সামাজিক ট্যাবু ভেঙে মেয়েদের প্রজনন স্বাস্থ্য সুরক্ষায় রাবিতে ‘উইংস অব ইভ’

‘৩৩ সদস্যের দলটি কথা বলছে সামাজিক ট্যাবু ভেঙে মেয়েদের প্রজনন স্বাস্থ্য নিয়ে। স্বেচ্ছাশ্রমে দেখিয়ে দিচ্ছে কী কারণে হতে পারে জরায়ুমুখ ক্যান্সারের মতো ভয়াবহ রোগ। এরই মধ্যে বিনা মূল্যে দুই শতাধিক নারীকে জরায়ুমুখ ক্যান্সারের ভ্যাকসিন দেয়ার ব্যবস্থা করেছেন তারা।’

সিসিডি বাংলাদেশ ও ব্রিটিশ কাউন্সিলের উদ্যোগে চারদিনের প্রশিক্ষণ শেষে নির্দেশনা ছিল কমিউনিটির নির্দিষ্ট সামাজিক পরিবর্তনে কর্মপরিকল্পনা বাছাইয়ের। নির্দেশনামাফিক কাজ শুরুর চেষ্টা সামাজিক ট্যাবু জরায়ুমুখ ক্যান্সার বিষয়ে সচেতনতা তৈরি নিয়ে। কমিউনিটি হিসেবে বেছে নেয়া রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় এলাকা।

এরই মধ্যে দুই শতাধিক শিক্ষার্থীকে সচেতনতা কার্যক্রমের আওতায় এনে ভ্যাকসিন নিয়ে প্রজনন সুরক্ষায় কাজ করতে পেরেছেন তারা। কথা বলছেন সামাজিক ট্যাবু ভেঙে মেয়েদের প্রজনন স্বাস্থ্য নিয়েও। স্বেচ্ছাশ্রমে জরায়ুমুখ ক্যান্সারের মতো ভয়াবহ রোগ যেসব কারণে হতে পারে, সেসব দেখিয়ে দিচ্ছেন। এ সামাজিক পরিবর্তন প্রচেষ্টার নাম ‘উইংস অব ইভ’।

রাজশাহী ক্যান্সার হাসপাতাল ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের সহযোগিতা নিয়ে এ সামাজিক সচেতনতামূলক আন্দোলনের নেতৃত্ব দিচ্ছেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। বিশ্ববিদ্যালয়ের লোকপ্রশাসন বিভাগের মাস্টার্সের শিক্ষার্থী নাজিফার সঙ্গে যুক্ত আছেন মোবাশ্বিরা মারচি, মাহজাবিন সাইফ, শারাফ আনজুম, আলভি মনিরসহ বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগের মোট ৩৩ শিক্ষার্থী।

নাজিফাদের এ প্রচেষ্টার শুরু গত বছরের নভেম্বরে। সচেতনতা কার্যক্রম শুরুর পর চলছে ভ্যাকসিনেশন প্রচেষ্টা। এরই মধ্যে চারটি ধাপ অতিক্রম করেছেন। প্রথম ধাপে ১০০ জন, দ্বিতীয় ধাপে ৫০, তৃতীয় ধাপে ৩০ ও চতুর্থ ধাপে ৪০ জন নারী শিক্ষার্থীসহ মোট ২২০ জনকে ভ্যাকসিনেশন প্রক্রিয়ার মধ্যে আনতে পেরেছেন। তবে পুরুষের ভ্যাকসিন আবিষ্কার না হওয়ার কারণে পুরুষদের এ প্রচেষ্টার মধ্যে আনা সম্ভব হচ্ছে না বলে জানান তারা।

জরায়ুমুখ ক্যান্সার নিয়ে কাজ করার কারণ সম্পর্কে উইংস অব ইভের সদস্যরা জানাচ্ছিলেন, জরায়ু বিষয়টাই কেমন করে যেন লজ্জার বিষয়। সংকোচের কারণে কেউ কেউ কিছু বলতে পারে না। আমরা নারী-পুরুষ উভয়ের সঙ্গেই খোলামেলা আলোচনার মাধ্যমে এ সামাজিক ট্যাবু দূর করার চেষ্টা করছি। সবাইকে বোঝানোর চেষ্টা করছি এটি একটি স্বাভাবিক বিষয়। অন্যান্য অঙ্গের মতো জরায়ুও একটি অঙ্গ। তাই এর বিশেষ যত্ন নেয়া প্রয়োজন। এছাড়া সমাজে নারীদের প্রজনন স্বাস্থ্যের প্রতি যেন আরো যত্নবান হন।

তাদের কাজের প্রশংসা করে রাজশাহী ক্যান্সার হাসপাতালের পরিচালক চিকিৎসক ডা. প্যাট্রিক বিশ্বাস বলেন, মেয়েরা ভালো কাজ করছে। যদি তাদের মতো উদ্যোমী কিছু লোক এগিয়ে আসতেন, তাহলে সমাজে এমন বহু পরিবর্তন সম্ভব হতো।

আলভিদের সচেতনতা কার্যক্রমে যুক্ত আছে সেমিনার, সিম্পোজিয়াম, পোস্টারিংসহ বেশকিছু কাজও। বিনা মূল্যেই ভ্যাকসিন সুবিধা নিতে পারছেন শিক্ষার্থীসহ অন্যরা। বেশ সাড়া পাচ্ছেন বলে জানান উদ্যোক্তা শিক্ষার্থী নাজিফা মিম।

তিনি বলেন, প্রথম দিকে লজ্জায় কেউ কথা বলতে চাইত না। আমরা যাদের সঙ্গে কথা বলছি, তারা আবার তাদের বান্ধবীদের বলেছে। এখন বিষয়টি অনেকটাই মানুষের মুখে মুখে। ভ্যাকসিন দেয়ার জন্য এত মেয়ে আগ্রহী হচ্ছে যে আমরা অত মেয়েকে সুযোগই দিতে পারছি না। অপ্রতুল ভ্যাকসিনের কারণে সবাইকে সুযোগ দেয়া সম্ভব হচ্ছে না। যদি ভ্যাকসিনের মূল্য ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে থাকত, তাহলে সমস্যা ছিল না।

বিএ-২০/২২-০১ (নিজস্ব প্রতিবেদক)