়া মিছিল হয়েছে চৌদ্দগ্রাম ও দেবিদ্বারেও।

লক্ষ্মীপুরের ইটেরপুল এলাকায় মিছিল বের করে বিএনপি। গাছের গুঁড়ি ফেলে সড়ক অবরোধ করে তারা। এছাড়া জকসিন ও মান্দারীসহ জেলার বিভিন্ন স্থানেও হরতাল সমর্থনে মিছিল করেছে বিএনপি।

ফরিদপুরের ভাঙ্গায় একটি ট্রাকে আগুন ও ককটেল বিস্ফোরণের খবর পাওয়া গেছে। এ ঘটনায় নাশকতার অভিযোগে ৩৭ জন আটক করেছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা।

এছাড়া গাজীপুরের হোতাবাড়িতেও কাভার্ডভ্যানে আগুন দেয়ার খবর পাওয়া গেছে। বাস পোড়ানা হয়েছে মানিকগঞ্জের ঢাকা-আরিচা মহাসড়কেও। এছাড়া যশোর, রংপুরসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে বিচ্ছিন্ন সহিংসতার ঘটনা ঘটেছে।

এসএইচ-০১/২৯/২৩ (ন্যাশনাল ডেস্ক)