সচেতনতা ও সম্মিলিত সহযোগীতাই করোনা থেকে মুক্তির পথ

লক ডাউন উঠে যাবে, কেন উঠে যাবে সেটাও আমাদের অজানা নয়। আমরা অনেকেই হয়তো সমালোচনার ঝড় তুলে দিচ্ছি কেন এই পরিস্থিতিতে লক ডাউন শিথিল করা হচ্ছে, কেন অফিস বা বাজার খুলে দেয়া হচ্ছে? আমরা হয়তো শুধু আমার নিজ অবস্থান থেকে চিন্তা করছি। বাংলাদেশের মত দেশে অধিকাংশ মানুষকেই উপার্জনের জন্য বাড়ীর বাইরে যেতেই হয়।

এর মধ্যে নিম্ন আয়, মধ্যম আয় যারা ক্ষুদ্র বা ভ্রাম্যমান ব্যবসার সাথে জড়িত। এমন মানুষের সংখ্যাই বেশি। সাথে বড় একটা অংশ গার্মেন্টস সেক্টরে কর্মরত। কিছু সংখ্যক মানুষের হয়তো লক ডাউনে থাকার কারনে অর্থনৈতিক দিক দিয়ে কোন প্রভাব পড়ছে না। তাই বলে তাদেরকে দিয়ে গোটা বাংলাদেশের চিত্র তুলে ধরার কোন অবকাশ নাই।

লক ডাউনে ঘরে বসে প্রকৃতিপ্রেমীর সংখ্যা যেমন আছে তেমনি নিম্ন আয়ের মানুষের শুধুমাত্র ভাতের জোগাড় করার অসহায় চাহনিও কারোই অজানা নয়। সরকারী বেসরকারী উদ্যোগ আজ প্রায় তিনমাস অব্যাহত আছে তবুও যেন ঘাটতি থেকেই যাচ্ছে।

করোনা পরিস্থিতিতে ডাক্তার, নার্স, পুলিশ, আর্মি, মিডিয়াকর্মী, ব্যাংকার সেই সাথে স্বেচ্ছাসেবক গোষ্ঠীসহ অনেক সাধারন মানুষও নিজের সুরক্ষার কথা না ভেবে মানুষকে ভাল রাখার জন্য অক্লান্ত সেবা দিয়ে যাচ্ছেন। এ পর্যন্ত আমরা ডাক্তার, পুলিশ, সাংবাদিক, ব্যাংক কর্মকর্তা অনেককেই হারিয়েছি, তবুও সেবা কার্যক্রম থেমে থাকেনি।

লক ডাউন দেয়া হয়েছিল করোনা আক্রান্তের সংখ্যা যেন বৃদ্ধি না পায়। কিন্তু দু:খবর বিষয় সেই ফর্মুলা কাজে দেয়নি। আক্রান্তের হার দিনেদিন বেড়েই চলেছে। সংক্রমন রোগ বিশেষজ্ঞদের মতে, বাংলাদেশ হয়তো করোনা ভাইরাসের এক দীর্ঘমেয়াদী চক্রে প্রবেশ করতে যাচ্ছে। অর্থাৎ কতদিন এই ভাইরাস স্থায়ী হবে, কতজন আক্রান্ত হবে, কতদিনে তার কার্যক্রম থামিয়ে দেবে বা নিয়ন্ত্রনের বাইরে চলে যাবে।বিশেষজ্ঞদের মতে দুই থেকে চার বছরও করোনাকাল স্থায়ী হতে পারে।

তাহলে কিভাবে সম্ভব এতদিন লক ডাউনে থাকা? লকডাউন উঠে গেলে আমরা কি সকলে মারা যাব? এভাবেই হেরে যাব? নাকি করোনা পরিস্থিতির সাথে খাপ খাওয়ানোর জন্য আমাদের অভ্যাসগুলোর পরিবর্তন আনবো?

শুধু বাংলাদেশ কেন, কোন দেশের পক্ষেই এতদিন লক ডাউনে থাকা সম্ভব নয়। লক ডাউন উঠে যাচ্ছে মানেই আমাদেরও যে চিন্তায় আনতে হবে সবকিছু আবার আগের মত হয়ে গেছে তা কিন্তু নয়। আমাদের আরও সাবধানতা অবলম্বন করতে হবে সেই সাথে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে হবে।

এবার যেমন আরও প্রয়োজনে মানুষকে বের হতে হচ্ছে ঠীক তেমনি সকলের স্বার্থেই যাদের ঘরে থাকা সম্ভব তাদের ঘরেই থাকতে হবে। সেই সাথে কর্মক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহন অত্যাবশ্যকীয় করতে হবে। স্বাস্থ্যগত বিধিনিষেধের সাথে মনসিক দিক দিয়েও সুস্থ থাকতে হবে।

অহেতুক আতঙ্কিত না হয়ে এবং আতঙ্ক না ছড়িয়ে আমাদের প্রতিদিনের অভ্যাসের পরিহর্তনের মধ্য দিয়েএবং সতর্কতা ও নিয়মনীতি অনুসরন করে বাঁচতে হবে ও বাঁচাতে হবে।

এসএইচ-০১/৩১/২০ (শাহানা পারভীন, স্টেশন ম্যানেজার, রেডিও পদ্মা ৯৯.২ এফ এম)