সেনাবাহিনীর আধুনিকায়নে ফোর্সেস গোল-২০৩০: প্রধানমন্ত্রী

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, আধুনিক ও চৌকস সেনাবাহিনী গড়ে তুলতে বর্তমান সরকার বদ্ধ পরিকর। এ লক্ষ্যে ফোর্সেস গোল ২০৩০ প্রণয়ন করে পর্যায়ক্রমে বাস্তবায়ন করা হচ্ছে।

রোববার রাজশাহী সেনানিবাসে এক অনুষ্ঠানে অংশ নিয়ে এই কথা বলেন শেখ হাসিনা। দুপুরে ইনফ্যান্টি রেজিমেন্টাল সেন্টারে বীর রেজিমেন্টের চার ব্যটেলিয়ানকে জাতীয় পতাকা প্রদান অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন প্রধানমন্ত্রী।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, সেনাবাহিনীর দক্ষতা বাড়াতে প্রশিক্ষণ প্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। ইতিমধ্যে আমরা সেনাবাহিনীতে তিনটি নতুন ডিভিশন প্রতিষ্ঠা করেছি। প্রথমবারেরমত সেনাবাহিনীতে প্যারাকমান্ডো বিভাগ গঠন করা হয়েছে।

দেশের আকাশ প্রতিরক্ষা সুসংহত করতে সংযোজিত হয়েছে এমএলআরএস ও মিজাইল রেজিমেন্ট। অভিযানিক সক্ষমতা বাড়াতে অত্যাধুনিক বিভিন্ন যুদ্ধাস্ত্র, হেলিকপ্টার, আর্টিলারী গান প্রভৃতি সংযোজন করা হয়েছে। এসময় সেনাবাহিনীর উন্নয়নে তার সরকারের কণ্যালমুখী বিভিন্ন কাজের কথা তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী।

তিনি বলেন, স্বাধীনতার পর অর্থনৈতিক সীমাবদ্ধতা থাকা সত্ত্বেও জাতির পিতা একটি শান্তিশালী সশস্ত্র বাহিনী গড়ে তোলার জন্য পদক্ষেপ নিয়েছিলেন। তার জন্য ১৯৭২ সালে কুমিল্লা সেনানীবাসে গড়ে তোলা হয় বাংলাদেশ মিলিটারী একাডেমী। তিনি ১৯৭৪ সালে প্রতিরক্ষা নীতি প্রণয়ন করেন। তার সুদুর প্রসারী প্রতিরক্ষা নির্দেশনার আলোকেই সেনাবাহিনীর উন্নয়ন প্রক্রিয়া চলমান। আজ বাংলাদেশ সেনাবাহিনী দেশ ও দেশের বাইরে সম্মানজনক অবস্থায় উন্নীত হয়েছে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ সেনাবাহিনী এ দেশের সম্পদ। এদেশের মানুষের ভরসা ও বিশ^াসে মূর্ত প্রতীক। তাই পেশাদারিত্বের কাঙ্খিত মান অর্জনের জন্য আপনাদের সকলকে দক্ষ, সামাজিক, ধর্মীয় মূল্যবোধে উদ্বুদ্ধ হয়ে সৎ ও মঙ্গলময় জীবনের অধিকারী হতে হবে। পবিত্র সংবিধান ও দেশ মাতৃকার সার্বভৌমত্ব রক্ষায় আপনাদের ঐক্যবদ্ধ থেকে অভ্যন্তরীন বিংবা বাহ্যিক যে কোন হুমকি মোকাবেলায় সদা প্রস্তুত থাকতে হবে।

একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সেনাবাহিনীর গুরুত্বপূর্ণ অবদানের কথা স্বীকার করেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সেনাবাহিনীর সদস্যরা গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বপালন করে দেশের গণষতান্ত্রিক ধারা সমুন্নত রাখতে ভুমিকা রেখেছেনে।

চতুর্থ বারেরমত সরকার গঠনের সুযোগ পাওয়ায় দেশবাসির প্রতি আমি কৃতজ্ঞ। এসময় নিজেকে জনগণের সেবক হিসেয়ে নিয়োজিত রাখার কখা জানান প্রধানমন্ত্রী। একই সাথে জনগণের প্রয়োজনে সেনাবাহিনী তাদের পাশে দাঁড়াবে-এই প্রত্যাশাও ব্যক্ত করেন।

শেখ হাসিনা আরো বলেন, বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে। আমরা মহাকাশে বঙ্গবন্ধু স্যাটালাইট-১ উৎক্ষেপন করেঠি। আমরা সমুদ্রসীমা জয় করেছি। আমরা সীমান্ত বিরোধ নিশ্পত্তি করে ছিটমহল সমস্যা সমাধান করেঠি। জলম স্থল ও আকাশ সীমায় আমাদের অবস্থান সুষ্পষ্ট ও সুসংহত করেছি।

বাংলাদেশ ইনফ্যান্ট রেজিমেন্ট সদস্যদের উদ্দেশ্যে প্রধানমন্ত্রী বলেন, পদাতিক বাহিনীর গতিশীলতার লক্ষ্যে ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের পাশাপাশি দ্বিতীয় রেজিমেন্ট প্রতিষ্ঠার প্রয়োজন আমরাই প্রথম উপলব্দি করি। স্বাধীন বাংলাদেশে দেশের নামে একটি রেজিমেন্ট থাকবে এই সীদ্ধান্ত নিয়েই আমরা ১৯৯৯ সালে বাংলাদেশ ইনফ্যান্টি রেজিমেন্ট গঠনের ব্যাপারে নীতিগত অনুমোদন গ্রহণ করি।

২০০১ সালের ২১ এপ্রিল আমি আনুষ্ঠানিকভাবে আমি বাংলাদেশ ইনফ্যান্টি রেজিমেন্টাল সেন্টারে পতাকা উত্তোলন করি। ২০১১ সালে মর্যাদাপূর্ণ জাতীয় পতাকা প্রদান করি। এই রেজিমেন্ট বাংলাদেশের স্বাধীনতা পরবর্তী প্রতিষ্ঠিত একমাত্র রেজিমেন্ট।

বর্তমানে এই রেজিমেন্টে দুটি প্যারাকমান্ডো ব্যাটালিয়নসহ ৪৩টি ইউনিট রয়েছে। এই রেজিমেন্ট সদস্যগণ দেশ ও দেশের বাইরে সুনামের সাথে দায়িত্বপালন করছেন। এই সুনাম অক্ষুন্ন রাখতে বাহিনীর সদস্যদের একনিষ্ঠভাবে কাজ করার আহবান জানান প্রধানমন্ত্রী। একই সাথে একে আধুনিক প্রশিক্ষণ কেন্দ্র হিসেবে গড়ে তুলতে তার সরকারের নেয়া নানান পদক্ষেপের কথাও তুলে ধরেন।

বিভিন্ন উন্নয়ন কর্মকাণ্ডে সেনাবাহিনীর অংশগ্রহন প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেন, সেনাবাহিনী তার মূল কাজের পাশাপাশি সবসময় জাতি গঠনমূলক কর্মকাণ্ডে নিয়োজিত রয়েছে। দীর্ঘ প্রত্যাশিত পদ্মা সেতু নির্মাণে তদারকি, যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়নে কক্সবাজার-টেকনাফ মেরিন ড্রাইভ সড়ক, ফেনী জেলায় মহিপাল ফ্লাইওভার নির্মাণ প্রকল্প, হাতিরঝিল প্রকল্পসহ বিভিন্ন জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে সেনা বাহিনী।

পাবর্ত্য চট্টগ্রামে রাস্তাঘাট এবং পুল-সেতু সেনাবাহিনী করে দিচ্ছে। এছাড়াও বিশ^ শান্তি প্রতিষ্ঠায় এবং বিভিন্ন বৈদেশিক মিশনে জাতিসংঘের নেতৃত্বে সেনাবাহিনীর সদস্যরা আত্মত্যাগ, কর্তব্য নিষ্ঠা ও পেশাদারিত্বের মাধ্যমে দেশের জন্য বয়ে আনছে সম্মান ও মর্যাদা।

সেনাবাহিনীতে নারীর ক্ষমতায়ন প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ২০১০ সালে সেনাবাহিনীতে সর্বপ্রথম দীর্ঘমেয়াদী কোর্সে নারী অফিসার ও ২০১৩ সালে সর্বপ্রথম নারী সৈনিক ভর্তির যুগান্তকারী স্বীদ্ধান্ত নেয়া হয়। সেনাবাহিনীর একজন নারী চিকিৎসককে সম্প্রতি মেজর জেনারেল পদোন্নতি দেয়া হয়েছে।

দীর্ঘ মেয়াদী কোর্সে নারী কর্মকর্তা থেকে শুরু করে কর্ণেল পর্যন্ত নারী কর্মকর্তাদের প্রদোন্নতি প্রদাণ এবং ইউনিট প্রধান হিসেবে নারী কর্মকর্তাদের দায়িত্বপ্রদান করা হয়েছে। বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ইতিহাসে প্রথমবারেরমত নারী পাইলট সংযোজন করে করে নতুন দিগন্ত সূচনা করা হয়েছে। জাতিসংঘ শান্তিরক্ষি মিশনেও নারী অফিসারদের প্রথম কনটিনজেন্ট অফিসার হিসেবে দেশের সুনাম বয়ে এনেছেন।

জাতীয় পতাকা পাওয়া ৭, ৮, ৯ এবং ১০ বীর সদস্যদের উদ্দেশ্যে প্রধানমন্ত্রী বলেন, পতাকা হলো জাতীর স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব সম্মান এবং মর্যাদার প্রতিক। পতাকার মান রক্ষা করা সকল সৈনিকের কর্তব্য। জাতীয় পতাকা পাবার যোগ্যতা অর্জন করা যে কোন ইউনিটের জন্য বিরল সম্মান ও গৌরবের। আজ স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বের প্রতিক আপনাদের হাতে তুলে দিয়েছি। এরই অর্জন কর্মদক্ষতা, কঠোর অনুশীলন ও কর্তব্য নিষ্ঠার স্বীকৃতি। জাতীয় পতাকার মর্যাদা রক্ষায় সদস্যদের যে কোন ত্যাগ স্বীকারে সদা প্রস্তুত থাকার আহবান জানান প্রধানমন্ত্রী।

এর আগে বেলা ১১টার দিকে সামরিক বাহিনীর একটি বিশেষ হেলিকপ্টারযোগে রাজশাহী সেনানিবাসে পৌঁছান প্রধানমন্ত্রী। পরে শহীদ কর্নেল আনিস প্যারেড গ্রাউন্ডে প্যারেড পরিদর্শন করবেন প্রধানমন্ত্রী। ওই অনুষ্ঠানে সেনাবাহিনীর ৭, ৮, ৯ এবং ১০ বীর’র ন্যাশনাল স্ট্যান্ডার্ড (জাতীয় পতাকা প্রদান) প্রদান করা হয়। এরপর লাঠি খেলা ও ডিসপ্লে উপভোগসহ ফটো সেশনে অংশ নেন প্রধানমন্ত্রী। এই অনুষ্ঠানে সেনা প্রধান লেফটেন্যান্ট জেনারেল আজিজ আহমেদসহ শীর্ষ সেনা কর্মকর্তারা অংশ নেন।

এদিকে, বিকেল ৩টার দিকে স্থানীয় সংসদ সদস্য ও প্রশাসনের শীর্ষ কর্মকর্তাদের সাথে বৈঠকের কথা রয়েছে প্রধানমন্ত্রীর। এদিন রাজশাহীতে তার আর কোনো রাজনৈতিক কর্মসূচি নেই। সেনানীবাস থেকেই বিকেলে ঢাকার উদ্দেশ্যে রওনা হবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

বিএ-০১/০৩-০২ (নিজস্ব প্রতিবেদক)