মোহর লাগানোর অপেক্ষায় ১৯ লক্ষাধিক ভোটার

নিরাপত্তার চাদরে ঢাকা পড়েছে পুরো রাজশাহী। সুষ্ঠু ও সুন্দরভাবে বোট অনুষ্ঠানের জন্য প্রশাসন ও আইশৃঙ্খলা রক্ষাকারিবাহিনী। জেলার ৬টি আসনের ১৯ লক্ষাধিক ভোটার মুখিয়ে আছেন পছন্দের প্রার্থীর প্রতীকে মোহর লাগানোর জন্য। চারিদিকে উৎসব মুখর পরিবেশ। কেন্দ্রে কেন্দ্রে প্রার্থীদের সমর্থকরা পোষ্টার ঝোলাতে শুরু করেছেন। জেলার ৬টি আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন ২৪ প্রার্থী। জেলার ৩৮৯টি ঝুঁকিপূর্ণ কেন্দ্রে নেয়া হয়েছে বাড়তি নিরাপত্তা ব্যবস্থা।

সংশ্লিষ্ট প্রিজাইডিং অফিসার, সহকারি প্রিজাইডিং অফিসার নিজ নিজ সহকারি রির্টানিং অফিসারের কার্যালয় থেকে ভোটগ্রহণের সকল সামগ্রী গ্রহণ করেন এবং কেন্দ্রে কেন্দ্রে পৌছাতে শুরু করেছে ব্যালট বক্সসহ ভোটের অন্যান্য সরঞ্জাম। এখন কেবল সকলের অপেক্ষা শান্তিপূর্ণ ভোট অনুষ্ঠানের।

জেলায় শান্তিপূর্ণ ভোট গ্রহনের জন্য প্রায় এক সপ্তাহ থেকে বিজিবি, সেনাবাহিনী ও র‌্যাবের টহল শুরু হয়। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যার পর থেকেই মহানগরীর প্রবেশ পথ নওদাপাড়া, কাশিয়াডাঙ্গা বাইপাস সড়ক ও অক্টয় মোড়ে বসানো হয়েছে অস্থায়ী চেকপোস্ট। চলানো হচ্ছে তল্লাশীও। শুধু তাই নয় রাজশাহী-চাঁপাইনবাবগঞ্জ, রাজশাহী-ঢাকা ও রাজশাহী-নওগাঁ মহাসড়কের বিভিন্ন স্থানে পুলিশ যানবাহনেও তল্লাশি চালাচ্ছে।

মহানগর ও জেলা পুলিশের দেয়া তথ্য অনুযায়ি, রাজশাহীতে মোট ৬৯৫টি ভোটকেন্দ্র রয়েছে। এর মধ্যে মহানগর পুলিশের (আরএমপি) অধীনে ১৯৬টি কেন্দ্র। যার মধ্যে ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে ১৮৬টি কেন্দ্র। জেলার ৪৯৯টি কেন্দ্রের মধ্যে ২০৩টি ঝুঁকিপূর্ণ কেন্দ্র হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। মোট ৪ হাজার ১৩৪টি কক্ষে ভোট গ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে। নারী ও পুরুষ ভোটারদের জন্য ভোটকক্ষ থাকবে আলাদা আলাদা। ঝুকিপূর্ণ ভোটকেন্দ্রগুলোতে নিরাপত্তার জন্য অতিরিক্ত জনবল নিয়োগ করা হয়েছে। কেন্দ্রগুলিতে নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকবেন একজন এসআই বা এএসআইসহ মোট ১৭ জন নিরাপত্তাকর্মী। এদের মধ্যে একজন এসআই বা এএসআই, চার জন কনস্টেবল এবং ১২জন আনসার সদস্য। আর সাধারণ কেন্দ্রগুলোর একজন কনস্টেবল কমিয়ে দায়িত্বে থাকবে মোট ১৬ জন নিরাপত্তাকর্মী। নির্বাচনকে কেন্দ্র করে এবারই প্রথম আনসার বাহিনীর হাতে আগ্নেয়াস্ত্র প্রদান করা হয়েছে।

জেলা নির্বাচন অফিসের তথ্যনুযায়ি জেলার ছয়টি আসনে মোট ভোটার ১৯ লাখ ৪২ হাজার ৫৬২ জন। এর মধ্যে পুরুষ ভোটার ৯ লাখ ৬৭ হাজার ৭১০ জন এবং নারী ৯ লাখ ৭৪ হাজার ৮৫২ জন। এবার নতুন ভোটার হয়েছে ১ লাখ ৯৯ হাজার ৯০৫ জন। চূড়ান্ত তালিকানুযায়ী মোট ভোটারের অর্ধেকেই নারী। তাই নির্বাচনে তাদের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে ভোটকেন্দ্রগুলোকে নারীবান্ধব করে গড়ে তুলতে নির্দেশ দিয়েছে কমিশন। সেই অনুযায়ী তারা প্রস্তুত বলেও জানান নির্বাচন কর্মকর্তা।

যাচাইবাছাই শেষে রাজশাহীর ৬টি আসনে প্রার্থী থাকে ২৫ জন। কিন্ত আদালতে রাজশাহীর ৬ আসনের বিএনপির প্রার্থী আবু সাঈদ চাঁদের প্রার্থীতা বাতিল করলে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় থাকে ২৪ জন। এর মধ্যে রাজশাহীর ৫ আসনে বিএনপির প্রার্থী নদিম মোস্তফার প্রার্থীতা স্থগিত হলে তার পরিবর্তে দলের পক্ষ থেকে নজরুল ইসলাম মন্ডলকে ধানের শীষ প্রতীক দেয়া হয়।

রাজশাহী-১ (গোদাগাড়ী-তানোর) আসনে আওয়ামী লীগের ওমর ফারুক চৌধুরী এমপি, বিএনপির সাবেক ও ডাক টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী ব্যারিস্টার আমিনুল হক, ইসলামী আন্দোলনের আব্দুল মান্নান ও বাসদের আফজাল হোসেন।

রাজশাহী-২ (সদর) আসনে আওয়ামী লীগ নেতৃত্ত্বাধিন মহাজোটের ফজলে হোসেন বাদশা এমপি, বিএনপির সাবেক মেয়র ও এমপি মিজানুর রহমান মিনু, ইসলামী আন্দোলনের ফয়সাল হোসেন ও সিপিবির এনামুল হক।

রাজশাহী-৩ (পবা-মোহনপুর) আসনে আওয়ামী লীগের আয়েন উদ্দিন এমপি, বিএনপির শফিকুল হক মিলন, ইসলামী আন্দোলনের ফজলুর রহমান, যুক্তফ্রন্টের মনিরুজ্জামান ও সাম্যবাদী দলের সাজ্জাদ আলী।

রাজশাহী-৪ (বাগমারা) আসনে আওয়ামী লীগের প্রকৌশলী এনামুল হক এমপি, বিএনপির সাবেক এমপি আবু হেনা ও ইসলামী আন্দোলনের তাজুল ইসলাম খান।

রাজশাহী-৫ (পুঠিয়া-দুর্গাপুর) আসনে আওয়ামী লীগের ডাঃ মনসুর রহমান, বিএনপির নজরুল ইসলাম মন্ডল, জাতীয় পার্টির আবু হোসেন, ইসলামী আন্দোলনের রুহুল আমিন ও জাকের পার্টির শফিকুল ইসলাম।

রাজশাহী-৬ (চারঘাট-বাঘা) আসনে আওয়ামী লীগের পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম এমপি, ইসলামী আন্দোলনের আব্দুস সালাম সবুজ ও জাতীয় পার্টির ইকবাল হোসেন।

মহানগর পুলিশের মুখপাত্র ইফতেখায়ের আলম জানান, মহানগরীর ঝুঁকিপূর্ণ কেন্দ্রগুলোর বাড়তি নিরাপত্তার ব্যবস্থা করা হয়েছে। বিভিন্ন আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর সাথে সাদা পোশাকে পুলিশ থাকবে প্রতিটি কেন্দ্রে।

রাজশাহী-১ বিজিবির অধিনায়ক মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম বলেন, জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাজশাহীতে ২৫ প্লাটুন বিজিবি মোতায়েন রয়েছে। বিজিবির সাঁজোয়া যান (এপিসি) ছাড়াও ডগ স্কোয়াড টহলে যুক্ত হয়েছে। এতে তিনটি প্রশিক্ষিত ডগ রয়েছে। এরই মধ্যে নির্বাচনী এলাকাজুড়ে এই টহল দিচ্ছে বিজিবি। তারা অন্য বাহিনীর সঙ্গে সমন্বয়ের মাধ্যমে কাজ করছেন। এছাড়া কয়েক প্লাটুন বিজিবি সদর দফতের রিজার্ভ রাখা হয়েছে। তারা বিশেষ প্রয়োজনে বের হবেন। আগামী সোমবার পর্যন্ত স্ট্রাইকিং ফোর্স হিসেবে পুলিশ ও র‌্যাবের পাশাপাশি বিজিবি দায়িত্ব পালন করবে বলে জানান তিনি।

জেলা পুলিশের মুখপাত্র পুলিশের সিনিয়র সহকারি পুলিশ সুপার আব্দুর রাজ্জাক বলেন, ঝুঁকিপূর্ণ ভোটকেন্দ্রগুলোতে এক জন এসআই ও এক জন কনস্টেবল নিয়োগ দেয়া হয়েছে। এছাড়াও নিরাপত্তার জন্য টহলে নিয়োজিত থাকছে মোবাইল টিম।

জেলা প্রশাসক ও রিটার্নিং কর্মকর্তা এস.এম. আব্দুল কাদের বলেন, ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে রোববার। এ জন্য সকল প্রস্তুুতি সম্পন্ন হয়েছে। শনিবার কঠোর নিরপাত্তার মধ্যে দিয়ে রাজশাহীর প্রতিটি কেন্দ্রে সন্ধ্যার মধ্যে ব্যালট বক্সসহ ভোটগ্রহণের অন্যান্য সরঞ্জামাদি পৌঁছে যেতে শুরু করেছে। নিরাপত্তা ব্যবস্থা থেকে শুরু করে ভোটগ্রহণের সকল প্রক্রিয়াই চূড়ান্ত। শান্তি ও সৌহার্দ্যপূর্ণ পরিবেশে সবগুলো আসনে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। জেলার চরাঞ্চল ও দুর্গম এলাকাগুলোতেও ভোটের সুষ্ঠু পরিবেশ বজায় রাখতে সব ধরনের ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে বলে জানান তিনি।

এসএইচ-২৬/২৯/১৮ (সুমন হাসান)