সরকারের ছত্রছায়ায় যারা থাকেন, তারাই বেশি দুর্নীতি করেন

ডিজিটাল আইনে দৈনিক যুগান্তরের সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে দায়েরকৃত মামলা প্রত্যাহার ও মুক্তির দাবিতে রাজশাহীতে প্রতিবাদ সভায় বক্তারা বলেছেন, অনুসন্ধানী সাংবাদিকতা না থাকলে গণতন্ত্র এগোবে না। সরকারও যথাযথভাবে উন্নয়নমূলক কাজ করতে পারবে না। সরকারের ছত্রছায়ায় যারা থাকেন, তারাই বেশি দুর্নীতি করেন।

আর এসব রাঘব বোয়ালদের দুর্নীতি প্রকাশ পেলেই সাংবাদিকরা তাদের রোষাণলে পড়েন। ফলে সাংবাদিকদের পেশাগত দায়িত্বপালনে ডিজিটাল আইন অন্তরায় হয়ে দাঁড়িয়েছে। সুতরাং দেশকে এগিয়ে নিতে হলে এ কালো আইন অবিলম্বে বাতিল করতে হবে।

রোববার বেলা ১১টায় রাজশাহী মেট্রোপলিটন প্রেসক্লাব কার্যালয়ে সাংবাদিক সমাজ, রাজশাহী’র ব্যানারে আয়োজিত প্রতিবাদ সভায় বক্তারা এসব কথা বলেন। যুগান্তর রাজশাহী ব্যুরোর রিপোর্টার এবং রাজশাহী সাংবাদিক ইউনিয়নের (আরইউজে) সাধারণ সম্পাদক তানজিমুল হকের সঞ্চালনায় সভায় বক্তারা বলেন, এ কালো আইনের মাধ্যমে সাংবাদিকদের কলম বন্ধ করার অপচেষ্টা চালানো হচ্ছে। এর ফলে দেশ পিছিয়ে যাচ্ছে। তাই দেশ ও জাতির স্বার্থে এ কালো আইন বাতিল করে সুষ্ঠু সাংবাদিকতার পথ সুগম করতে হবে।

সভায় বক্তারা বলেন, একর পর এক সাংবাদিকদের খুন করা হচ্ছে। দুর্বৃত্তরা সাংবাদিকদের ওপর হামলা করছে। সাগর-রুনি হত্যাকাণ্ড দীর্ঘ সময় অতিক্রম করলেও এখন পর্যন্ত এর চার্জশিট হয় নি। সম্প্রতি পাবনায় সুবর্না নদী নামে একজন নারী সাংবাদিক খুন হয়েছেন। অথচ মামলার সব আসামীদের গ্রেফতার করতে পারে নি পুলিশ। প্রকাশ্যে দিবালোকে পুলিশের চোখের সামনেই হত্যাকারীরা ঘুরে বেড়াচ্ছে।

পুলিশের ন্যাক্কারজনক ঘটনার দৃষ্টান্ত দিয়ে বক্তারা বলেন, এর আগে ২০১৪ সালের মার্চে পুলিশ যুগান্তরের সিনিয়র রিপোর্টার রাজশাহী ব্যুরো প্রধান আনু মোস্তফার নামে নাশকতার মামলা দিয়েছে। নগর পুলিশের তৎকালীন কমিশনার শামসুদ্দিনের নির্দেশে বোয়ালিয়া মডেল থানা পুলিশ উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে জামায়াত-শিবির ক্যাডারদের সাথে আনু মোস্তফাকে তিনটি মামলায় আসামি করেছে।

অথচ আনু মোস্তফার পিতা প্রয়াত সেকেন্দার আলী একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা এবং আওয়ামী লীগ নেতা ছিলেন। ছাত্রজীবনে তিনি ছাত্রলীগের রাজনীতির সাথে সম্পৃক্ত ছিলেন। পুলিশ কর্মকর্তা শামসুদ্দিনের বিভিন্ন অনিয়ম এবং দুর্নীতির সংবাদ প্রকাশ করায় আনু মোস্তফার বিরুদ্ধে এসব মামলা দেয়া হয়।

বক্তারা বলেন, একইভাবে ঢাকার নবাবগঞ্জের ওসির বিরুদ্ধে সংবাদ প্রকাশ করায় বর্তমানে পাঁচ সাংবাদিক হয়রানির শিকার হচ্ছেন। এছাড়া গত ২২ ফেব্রুয়ারি শুক্রবার রাতে যুগান্তর চট্রগ্রামের লোহাগাড়া প্রতিনিধি সেলিম উদ্দিনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।

লোহাগাড়ার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আবু আসলামের বিরুদ্ধে দুর্নীতি সংক্রান্ত সংবাদ প্রকাশ করায় তাকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এ ঘটনায় ইউএনও সাংবাদিক সেলিমকে গুলি করারও হুমকি দিয়েছেন বলে তার স্ত্রী মুর্শিদা বেগম অভিযোগ করেছেন। এ ধরনের ঘটনা অত্যন্ত আপত্তিজনক। আমরা এর প্রতিবাদ জানাচ্ছি।

বক্তারা বলেন, সরকারের সব সাফল্য পুলিশের কারণে ম্লান হয়ে যাচ্ছে। অবিলম্বে ডিজিটাল আইনের ব্যাপারে সরকারের সিদ্ধান্ত জানাতে হবে। এ কালো আইন বাতিল করতে হবে। অন্যথায় সাংবাদিকরা দেশব্যাপি আন্দোলন গড়ে তুলতে বাধ্য হবেন।

পাশাপাশি ঢাকার নবাবগঞ্জের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা গোলাম মোস্তফার অনিয়ম এবং দুর্নীতির মাধ্যমে অঢেল সম্পদের সংবাদ প্রকাশ করায় যুগান্তরের পাঁচ সাংবাদিকের বিরুদ্ধে ডিজিটাল আইনে যে মামলা করা হয়েছে তা প্রত্যাহার করতে হবে। এছাড়া গ্রেফতারকৃত কেরানীগঞ্জ প্রতিনিধি আবু জাফরের অবিলম্বে মুক্তির দাবি জানান বক্তারা।

সভায় আরইউজের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি প্রবীণ সাংবাদিক মোস্তাফিজুর রহমান খান আলম, রাজশাহী রক্ষা সংগ্রাম পরিষদের সাধারণ সম্পাদক জামাত খান, বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের (বিএফইউজে) সহসভাপতি মামুন অর রশিদ, মেট্রোপলিটন প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক আজিজুল ইসলাম, আরইউজের কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য মিজানুর রহমান টুকু, বাংলাদেশ ফটোজার্নালিস্ট অ্যাসোসিয়েশন রাজশাহী শাখার সভাপতি আসাদুজ্জামান আসাদ, সিনিয়র ফটোসাংবাদিক আজাহার উদ্দিন বক্তব্য দেন।

এছাড়াও উপস্থিত ছিলেন- জাগো নিউজ রাজশাহীর নিজস্ব প্রতিবেদক ফেরদৌস সিদ্দিকী, যুগান্তরের রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি মানিক রাইহান বাপ্পী, ফটোসাংবাদিক আজম খানসহ বিভিন্ন গণমাধ্যমে কর্মরত অর্ধশত সাংবাদিক।

বিএ-০৭/২৪-০২ (নিজস্ব প্রতিবেদক)