রাজশাহীতে স্কুল বন্ধ করে আ.লীগ নেতার শোডাউনে শিক্ষকরা

রাজশাহীর দুর্গাপুরে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ রেখে নির্বাচনী প্রচারনার অংশ হিসেবে দলীয় নেতাকর্মীদের নিয়ে মোটরসাইকেল শোডাউন দিয়েছেন জেলা আওয়ামী লীগের সহ সভাপতি আব্দুল মজিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছে। সোমবার দুপুরে দুর্গাপুর ডিগ্রি কলেজ মাঠ থেকে মোটরসাইকেল শোডাউন শুরু করে পুরো উপজেলায় শোডাউন দেয়ার কথা থাকলেও পরে শুধু আমগাছি পর্যন্ত শোডাউন দিয়ে পুণরায় দুর্গাপুর সদরে ফিরে যান।

রোববার বিকেলে আসন্ন উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের প্রথম ধাপের তফসিল ঘোষণা হওয়ার পর সোমবার দুপুরে আওয়ামী লীগ নেতা আব্দুল মজিদের মোটরসাইকেল শোডাউনকে অনেকেই নির্বাচনী আচরণবিধি লংঘন হিসেবে মনে করছেন।

এদিকে, মোটরসাইকেল শোডাউনে যোগ দিতে রোববার সন্ধ্যায় কয়েকটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষকদের চাপ দেয়া হয়। বেশ কয়েকটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষকরা শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলা রেখেই মোটরসাইকেল শোডাউনে যোগ দিলেও জয়নগর উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক সাজাহান আলী পুরো বিদ্যালয় বন্ধ ঘোষণা করে শিক্ষার্থীদের বাড়ি পাঠিয়ে দিয়ে অন্যান্য শিক্ষকদের নিয়ে আওয়ামী লীগ নেতা আব্দুল মজিদের নির্বাচনী মোটরসাইকেল শোডাউনে অংশ নেন।

জানা গেছে, দুর্গাপুর উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান ও জেলা আওয়ামী লীগের সহ সভাপতি আব্দুল মজিদ আসন্ন উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে নিজের প্রার্থীতা ঘোষণা করেছেন। এ উপলক্ষে সোমবার দুপুরে দলীয় নেতাকর্মীদের নিয়ে দুর্গাপুর ডিগ্রি কলেজ মাঠ হতে মোটরসাইকেল শোডাউন বের করার প্রস্তুতি নেয়া হয়।

এর আগে উপজেলার বিভিন্ন গ্রাম থেকে আওয়ামী লীগ নেতা আব্দুল মজিদের সমর্থকরা মোটরসাইকেল নিয়ে দুর্গাপুর ডিগ্রি কলেজ মাঠে জড়ো হতে থাকেন। দুপুর ১ টার দিকে মোটরসাইকেল শোডাউন বের হলেও রিটার্নিং কর্মকর্তার ফোন পেয়ে শোডাউন সংক্ষিপ্ত করে আমগাছি পর্যন্ত গিয়ে সদ্য প্রয়াত জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি ও সাবেক সাংসদ তাজুল ইসলাম মোহাম্মাদ ফারুকের কবর জিয়ারত করে নেতাকর্মীদের নিয়ে পুণরায় দুর্গাপুর সদরে ফিরে যান আওয়ামী লীগ নেতা আব্দুল মজিদ। মোটরসাইকেল শোডাউন শুরুর আগে ডিগ্রি কলেজ চত্বরে পথসভায় বক্তব্য রাখেন আওয়ামী লীগ নেতা আব্দুল মজিদের সমর্থকরা। এ সময় সাবেক সাংসদ আব্দুল ওয়াদুদ দারা সম্পর্কে বিষোদগার করে বক্তব্য রাখা হয় বলেও জানান সেখানে উপস্থিত কয়েকজন আওয়ামী লীগ কর্মী।

এদিকে, মোটরসাইকেল শোডাউনে যোগ দিতে আগের দিন রোববার সন্ধ্যায় আওয়ামী লীগ নেতা আব্দুল মজিদের নিজ ইউনিয়ন জয়নগর ইউনিয়নের কয়েকটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান প্রধানদের অন্যান্য শিক্ষকদের নিয়ে মোটরসাইকেল সহ শোডাউনে উপস্থিত থাকার জন্য ফোনে চাপ প্রয়োগ করা হয়। বেশ কয়েকজন শিক্ষক ওই দিনই বিষয়টি উপজেলা আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতাদের জানান।

এর মধ্যে কয়েকটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষকরা শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলা রেখে মোটরসাইকেল শোডাউনে যোগ দিলেও ব্যাতিক্রম ঘটনা ঘটিয়েছেন জয়নগর উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক সাজাহান আলী। তিনি সকালে বিদ্যালয়ে গিয়ে বিদ্যালয় বন্ধ ঘোষণা করে শিক্ষার্থীদের নিজ নিজ বাড়িতে চলে যেতে বলেন। এরপর অন্যান্য শিক্ষকদের সাথে নিয়ে আওয়ামী লীগ নেতা আব্দুল মজিদের মোটরসাইকেল শোডাউনে যোগ দেন।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে বিদ্যালয়ের একজন সহকারি শিক্ষক জানান, সকাল ১০ টার দিকে ক্লাস শুরুর আগ মূহুর্তে বিদ্যালয়ের মাঠে জাতীয় সংগীতের জন্য শিক্ষার্থীরা জড়ো হলে প্রধান শিক্ষক সাজাহান আলী শিক্ষার্থীদের উদ্দেশ্যে বলেন, ‘জাতীয় সংগীত শেষে তোমরা সবাই নিজ নিজ ক্লাসে গিয়ে হাজিরা দিয়ে নিজ নিজ বাড়ি চলে যাবে। আমাদের জরুরী মিটিং আছে তাই আজ ক্লাস হবেনা। আগামী কাল আবার তোমরা বিদ্যালয়ে আসবে’। এ কথা শেষ করেই প্রধান শিক্ষক সাজাহান আলী অন্যান্য শিক্ষকদের মোটরসাইকেল নিয়ে তার সাথে আওয়ামী লীগ নেতা আব্দুল মজিদের শোডাউনে যেতে কঠোর ভাবে নির্দেশ দেন।

জয়নগর উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক সাজাহান আলীর সাথে এ ব্যাপারে কথা বলা হলে তিনি আওয়ামী লীগ নেতা মজিদের নেতৃত্বে শোডাউনে যাওয়ার বিষয়টি অস্বীকার করে বলেন, সদ্য প্রয়াত সাবেক সাংসদ তাজুল ইসলাম মোহাম্মাদ ফারুকের কবর জিয়ারতের জন্য বিদ্যালয় বন্ধ রাখা হয়েছিল। তবে দুইটি ক্লাস নিয়েই তারপর কবর জিয়ারতে গেছেন বলে দাবি করেন তিনি।

বিদ্যালয় বন্ধ রাখতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের অনুমতি নিয়েছেন কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে শিক্ষক সাজাহান আলী বলেন, বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির অনুমতি নেয়া হয়েছে। এ জন্য উপজেলা প্রশাসনের কোন কর্মকর্তার অনুমতির প্রয়োজন হয়নি। শিক্ষক সাজাহান আলী এ সময় পাল্টা প্রশ্ন ছুড়ে বলেন, পাশ^বর্তি হাট কানপাড়া জোবেদা ডিগ্রি কলেজ, হাট কানপাড়া উচ্চ বিদ্যালয় ও বাগলপাড়া উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষরাও দুইটি ক্লাস নিয়ে বিদ্যালয় বন্ধ করে শোডাউনে অংশ নিয়েছেন তাদের সমস্যা না হলে আমার হবে কেন।

নির্বাচনী আচরণবিধি লংঘন করে মোটরসাইকেল শোডাউনের বিষয়ে কথা বলতে উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা দুলাল হোসেনের সাথে কথা বলা হলে তিনি জানান, আওয়ামী লীগ নেতা আব্দুল মজিদের পক্ষ থেকে আমাকে বিষয়টি আগে জানানো হয়েছিল। কিন্তু আমি মোটরসাইকেল শোডাউন বের করতে নিষেধ করেছিলাম। তিনি আমাকে আশ^স্ত করেছিলেন যে, অল্প কয়েকজন লোকজন নিয়ে তিনি সদ্য প্রয়াত সাবেক সাংসদ তাজুল ইসলাম মোহাম্মাদ ফারুকের কবর জিয়ারতে যাবেন।

পরে বিভিন্ন ভাবে মোটরসাইকেল শোডাউনের ভাবে খবর পেয়েছি। আমার সাথে মিথ্যা কথা বলে আওয়ামী লীগ নেতা আব্দুল মজিদ চালাকি করেছেন। এ জন্য প্রথমবারের মতো তাকে সতর্ক করা হয়েছে বলেও জানান উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা দুলাল হোসেন।

বিএ-২৩/০৪-০২ (নিজস্ব প্রতিবেদক)