সরকারি জমিতে ইউএনও’র গাড়ি চালকের ভবন!

দুর্নীতি কাণ্ডে ঢাকায় স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের ড্রাইভার আব্দুল মালেক গ্রেফতার ও বিচার শুরুর রেশ কাটতে না কাটতেই পাবনায় এক উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) গাড়ি চালক এবার সরকারি জমিতে বহুতল ভবন তৈরি করছেন।

অনুমোদন কিংবা নিয়ম নীতির তোয়াক্কা না করে পাবনার ফরিদপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার গাড়ির ড্রাইভার মুকুল উদ্দিন সরকারি জমিতে অবৈধভাবে বহুতল ভবন নির্মাণ শুরু করেছেন। পৌর এলাকায় প্রধান সড়কের পাশে গত চার মাস ধরে ভবন নির্মাণের কাজ করলেও, ইউএনও’র ড্রাইভার হওয়ায় তাকে কেউ বাধা দেয়নি বলে অভিযোগ স্থানীয়দের। প্রশাসনের নাকের ডগায় মুকুল উদ্দিনের এমন কাণ্ডে হতবাক স্থানীয়রা।

সরেজমিনে, ফরিদপুর উপজেলার বনওয়ারী নগর গ্রামে গিয়ে দেখা যায়, বনওয়ারী নগর ইউনিয়ন ভূমি অফিসের সামনে, দুই ইউনিট বিশিষ্ট পাঁচতলা এই ভবনের নির্মাণ কাজ চলছে।

সাইটের নির্মাণকর্মী টগর জানান, পাঁচ তলা বিশিষ্ট দুটি ইউনিটের ভবনের বেস ওয়ার্ক এবং গ্রাউন্ড ফ্লোর পিলার নির্মাণ কাজ শেষ হয়েছে। এখন আমরা কংক্রিটের ছাদ ঢালাই এবং প্রথম তলার সিঁড়ি নির্মাণের প্রস্তুতি নিচ্ছি।

স্থানীয়রা জানালেন, গত চার মাস ধরে তাদের বাধা উপেক্ষা করে গায়ের জোরে এই নির্মাণ কাজ চালাচ্ছেন ইউএনও’র ব্যক্তিগত গাড়ি চালক মুকুল উদ্দিন। বিষয়টি নিয়ে স্থানীয় প্রশাসনে বারংবার অভিযোগ করেও কোন ফল মেলেনি।

বনওয়ারীনগর ইউনিয়ন সহকারী ভূমি কর্মকর্তা কে এম হাবিবুল হক জানান, মুকুলের দখলে থাকা পৌর এলাকার খালিশাদহ মৌজায় ১২ শতাংশ আয়তনের সরকারি খাস খতিয়ানভুক্ত জমিতে এক সময় ইউনিয়ন ভূমি কর্মকর্তাদের সরকারি বাসভবন ছিল। পরিত্যক্ত পড়ে থাকায় ১৯৯৬ সালে মাসিক ২০০ টাকা ভাড়া চুক্তিতে বাড়িটি স্ত্রী রাশিদা বেগমের নামে নামে ইজারা নেন মুকুল উদ্দিন। ১৯৯৭ সাল থেকে তিনি এখানে বসবাস শুরু করেন।

হাবিবুল আরও বলেন, এটি খাস জমি, সরকারি সম্পত্তি হওয়ায় এখানে স্থায়ীভাবে কংক্রিটের পাকা স্থাপনা নির্মাণের তাঁর কোনো অধিকার নেই। তিনি ইজারার শর্ত ভঙ্গ করেছেন।

স্থানীয় বাসিন্দা জিয়াউল হক অভিযোগ করেন, ইউএনও’র ড্রাইভার হওয়ায় প্রভাব খাটিয়ে দিনে দিনে খাস জমির পুরনো বাড়ির অবকাঠামো ও গাছপালা কেটে বিক্রি করে দেন মুকুল। সম্প্রতি, কোনো ধরণের অনুমোদন ছাড়াই অবৈধভাবে পাঁচতলা ভবনও নির্মাণ শুরু করেছেন তিনি।

জিয়াউল আরও বলেন, মুকুল যখন পুরনো কাঠামো ভেঙে সরকারি জমি থেকে গাছ বিক্রি করে তখন আমরা পাবনার জেলা প্রশাসক, এবং স্থানীয় প্রশাসনের কাছে লিখিত চিঠি দিয়েছিলাম। কিন্তু কোনও পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি বলেই তিনি বহুতল ভবন নির্মাণের সাহস দেখিয়েছেন।

এদিকে, ভবন নির্মাণে অনুমোদন না থাকার কথা স্বীকারও করেছেন মুকুল। তার দাবি স্থায়ী বন্দোবস্তের আবেদন করে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে জানিয়েই ভবন নির্মাণ করছেন তিনি।

মুকুল উদ্দিন বলেন, আমরা ইতিমধ্যে সরকারি নিয়ম অনুযায়ী জমি বরাদ্দের আবেদন করেছি। যেহেতু আমার পরিবার গত ২৫ বছর ধরে এখানে বসবাস করছি। সুতরাং সরকারি নিয়ম অনুসারে জমিটি অগ্রাধিকার ভিত্তিতে পাবার অধিকার আমাদের রয়েছে। আমার স্ত্রীর নামে পৌরসভা হোল্ডিং ট্যাক্স এবং বৈদ্যুতিক বিলও হালনাগাদ রয়েছে। আমার বসবাসের ঘর নষ্ট হয়ে পড়ায় বাড়ির কাজ শুরু করেছি। স্থানীয় কিছু ভূমিদস্যু জায়গাটি দখল করতেই অভিযোগ করে আমাকে উচ্ছেদ করতে চাইছে।

ফরিদপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আহমেদ আলী বলেন, ‘মুকুল সরকারি খাস জমিতে স্থানীয় প্রশাসনের কাছ থেকে আইনত অনুমতি নিয়ে বসবাস করছেন। তিনি অবৈধ দখলদার নন। তবে, ইজারা নেয়া সরকারি জমিতে পাকা স্থাপনা গড়ার সুযোগ নেই। অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদে উদ্যোগ নেওয়া হবে। ইউএনও’র ড্রাইভার বলে কোনো বাড়তি সুবিধা নেওয়ার সুযোগ নেই।’

ইউএনও আহমেদ আলী আরও বলেন, মুকুলের বিরুদ্ধে যারা অভিযোগ করেছেন তারও অবৈধ দখলদার। খালিশাদহ মৌজায় প্রায় ১ দশমিক তিন ছয় একর সরকারি জমি বেদখলে রয়েছে। সরকারি সম্পত্তি উদ্ধারে শিগগিরই অভিযান চালানো হবে।

এসএইচ-২১/১২/২১ (উত্তরাঞ্চল ডেস্ক)