জামিন পেয়ে স্কুলে সেই শিক্ষক, ভয়ে স্কুল ছেড়েছে ছাত্রী

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় স্কুল অ্যান্ড কলেজের শ্লীলতাহানির শিকার ৬ষ্ঠ শ্রেণির (বর্তমানে ৭ম) এক ছাত্রী ভয়ে স্কুলে যাওয়া বন্ধ করে দিয়েছে। এদিকে মেয়ের উদ্ভূত মানসিক অবস্থায় মা-বাবা মানসিকভাবে ভেঙে পড়েছেন। তবে আলোচিত এ শ্লীলতাহানির মামলার আসামি, নিপীড়নে অভিযুক্ত শিক্ষক মো. দুরুল হুদা (৩৩) জামিনে কারামুক্ত হয়ে স্কুলে নিয়মিত হাজিরা দিচ্ছেন। এমনকি বিভিন্ন মাধ্যমে ওই ছাত্রীর মা-বাবাকে মামলা প্রত্যাহারের জন্য হুমকি দিচ্ছেন বলে থানায় ছাত্রীটির মা পৃথক সাধারণ ডায়েরি করেছেন।

জিদিতে বলা হয়েছে, অভিযুক্ত শিক্ষক দুরুল হুদা ভাড়াটে লোকজন দিয়ে মামলা প্রত্যাহারের জন্য তাদের হুমকি ও অপরিচিত নাম্বার থেকে মুঠোফোনে গালাগাল করছেন। এ ঘটনায় পরিবার চরম নিরাপত্তাহীনতায় রয়েছে এবং তাদের মেয়েরা ক্লাসে যেতে ভয় পাচ্ছে।

এদিকে অভিযোগ উঠেছে, শ্লীলতাহানির ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন অভিযুক্ত ও নিপীড়ক শিক্ষকের পক্ষ নিয়েছেন। ওই শিক্ষকের বিরুদ্ধে চাকরিবিধি ও বিশ্ববিদ্যালয় আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।

পুলিশ ও এজাহার সূত্রে জানা যায়, ৬ষ্ঠ শ্রেণির ওই ছাত্রীকে তাদের রাবি ক্যাম্পাসের বাসায় পড়াতেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় স্কুল এন্ড কলেজের প্রভাষক দূরুল হুদা। তিনি গত বছরের ১৬ অক্টোবর রাত সাড়ে ৮টার দিকে পড়ানো শেষে ওই ছাত্রীকে শ্লীলতাহানি করেন। এসময় মেয়ের চিৎকারে মা ঘটনাস্থলে এলে অভিযুক্ত শিক্ষক পালিয়ে যান। এ ঘটনায় ২০ অক্টোবর ছাত্রীর মা নগরীর মতিহার থানায় লিখিত অভিযোগ দেন।

মতিহার থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা জানান, ভুক্তভোগী ছাত্রীর মায়ের লিখিত অভিযোগ ‘নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে’ রেকর্ড করে ওই রাতেই আসামিকে গ্রেফতার করা হয়। পরদিন তাকে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়। গত ১৫ ডিসেম্বর আসামি জামিনে কারামুক্ত হয়েছেন বলেও জানান তিনি।

এদিকে অভিযুক্ত শিক্ষককে স্কুলে দেখে নির্যাতিত ছাত্রী স্কুলে যাওয়া বন্ধ করে দিয়েছে। সে এখন বাসায় কান্নাকাটিসহ অস্বাভাবিক আচরণ করছে।

ঘটনার ধারাবাহিকতায় ক্ষোভ ও অসন্তোষ প্রকাশ করে ছাত্রীর মা-বাবা ইত্তেফাককে বলেন, দীর্ঘ দুইমাস কারাগারে থাকলেও আসামির বিরুদ্ধে চাকরিবিধি এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না। তারা বিস্তারিত ঘটনা স্কুল অ্যান্ড কলেজ গভর্নিং বডির সভাপতি (পরিচালক, রাবি শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউট) এবং বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে বিভিন্ন সময় আপ টু ডেট অবগত করেছেন। কিন্তু গভর্নিং বডির সভাপতি এমনকি বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন আসামিকে সাময়িক বরখাস্তের আশ্বাস দিয়ে সময় ক্ষেপণ করছেন।

আসামি জামিনে মুক্ত হলেও তাকে সাময়িক বরখাস্ত পর্যন্ত করা হয়নি।’ জানতে চাইলে স্কুল অ্যান্ড কলেজের গভর্নিং বডির সভাপতি অধ্যাপক ড. আবুল হাসান চৌধুরী ইত্তেফাককে বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের মৌখিক নিষেধ থাকায় অভিযুক্ত শিক্ষককে সাময়িক বরখাস্ত করা হয় নি। যেহেতু উপাচার্য বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের সর্বোচ্চ কর্মকর্তা, তাই তার সিদ্ধান্ত অমান্য করা যাচ্ছে না’ বলেও মতামত দেন অধ্যাপক চৌধুরী।

কথা বলতে রাবি উপাচার্য প্রফেসর এম আব্দুস সোবহানের সঙ্গে মোবাইলে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও সেটি বন্ধ পাওয়া যায়। এমনকি উপাচার্য ভবনের ল্যান্ড ফোনে রিং হলেও রিসিভ করা হয়নি।

বিএ-০৮/০২-০১ (নিজস্ব প্রতিবেদক)