রাজাকার মূসার ফাঁসীর রায়ে এলাকাজুড়ে উৎসব

রাজশাহীর পুঠিয়ায় একাত্তরে মানবতা বিরোধী অপরাধে অভিযুক্ত কুখ্যাত রাজাকার আব্দুস সামাদ ওরফে মূসার ফাঁসীর রায় ঘোষনা করায় এলাকাজুড়ে উৎসবের আমেজ সৃষ্টি হয়েছে। মুক্তিযুদ্ধের সময় সংঘটিত হত্যা, গণহত্যা, অগ্নিসংযোগসহ মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলার এই রায় ট্রাইব্যুনাল।

মঙ্গলবার ট্রাইব্যুনালের চেয়ারম্যান বিচারপতি মো. শাহিনুর ইসলামের নেতৃত্বে আন্তজাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল এ আদেশ দেন।

মামলার প্রসিকিশন পক্ষে শুনানিতে ছিলেন দু’জন প্রসিকিউটর। এরা হচ্ছেন ঋষিকেষ সাহা ও জাহিম ঈমাম। অপরদিকে আসামী পক্ষের আইনজীবি ছিলেন আব্দুস সাত্তার পালোয়ান।

রাজাকার মূসার হাতে নিহত এলাকার জটু সরেন, টুনু মার্ডি ও আব্দুস সামাদের পরিবারের লোকজন বলেন, সকালে আদালত মুসার ফাঁসীর রায় ঘোষানার পর থেকে এলাকাজুড়ে স্বস্তির বাতাস বইতে শুরু করেছে। তারা এই রায় দ্রুত কার্যকর করার দাবী করেন।

এলাকাবাসী তসলিম উদ্দীন বলেন, মুসা রাজাকারের ফাঁসীর রায় ঘোষনার পর বিভিন্ন এলাকায় সাধারণ মানুষ মিষ্টি বিতরণ করেছেন।

মুক্তিযোদ্ধা ইলিয়াস আলী বলেন, স্বাধীনতা বিরোধী রাজাকার মূসার ফাঁসীর রায়ের মধ্যে দিয়ে এলাকা কলঙ্কমুক্ত হয়েছে।

উল্লেখ্য, কুখ্যাত রাজাকার মুসা মুক্তিযুদ্ধের সময় উপজেলার পশ্চিমভাগ ও গোটিয়া গ্রামে আদিবাসী ও বাঙালীদের ওপর নৃশংস হত্যাযজ্ঞ চালায়। সে সময় তার নেতৃত্বে সেখানে চলে হত্যা, হামলা, লুটপাট ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা। এ বিষয়ে গত প্রায় চার বছর পূর্বে পশ্চিমভাগ গ্রামের শহীদ আব্দুস সামাদের স্ত্রী রাফিয়া বেগম মানবতাবিরোধী আন্তজাতিক ট্রাইব্যুনালে একটি অভিযোগ দায়ের করেন।

ওই অভিযোগের প্রেক্ষীতে দু’দফা মানবতাবিরোধী আন্তজাতিক ট্রাইব্যুনালের তদন্তকারী দল ঘটনাস্থলে পরিদর্শন করেন। সর্বশেষ গত ২০১৭ ইং সালের ৯ জানুয়ারী তদন্তকারী দলের লোকজন উপজেলার বাঁশবাড়ীয়া, পশ্চিম ভাগ, আটভাগ, ধোকড়াকুল ও গোটিয়া গ্রামের ভূক্তভোগি ও সাধারন মানুষের বক্তব্য গ্রহণ করেন।

ওই সময় তদন্তকারী দলের পরিদর্শক ফারুক হোসেন ভূক্তভোগিদের জানিয়েছেন গত বছর ২৭ জুলাই রাজশাহীর সার্কিট হাউজে মূসার বক্তব্য গ্রহণ করা হয়। এরপর বিস্তারিত খোঁজ খবর জানতে দলটি ঘটনাস্থলে আসেন। সে সময় ৭১ সালে মূসার হাতে নির্মম ভাবে নিহত স্থানীয় ও আদিবাসীদের স্বজনরা তাদের বক্তব্য তুলে ধরেন।

রাফিয়া বেগমের অভিযোগ থেকে জানাগেছে ৭১ সালের ১৯ এপ্রিল এলাকায় মুক্তিবাহিনী আছে বলে মূসা রাজাকার পাক বাহিনীদের ডেকে আনে। এরপর দুর্গাপুর এলাকার নমিক ফকিরের ছেলে মফিজ উদ্দীন, গোটিয়া গ্রামের মানিক সর্দারের দু’ছেলে আদম আলী ও জাফর আলী এবং শুকদেবপুর গ্রামের মিরা হাজির ছেলে সিরাজ উদ্দীনকে চোখ বেঁধে লাইনে দাড় করিয়ে গুলির নিদের্শ দেয়। ওইদিন মূসা নিহতদের হাত ও পায়ের রগ কেটে মৃত্যু নিশ্চিত করে। এরপর তার নির্দেশে গুলি করে হত্যা করা হয় আক্কেল আলীর ছেলে আব্দুস সাত্তারকে।

পরে পশ্চিমভাগ গ্রামের ধন্যাট্য আদিবাসী লাড়ে হেমব্রমের বাড়ীতে গিয়ে তাকে হত্যা করে এবং আগ্নিসংযোগ করে লাটপাট চালায়। এছাড়া রাজাকার মূসা নিজেই এলাকার মংলা সরেনের ছেলে জটু সরেন, মুন্ডি মার্ডির ছেলে টুনু মার্ডি, ধোকড়াকুল এলাকার নেসু শাহ্ ছেলে রহমত শাহ্, বাঁশবাড়ী গ্রামের ইব্রাহিম সরকারের ছেলে ইসমাইল সরকার ও তার ছেলে আনেস সরকার, আব্দুল গফুরের ছেলে বদিউজ্জামান, বসিরের ছেলে কালা চাঁনকে হত্যা করে।

বিএ-১৮/২৭-০৮ (নিজস্ব প্রতিবেদক)