‘মেয়ে বসে অপেক্ষা করে বাবা কখন আসবে’

‘ও পেশাগত দায়িত্ব পালন করতে ঘর থেকে বের হয়েছিল। ও তো কখনো রাজনৈতিক দলের সঙ্গে, মিছিল-মিটিংয়ের সঙ্গে জড়িত ছিল না। তাহলে কেন ওকে নৃশংসভাবে হত্যা করল বিএনপি-জামায়াতের লোকেরা।’

কথাগুলো বলছিলেন গত ২৮ অক্টোবর ঢাকায় বিএনপির মহাসমাবেশ ঘিরে পুলিশের সঙ্গে দলটির নেতা-কর্মীদের সংঘর্ষে নিহত হওয়া পুলিশ কনস্টেবল মো. আমিরুল ইসলাম ওরফে পারভেজের (৩৩) স্ত্রী রুমা আক্তার। তিনি আরও বলেন, ‘ওর (আমিরুল) সুন্দর একটা পরিবার ছিল। পাখির মতো একটা মেয়ে। সেই মেয়ে আজও বসে থাকে, তার বাবা কখন আসবে। বলে, চলো আমরা আব্বুকে নিয়ে আসি।’

রোববার ঢাকার শিল্পকলা একাডেমির জাতীয় নাট্যশালা মিলনায়তনে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার দিবস উপলক্ষে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে রুমা আক্তার এসব কথা বলেন। এ সময় তাঁর সাত বছরের মেয়ে তানহা ইসলামও উপস্থিত ছিল। সে–ও বাবাকে ফিরে পাওয়ার আকুতি জানায়।

মানবাধিকার লঙ্ঘন ও এর বিচারের দাবিতে অনুষ্ঠানটি আয়োজিত হয় ‘মায়ের কান্না ও অগ্নিসন্ত্রাসের আর্তনাদ’ ব্যানারে। এতে ১৯৭৫ সাল–পরবর্তী সময়ে বিভিন্ন ঘটনায় হত্যার শিকার বাংলাদেশ সেনা ও বিমানবাহিনীর কর্মকর্তাদের স্বজন এবং সাম্প্রতিককালে নাশকতার ঘটনায় নিহত ব্যক্তিদের পরিবারের সদস্য ও আহত ব্যক্তিদের বেশ কয়েকজন তাঁদের দুঃখ–দুর্দশার কথা তুলে ধরেন।

বক্তারা এসব ঘটনার জন্য প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান এবং বিএনপি ও জামায়াতকে অভিযুক্ত করে বিচার দাবি করেন।

অনুষ্ঠানে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী হাছান মাহমুদসহ আওয়ামী লীগের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতারা উপস্থিত ছিলেন। তবে তাঁরা কেউ বক্তব্য দেননি।

আওয়ামী লীগের নির্বাহী কমিটির সদস্য তারানা হালিম, শহীদ কর্নেল খন্দকার নাজমুল হুদার (১৯৭৫ সালের ৭ নভেম্বর হত্যা করা হয়) মেয়ে সংসদ সদস্য নাহিদ ইজাহার খান এবং শহীদ বুদ্ধিজীবী ডা. আলীম চৌধুরীর মেয়ে নুজহাত চৌধুরীর সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে কেবল ভুক্তভোগীরাই বক্তব্য দেন।

অনুষ্ঠানে একটি ভিডিও চিত্রের মাধ্যমে বিভিন্ন সময়ে ঘটে যাওয়া ওই সব ঘটনা তুলে ধরা হয়। এ ছাড়া অনুষ্ঠানস্থলে নাশকতার প্রতীকী বিভিন্ন বিষয় প্রদর্শন করা হয়।

সম্প্রতি বিএনপির ডাকা হরতালকে ঘিরে ঢাকার ডেমরা এলাকায় বাসে আগুনে প্রাণ হারান চালকের সহকারী আবু নাঈম। তাঁর মা অনুষ্ঠানে বলেন, ‘এমনভাবে আগুন, আমার ছেলের মুখটাই চেনা যায় না।’

২০১৩–১৪ সালে যেসব সহিংসতা হয়েছিল, তার শিকার হওয়া ব্যক্তিদের একজন নরসিংদীর শাহাদাত হোসেন জানান তাঁর দুঃখের কথা।

২০০৪ সালের ২১ আগস্ট আওয়ামী লীগের সমাবেশে গ্রেনেড হামলায় গুরুতর আহত নাসিমা ফেরদৌস বলেন, তিনি শরীরে অসংখ্য স্প্লিন্টার নিয়ে বেঁচে আছেন।

মাকসুদা পারভীনের বাবা ১৯৭৭ সালে বিমানবাহিনীর সার্জেন্ট ছিলেন। মাকসুদা বলেন, তাঁর বয়স যখন তিন বছর, তখন তিনি বাবাকে হারান। বাবার জন্য কাঁদতে কাঁদতে তাঁর ৪৭ বছর কেটেছে।

এসএইচ-০৮/১০/২৩ (ন্যাশনাল ডেস্ক)