রাজশাহীতে পুলিশের সাংবাদিক নির্যাতনের অডিও রেকর্ড ফাঁস

রাজশাহীর পুঠিয়া থানার এসআই তৌফিক পারভেজের সাংবাদিক নির্যাতনের অডিও রেকর্ড ফাঁস হয়েছে। গত ২ জানুয়ারি রাত ১০ টার দিকে পুঠিয়া উপজেলার বানেশ্বর ট্রাফিক মোড়ে এশিয়ান টেলিভিশনের রাজশাহী প্রতিনিধি মুরাদুল ইসলাম সনেটকে ধরে ব্যাপক শারীরিক নির্যাতন ও অশ্লিল ভাষায় গালাগালি করে এসআই পারভেজ। এ সময় তিনি নিজেকে আওয়ামী লীগের একজন কেন্দ্রীয় নেতার ভাতিজা পরিচয় দিয়ে মন্ত্রী, সংসদ সদস্য ও রাজশাহীর পুলিশ সুপারকে নিয়েও অশালিন মন্তব্য করেন পুলিশের ওই কর্মকর্তা।

ঘটনার একমাস চারদিন পর বুধবার সাংবাদিক সনেটকে তার মোবাইল ফোন ও পরিচয়পত্র ফেরত দেয় পুঠিয়া থানা পুলিশ। তবে মোবাইল সেটের সিম ও মেমোরি কার্ড দেয়া হয়নি। সেগুলো খুলে নেয়া হয়েছে। কিন্তু মোবাইল সেটে থেকে যায় এসআই পারভেজের সাংবাদিক নির্যাতন ও গালাগালির অডিও রেকর্ড। যা গণমাধ্যমের কাছে এসেছে।

ওই অডিও রেকর্ডে সাংবাদিক সনেটকে ব্যাপক পেটানোর শব্দ, অশ্লিল ভাষায় গালাগালি, মাদক দ্রব্য দিয়ে ফাঁসিয়ে দেয়ার হুমকি এবং মন্ত্রী, সংসদ সদস্য ও রাজশাহীর পুলিশ সুপার মো: শহিদুল্লাহকে নিয়ে অশালিন মন্তব্য করতে শোনা যায় এসআই পারভেজকে।

জানা গেছে, গত ২ জানুয়ারি রাত ১০ টার দিকে তিন বন্ধুর সঙ্গে দুইটি মোটরসাইকেল যোগে বানেশ্বর থেকে রাজশাহী ফিরছিলেন সাংবাদিক মুরাদুল ইসলাম সনেট। এ সময় ট্রাফিক মোড়ে তাদের থামান এসআই তৌফিক পারভেজ। তিনি সবার পরিচয় জানতে চাইলে সনেট নিজেকে সাংবাদিক বলে পরিচয় দেন।

এতে ক্ষুদ্ধ হয়ে উঠেন এসআই পারভেজ। এক পর্যায়ে সেখানে সাংবাদিক সনেটকে ব্যাপক মারপিট করে গাড়িতে তোলে। এ সময় সাংবাদিকদের অশ্লিল ভাষায় গালাগালি করে এবং সনেটের মোবাইল ফোন সেট ও এশিয়ান টেলিভিশনের পরিচয়পত্র কেড়ে নেয়।

তবে এসআই পারভেজের আচরণ দেখে শুরুতে মোবাইল ফোনে রেকর্ড দিয়ে দেয়। মোবাইল কেড়ে নিলেও এসআই পারভেজ রেকর্ড বন্ধ করেনি। ফলে সাড়ে ৩ ঘন্টা এসআই পারভেজের কথা রেকর্ড হয়। তবে মোবাইল থেকে সিম ও মেমোরি কার্ড নিয়ে নিলেও রেকর্ডটি থেকে যায় সেটের মেমোরিতে।

ঘটনার পরের দিন ৩ জানুয়ারি সাংবাদিক সনেট ও তার তিন বন্ধুকে মাদক সেবনের মামলা দিয়ে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠায় এসআই পারভেজ। সাতদিন কারাভোটের পর তারা জামিনে বের হয়। পরে তারা থানায় গিয়ে নিজেদের মোবাইল ফোন নিয়ে আসে। তবে অপর তিনজনের মোবাইল আগেই দেয়া হলেও সাংবাদিক সনেটের মোবাইল ও পরিচয়পত্র দেয় একমাস চারদিন পর।

পুঠিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা সাকিল আহমেদ বলেন, তিনজনের মোবাইল ফোন থানায় রাখা হলেও সাংবাদিক সনেটের ফোন এসআই পারভেজ তার বাড়িতে রেখেছিল। পরে তার বাড়ি থেকে ফোনটি উদ্ধার করা হয়েছে। এ জন্য তার মোবাইল হস্তান্তর করতে সময় লেগেছে। এসআই পারভেজের বাড়ি থেকে ফোন সেট উদ্ধার করা হলেও সেখানে সিম ও মোমেরি কার্ড ছিল না বলে জানান ওসি।

উল্লেখ্য, ঘটনার দুইদিন পর ৫ জানুয়ারি এসআই তৌফিক পারভেজকে রাঙ্গামাটি জঙ্গল প্রশিক্ষনের জন্য বদলি করা হয়। ৭ জানুয়ারি তিনি সেখানে যোগদান করেন। এর পর থেকে তিনি সেখানে রয়েছেন। তবে তিনি সংযুক্ত রয়েছেন পুঠিয়া থানায়।

বিএ-১৬/০৭-০২ (নিজস্ব প্রতিবেদক)