শিক্ষার্থীদের বাকি খাইয়ে নিঃস্ব রাবির ‘বাবু ভাই’

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) শিক্ষার্থীদের বাকি খাইয়ে বিপদে পড়েছেন মানিক হোসেন বাবু নামের এক হোটেল ব্যবসায়ী। শিক্ষার্থীদের কাছে প্রায় আড়াই লক্ষ টাকার মতো বাকি পড়ে আছে তাঁর। ‘বাধ্য’ হয়ে গত কয়েকদিন থেকেই দোকান বন্ধ রেখে ধারদেনা করে অতি কষ্টে দিনাতিপাত করছেন তিনি। তাঁর দাবি, বাকি খাওয়া শিক্ষার্থীদের অধিকাংশই ছাত্রলীগের ‘ছেলেপেলে’।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, মানিকের বাড়ি বিশ্ববিদ্যালয় সংলগ্ন মেহেরচণ্ডী এলাকায়। ২০০০ সাল থেকে তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ জিয়াউর রহমান হলের সামনে একটি খাবারের দোকান চালিয়ে আসছেন। শিক্ষার্থীরা তাঁকে ‘বাবু ভাই’ বলে ডাকেন। আশেপাশের প্রায় পাঁচটি হলের শিক্ষার্থীরা তাঁর দোকানে খেয়ে থাকেন। অত্যধিক বাকি পড়ায় গত বুধবার তিনি তাঁর খাবারের দোকানটি বন্ধ করে দিয়েছেন। দোকান বন্ধ হওয়ায় দোকানে কাজ করা ১৩ জন কর্মচারীও কাজ হারিয়েছে।

বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা যায়, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে গত ১২ নভেম্বর ছাত্রলীগের কমিটি হওয়ার কথা ছিল। এ কমিটি হওয়ার আগে দলবল নিয়ে ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা খেয়েছেন। আর মানিককে বলেছেন, কমিটি হলে তাঁরা একেবারে পুরো টাকা দিয়ে দেবেন। তবে ১২ নভেম্বর সেই কমিটি হয়নি। আর টাকাও পাচ্ছেন না মানিক। অনেকে এ মাস পর্যন্ত সময় নিয়েছেন টাকা দেবেন বলে। তাঁদের মধ্যে রাজনীতির বাইরে সাধারণ শিক্ষার্থীরাও আছেন। এর আগে মানিকের দোকান থেকে ছাত্রলীগের দুই নেতা মাসিক চাঁদা তুলতেন। চলতি বছর জানাজানির পর সেটা বন্ধ হয়ে যায়।

হঠাৎ দোকান বন্ধের বিষয়ে মানিক হোসেন বাবু বলেন, ‘করোনার পর থেকে ৩-৪ জন আছে যারা কোনো টাকাই দেয়নি। তবে ছাত্রলীগের সম্মেলনের কারণে বেশি বাকি পড়ে যায়। ছাত্রলীগের ছেলেরা বলে সম্মেলনের পরে টাকা দেবে। কিন্তু সম্মেলন স্থগিত হয়ে যাওয়ার পর তারা আর কেউ কাছে ভীড়ছে না। ফলে বাধ্য হয়ে আমি দোকান বন্ধ রেখেছি। আর বর্তমানে আমি লোকের কাছ থেকে ধারদেনা করে চলছি।’

বাবু আরও বলেন, ‘শিক্ষার্থীরা বাকি খাওয়ার পর টাকা চাইলে বলে সামনের মাসে দেবো, বাসায় সমস্যা। নিজের টাকা দিয়ে এতদিন দোকান চালিয়েছি। কিন্তু সে টাকা পয়সাও ফুরিয়ে যাওয়ায় হোটেলের বাজার করতে পারছি না।’

এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক ফয়সাল আহমেদ (রুনু) বলেন, ছাত্রলীগের নাম ব্যবহার করে বাকি খাওয়ার কোনো সুযোগ নেই। তবে কে খেয়েছেন আর কে বাকি রেখেছেন, এটা আমার জানা নেই। এত টাকা বাকি তিনি কেন দিলেন সেটিও আমার বোধগম্য নয়। তবে ওই খাবারের দোকানের মালিক এ বিষয়ে আমাদের জানালে ছাত্রনেতা হিসেবে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলে তাঁর বাকি পড়ে যাওয়া টাকাগুলো তুলে দেওয়ার ব্যবস্থা করবো।

এলএস-০১/২৭/১২ (উত্তরাঞ্চল ডেস্ক)