স্বামী অক্ষম, ভাসুরের সাথে অবৈধ সম্পর্ক!

নাটোর শহরতলির তেবাড়িয়া এলাকার ওমর ফারুক মিঠু (৪০) হত্যার রহস্য উদঘাটন করেছে পুলিশ। পরকীয়ার কারণে ভাসুরের সঙ্গে মিলে মিঠুকে তার স্ত্রী আম্বিয়া বেগম (৩০) হত্যা করেছেন। পুলিশের কাছে ও আদালতে রোমহর্ষক এ হত্যাকাণ্ডের বর্ণনা দিয়েছেন আম্বিয়া।

গত বুধবার ওমর ফারুক মিঠুর মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। মিঠু তেবাড়িয়া এলকার আব্দুল্লাহর ছেলে।

মঙ্গলবার দুপুরে এক প্রেস ব্রিফিংয়ে নাটোরের পুলিশ সুপার লিটন কুমার সাহা এ হত্যাকাণ্ডের রহস্য উদঘাটনের দেন।

পুলিশ সুপার জানান, গত ৩ জুন ওমর ফারুক মিঠুর মরদেহ বাড়ির অদূর থেকে উদ্ধার করে পুলিশ। রাত সাড়ে ৩টার দিকে হঠাৎ করে মিঠুর স্ত্রী আম্বিয়া চিৎকার করে ওঠেন এবং বলেন- তার স্বামীকে কে বা করা হত্যা করে ফেলে রেখে গেছে। এ সময় আম্বিয়া জানান- মিঠুর বউ বাড়ি আছ নাকি বলে অজ্ঞাত লোক ডাকতে থাকে। তিনি দরজা খুলে দেখেন সেখানে কেউ নেই। অদূরেই তার স্বামীর মরদেহ পড়ে রয়েছে।

পুলিশ সুপার লিটন কুমার সাহা বলেন, এ ঘটনায় মিঠুর বাবা আব্দুল্লাহ বাদী হয়ে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। এরপর পুলিশ তদন্ত নামে। তথ্য-প্রযুক্তির মাধ্যমে গোপন অনুসন্ধান, লাশের সুরতহাল রিপোর্ট, লাশের অবস্থান, ঘটনার পারিপার্শিকতা, পারিবারিক বিষয় বিশ্লেষণ ও আম্বিয়ার চারিত্রিক বিষয়টি জানতে পেরে তাকে আটক করে পুলিশ। পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে বেরিয়ে আসে রোমহর্ষক এ হত্যকাণ্ডের প্রকৃত চিত্র।

জিজ্ঞাসাবাদে আম্বিয়া জানান, তিনি মিঠুর তৃতীয় স্ত্রী। তাদের চার বছর আগে বিয়ে হয়েছে। কিন্তু মিঠু ছিল শারীরিকভাবে অক্ষম। এ অবস্থায় মিঠুর বড় ভাই ভাসুর আব্দুল কাদেরের সঙ্গে তার অবৈধ সম্পর্ক গড়ে ওঠে। মিঠু ইটভাটার শ্রমিক হিসেবে কাজ করায় প্রায়ই বাড়ির বাইরে রাত কাটাতেন। এই সুযোগে আম্বিয়া ও কাদের মিলিত হতেন। একপর্যায়ে কাদের আম্বিয়াকে বিয়ের প্রস্তাব দেন। কিন্তু মিঠু বেঁচে থাকলে তা সম্ভব নয়। এ কারণে দুজন মিলে মিটুকে হত্যার পরিকল্পনা করেন।

পরিকল্পনা অনুযায়ী ঘটনার দিন রাতে মিঠুকে পান্তা ভাতের সঙ্গে তিনটি ঘুমের ওষুধ মিশিয়ে খেতে দেয়া হয়। এরপর মিঠু গভীর ঘুমে তলিয়ে গেলে রাত দেড়টার দিকে আব্দুল কাদের ঘরে ঢুকে মিঠুর গলায় গামছা দিয়ে ফাঁস দেন। এ সময় আম্বিয়া মিঠুর দুই পা চেপে ধরে থাকে।

একপর্যায়ে মিঠু মারা গেলে মরদেহ ঘর থেকে বের করে নিয়ে যাওয়ার পথে রাস্তায় একটি গাড়ির লাইট দেখে তারা ভড়কে যান। এ সময় বাড়ির অদূরেই মিঠুর মরদেহ ফেলে রেখে তারা বাড়িতে ফিরে আসেন। এরপর মিঠুর স্ত্রী চিৎকার করে তার স্বামীকে হত্যা করা হয়েছে বলে সকলকে জানান।

পুলিশ সুপার লিটন কুমার সাহা বলেন, আম্বিয়ার স্বীকারোক্তি অনুযায়ী পুলিশ আব্দুল কাদেরকে (৪২) গ্রেফতার করে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠিয়েছে। অপরদিকে আম্বিয়া হতাকাণ্ডের কথা স্বীকার করে আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দী দিয়েছেন।

প্রেস ব্রিফিংয়ে অন্যান্যের মধ্যে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আকরামুল হোসেন, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) আবুল হাসনাত, নাটোর সদর থানা পুলিশের ওসি জাহাঙ্গীর আলম ও ডিবির ওসি আনোয়ারুল ইসলাম উপস্থিত ছিলেন।

বিএ-১২/০৯-০৬ (উত্তরাঞ্চল ডেস্ক)