পরীক্ষাই পারবে করোনা মহামারী ঠেকাতে

কোভিড ১৯ বা করোনা ভাইরাস নিয়ে কম বেশি আমরা সকলেই আতঙ্কিত। প্রতি মূহুর্তে বাড়ছে আক্রান্তের ও মৃতের সংখ্যা। আমরা চেষ্টা করছি সংক্রমণ যেন কম হয় কিন্তু পারিপার্শ্বিক অবস্থা আমাদের অনুকূলে নাই। ঘনবসতিপূর্ণ ও নিম্ন আয়ের মানুষের আধিক্যের কারনে সতর্কতা বা নিয়ম মেনে চলা অনেকাংশেই সম্ভব হচ্ছে না। তার সাথে আছে সঠীক তথ্য জানার ঘাটতি। সেই সাথে আছে টেষ্টের অপ্রতুলতা।

বর্তমানে যে জায়গায় দাঁড়িয়ে আছি তাতে করে বলাই যায়, করোনা থেকে পুরোপুরি মুক্তি হয়তো মিলবে না। তাহলে কি করোনা ভাইরাস বিস্তার লাভ করেই যাবে? এই বিস্তার ঠেকাতে হলে আমাদের জানা প্রয়োজন ঠিক কতজন সংক্রমিত আছেন এবং কতজন আগেই সংক্রমিত হয়ে গেছেন। যতদিন না ভ্যাকসিন বা ঔষধ আবিষ্কার হচ্ছে ততদিন এই পরীক্ষাই পারবে মহামারী ঠেকাতে।

সময়ের সাথে সাথে বিশ্বব্যাপী বেড়ে চলেছে আক্রান্তের সংখ্যা। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, রাশিয়া,, ব্রাজিল, যুক্তরাজ্য, স্পেন, ইতালি, জার্মানি কোন দেশই পারছে না এই ভাইরাসের প্রকোপ রোধে কার্যকর কোন অবস্থানে যেতে। বর্তমানে সারা বিশ্বে মোট আক্রান্তের সংখ্যা ৫৬ লাখ ৯১ হাজার ৭৯০ জন এবং মারা গেছেন ৩ লাখ ৫৫ হাজার ৬৫৩ জন। শুধুমাত্র যুক্তরাষ্ট্রে মৃত্যু হয়েছে ১ লাখ এবং আক্রান্ত হয়েছে ১৬ লাখ ৯৯ হাজার ৯৩৩ জন। এশিয়ার দেশগুলোও এর বাইরে নাই। ক্রমশ ছড়িয়ে পড়ছে ভাইরাস। এই ধারাবাহিকতায় বাংলাদেশে করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত প্রথম সনাক্ত হয় মার্চ ২০২০ ওর শুরুতে। বর্তমানে এই সংখ্যা প্রতিদিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। বর্তমানে বাংলাদেশে মোট সনাক্ত রোগীর সংখ্যা ৪০ হাজারের উর্ধ্বে।

করোনা ভাইরাস একটি রেসপিরেটরি ভাইরাস। এটি ছড়ায় আক্রান্ত ব্যক্তির হাঁচি কাশি কফ থুতুর মাধ্যমে। সেকারনে ভয়াবহ রকম ছোঁয়াচে এবং প্রাণঘাতী। তবে আশার কথা এটাই, ৯০ শতাংশ রোগীদের নিজে থেকেই ভালো হবার সম্ভাবনা রয়েছে বাকী ১০ শতাংশ মৃত্যুর ঝুঁকি থাকছে, যাদের শরীরে অন্য রোগ আছে বা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা দুর্বল।

আমাদের এই মূহুর্তে সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন সতর্কতা ও নিয়ম মেনে চলা। করোনা পরিস্থিতি বিদ্যমান, টিকা আবিষ্কার সময় সাপেক্ষ, তেমন নির্দিষ্ট কোন ঔষধ নাই, এমন অবস্থায় একমাত্র করোনীয়, নিয়মের অন্তর্ভুক্তে রাখা নিজেকে ও অন্যকেও।সেই সাথে মানসিকভাবেও স্থির থাকা। এখন সবচেয়ে বড় প্রশ্ন, বাংলাদেশের মত দেশের ১৮ কোটি মানুষের অনেকেই নিম্ন ও মধ্যম আয়ের, তাদের পক্ষে নিয়ম মেনে লকডাউনের আওতায় দীর্ঘসময় থাকা কখনোই সম্ভব না। উপায় হতে পারে কঠোর লকডাউনের মাধ্যমে কমিয়ে আনা অথবা উপায় হতে পারে করোনা পরিস্থিতি মেনে নিয়ে বেঁচে থাকার পথে চলা। আজ প্রায় তিন মাস পূর্বে বাংলাদেশে প্রথম করোনা ভাইরাস রোগী সনাক্ত হয়, বাংলাদেশে করোনা ভাইরাস সংক্রমনের হার কম হবে নাকি বেশি হবে এই নিয়ে বিতর্কের অবসান ঘটিয়ে বর্তমানে আজ ২৮ মে ২০২০ পর্যন্ত আক্রান্তের সংখ্যা ৪০,২৩১ ছাড়িয়েছে , সুস্থ্য হয়েছেন ৮৪২৫ এবং মৃতের সংখ্যা ৫৫৯ সরকারী হিসাব মতে।

গতবছর ডিসেম্বরে চীনের উহান প্রদেশে প্রথম করোনা আক্রান্ত রোগীর সন্ধান পাওয়া যায়। এরপর জানুয়ারী ২০২০ এর মধ্যে ইউরোপ আমেরিকা ও এশিয়ার বিভিন্ন দেশে তা ছড়িয়ে পড়তে থাকে। এ সময় বিশ্ব স্বাস্থ সংস্থা অধিবেশনের মাধ্যমে করোনা পরিস্থিতিকে জরুরী জনস্বাস্থ সমস্যা হিসাবে ঘোষনা দেয়া হবে কিনা তা নিয়ে আলোচনা করে। কিন্তু তারা এটাকে তখনও জরুরী জনস্বাস্থ সমস্যা ঘোষনা না দিয়ে অপেক্ষা করার সিদ্ধান্ত নেন।

বাংলাদেশের পরিপ্রেক্ষিত যদি আমরা চিন্তা করি তাহলে এর থেকে পরিত্রান খুব সহজ না। করোনা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রন করতে হলে প্রয়োজন সকলের সম্মিলিত সহযোগিতা। গত তিনমাসে এই ভাইরাসের প্রকৃতি ও কিভাবে ছড়ায়, লক্ষণ এসব নিয়ে যথাযথ প্রচারনার চেষ্টা করা হয়েছে। কিন্তু আসন্ন ঈদকে কেন্দ্র করে সাধারন মানুষের বর্তমান পরিস্থিতি উপেক্ষা করার মধ্য দিয়ে আমাদের অসহযোগীতার দিকটি চোখে পড়ার মত। তবে বাংলাদেশে করোনা ভাইরাসের উপস্থিতি একদিকে যেমন মানুষকে করেছে আতঙ্কিত ঠীক তেমনি বিপুল সংখ্যক মানুষ কর্মহীন হয়ে পড়েছে তীব্র অর্থসংকটে। যার কারনে লকডাউন মেনে ঘরবন্দী হয়ে থাকাটাও অনেকের পক্ষেই সম্ভব হয়ে উঠছে না। এমতাবস্থায় বিশেষজ্ঞরাও অনুমান করছেন হয়তো এই ভাইরাসের উপস্থিতি থাকবে দীর্ঘ সময় জুড়ে।

পরিশেষে বলা যায়, পৃথিবী জুড়ে মানবজাতির সুস্থভাবে বেঁচে থাকার জন্য বা টিকে থাকার জন্য আমাদের নিয়ম মানার বিকল্প নাই। সেই সাথে জরুরী সকলের টেস্টের বিষয়টি। আমাদের এই মুহূর্তে সকলের টেস্টের মাধ্যমে জানা প্রয়োজন কতজন আক্রান্ত, কতজন আক্রান্ত হয়ে সেরে গেছেন, কতজন আক্রান্ত হন নাই। মোট জনসংখ্যার এই সঠীক পরিসংখ্যান থেকেই আমরা একটা জায়গায় পৌঁছে সঠিক সিদ্ধান্তে আসতে পারি। অন্যদিক এটাও সত্যি দীর্ঘদিন লকডাউন থাকলে আমাদের অর্থনৈতিক নিরাপত্তা হুমকির সম্মুখীন হবে তা বলার অপেক্ষা রাখে না। সবদিক বিবেচনা করেই হয়তো আমাদের কোভিড ১৯ এর সাথে মানিয়ে নিয়েই চলতে হবে। একদিন হয়তো হার্ড ইমিউনিটির দেখা আমরা পেয়েও যাব, আসবে ভ্যাকসিন, আবিষ্কার হবে ঔষধ। ততদিন চলতে থাকবে আবারো মানব জাতির টিকে থাকার লড়াই।

এসএইচ-১৯/২৮/২০ (শাহানা পারভিন, স্টেশন ম্যানেজার,রেডিও পদ্মা)