স্বাধীনতার ৪৯ বছর পর রাজশাহী পুলিশ লাইনসের গণকবরে শহীদদের স্মরণে স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণ করা হচ্ছে। পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) ড. মোহাম্মদ জাবেদ পাটোয়ারী সোমবার সকালে এর ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেছেন। খুব দ্রুত সময়ের মধ্যেই স্মৃতিস্তম্ভের নির্মাণ কাজ শুরু হবে বলে সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন।
১৯৭১ সালের ২৮ মার্চ দুপুরে রাজশাহী পুলিশ লাইনসে অবস্থানরত পুলিশের সদস্যরা খাবার খাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন। কেউ কেউ খাচ্ছিলেন। এমন সময়ে পাকিস্তানি বাহিনী মর্টার ও ভারী মেশিনগান নিয়ে দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব দিক দিয়ে পুলিশ লাইনে ঢুকে অতর্কিতে হামলা করে। ঘটনার আকস্মিকতায় পুলিশের সদস্যরা দিগবিদিক দৌড়াদৌড়ি করতে থাকেন। যাঁরা বাংকারে ছিলেন, তাঁরা প্রতিরোধ গড়ে তোলার চেষ্টা করেন।
কেউ কেউ অস্ত্র ও গুলি নিয়ে শুকনা ড্রেনে অবস্থান নেন। নেতৃত্বের অভাবে এবং শত্রুর আকস্মিক আক্রমণে আগের দিনগুলোর মতো তাঁরা আক্রমণ প্রতিহত করতে সক্ষম হননি। সেদিনেরর সেই ভয়াবহ যুদ্ধে শহীদ হন ১৯ জন পুলিশ সদস্য। পরে তাদের লাশ পুলিশ লাইনের পূর্ব অংশের একটি নিচু স্থানে সমাহিত করা হয়। এটিই রাজশাহী পুলিশ লাইনের গণকবর। কয়েকবছর আগেও সেটি ঝোপঝাড়ে পূর্ণ ছিলো।
সোমবার গণকবরটিতে গিয়ে দেখা যায়, মাটিভরাট করে জায়গাটি উঁচু করা হয়েছে। সীমানা প্রাচীরও রয়েছে। তিনজন পুলিশ সদস্যও সেখানে দায়িত্ব পালন করছেন। প্রাচীরের পাশে রয়েছে শহীদ পুলিশ সদস্যদের নামফলক। এতে ১৭ জনের নাম লেখা রয়েছে। তারা হলেন- শহীদ আর্মড এসআই এনায়েত খান, কনস্টেবল আবদুল আজিজ, ওসমান খান, আবদুর রহমান, আককাস আলী, রইছ উদ্দীন, জয়নাল আবেদীন, আলাউদ্দীন, আলীমুদ্দিন, আবদুল হামিদ, সাদেকুল ইসলাম, মেছের উদ্দিন, আবু ইলিয়াছ, আবদুর রাজ্জাক, আবদুল মালেক, সিরাজুল ইসলাম ও আবদুল আজিজ মোল্লা।
তবে এই গণকবরেই ১৯ জনের মরদেহ সমাহিত করা হয় বলে জানিয়েছেন সাবেক পুলিশ কর্মকর্তা ও গবেষক মাহবুব সিদ্দিকী। তিনি বলেন, ২৮ মার্চের সম্মুখ সমরের পর ২৯ মার্চ পাকিস্তানি বাহিনী বোয়ালিয়া থানার ওসি দৌলত খানের কাছে ১৮ জন পুলিশ সদস্যের লাশ হস্তান্তর করে। আর একজনের লাশ পুলিশ লাইনেই থেকে যায়। পরে পুলিশ লাইনের মধ্যেই আম ও বাবলাগাছে ঘেরা বাগানের মধ্যে ১৯ জন শহীদ পুলিশকে সমাহিত করা হয়। সেখানে শহীদের সংখ্যাটা হবে ১৯, ১৭ নয়।
দুজনের নাম না থাকার বিষয়ে রাজশাহী মহানগর পুলিশের মুখপাত্র গোলাম রুহুল কুদ্দুস বলেন, পুলিশ লাইনের পাশে শহীদ মামুন মাহমুদ স্কুল অ্যান্ড কলেজ মাঠে একটি স্মৃতিস্তম্ভ রয়েছে। সেখানেই সকল শহীদের নাম রয়েছে। আর গণকবরের স্মৃতিস্তম্ভটি যখন নির্মাণ করা হবে তখন সবার নামই থাকবে।
গবেষক মাহবুব সিদ্দিকী বলেন, একাত্তরের মহান মুক্তিযুদ্ধের শুরুতেই ২৬ মার্চ রাজশাহীর ডিআইজি মামুন মাহমুদকে কৌশলে রংপুর ব্রিগেড সদর দপ্তরে ডেকে নিয়ে গিয়ে হত্যা করা হয়। আর পুলিশ সুপার আবদুল মজিদকে ৩১ মার্চ জেলা প্রশাসকের বাসভবন থেকে ধরে নিয়ে গিয়ে হত্যা করে পাকিস্তানি বাহিনী।
এছাড়া গোটা জেলায় পুলিশের ৭৯ জনকে হত্যা করা হয়। এটা আমার গবেষণা। কিন্তু স্কুলমাঠের স্মৃতিস্তম্ভে ৫৪ জনের মতো নাম রয়েছে। বাকিদেরও নাম অন্তর্ভুক্ত করার জন্য আমি বলেছি।
গণকবরের ভিত্তিপ্রস্তর উদ্বোধনের পর এ নিয়ে একজন সাংবাদিকের প্রশ্নের জবাবে পুলিশ প্রধান ড. মোহাম্মদ জাবেদ পাটোয়ারী বলেন, শহীদদের নাম যেখানে থাকা উচিত সেখানে দেয়াটা সবার দায়িত্ব। রাজশাহীর মানুষ হিসেবে সাংবাদিকদেরও দায়িত্ব। কারও নাম যেন বাদ না পড়ে সে বিষয়ে যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে।
বিএ-১9/০৩-০২ (নিজস্ব প্রতিবেদক)