প্রখ্যাত কথাসাহিত্যিক হাসান আজিজুল হক আর নেই

উপমহাদেশের প্রখ্যাত কথাসাহিত্যক হাসান আজিজুল হক আর নেই (ইন্নালিল্লাহি…রাজিউন)। সোমবার রাত সাড়ে ৯টার দিকে রাজশাহীর বিহাসের নিজ বাসভবনে তিনি ইন্তেকাল করেন। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ম্যানেজমেন্ট স্টাডিজ বিভাগের অধ্যাপক মলয় কুমার ভৌমিক এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

প্রয়াত হাসান আজিজুল হকের মৃত্যুকালীন বয়স হয়েছিল ৮৩ বছর। তাঁর এক ছেলে ও তিন মেয়ে। মঙ্গলবার রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় জামে মসজিদে বাদ জোহর জানাজা অনুষ্ঠিত হবে। তবে দুপুর বারোটায় কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে সর্বসাধারণের শ্রদ্ধার জন্য তার মরদেহ রাখা হবে।

এর আগে ৯ সেপ্টেম্বর ঢাকায় চিকিৎসা শেষে বাড়ি ফিরে আসেন। তথন থেকেই তার ছোটখাটো শারীরিক সমস্যা ছিলো, বাড়িতে থেকে চিকিৎসা চালানোর পরামর্শ দিয়েছেন চিকিৎসকেরা।

অক্টোবর মাস থেকেই কথাসাহিত্যিক হাসান আজিজুল হক অসুস্থ হয়ে বাসায় ছিলেন। করোনার কারণে বাসায় রেখেই চলছিল তাঁর চিকিৎসা। বার্ধক্যজনিত সমস্যা ছাড়াও আগে থেকেই তাঁর হার্টে সমস্যা, ডায়াবেটিস ছিল। তাঁর শরীরে লবণের ঘাটতিও ছিল। করোনার কারণে তাঁকে হাসপাতালে নেওয়া হয়নি। চিকিৎসকের পরামর্শমতো বাড়িতেই তাঁর চিকিৎসা চলছিল। এ ছাড়া বাসাতেই তাঁর ইসিজি করানো হয়েছে। তিনি একবার পড়ে গিয়েছিলেন। সে জন্য এক্স-রে করানো হয়েছে। সেখানে হালকা ফ্র্যাকচার ধরা পড়েছে। এসব কারণে তিনি ধীরে ধীরে নিস্তেজ হয়ে পড়েছিলেন। গত ১৬ আগস্ট ছেলে ইমতিয়াজ হাসানের ফেসবুক স্ট্যাটাসে হাসান আজিজুল হকের অসুস্থতার কথা প্রথম জানা যায়। পরে উন্নত চিকিৎসার জন্য গত ২১ আগস্ট এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে তাঁকে ঢাকায় নেওয়া হয়।

গত ১৬ আগস্ট তাঁর ছেলের ফেসবুক স্ট্যাটাসে তাঁর অসুস্থতার কথা প্রথম জানা যায়। পরে উন্নত চিকিৎসার জন্য গত ২১ আগস্ট এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে তাঁকে ঢাকায় নেওয়া হয়। সেখানে তাঁকে প্রথমে জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউটে ভর্তি করা হয়, পরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশনায় সেই দিন রাতে তাঁকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে স্থানান্তর করা হয়। তাঁকে এই হাসপাতালে আনার পরদিন ২২ আগস্ট বিএসএমএমইউর ইন্টারনাল মেডিসিন বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক সোহেল মাহমুদ আরাফাতকে প্রধান করে একটি মেডিকেল বোর্ড গঠন করা হয়। এই মেডিকেল বোর্ডের অধীনেই তাঁর চিকিৎসা চলছে।

উল্লেখ্য, হাসান আজিজুল হক ১৯৩৯ সালের ০২ ফেব্রুয়ারি ভারতের পশ্চিমবঙ্গের বর্ধমান জেলার যব গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। বর্তমানে তার বয়স ৮২ বছর। ১৯৫৮ সালে এ কলেজ থেকে দর্শন শাস্ত্রে সম্মানসহ স্নাতক ডিগ্রি লাভ করে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হন।

১৯৬০ সালে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি লাভ করেন। ১৯৭৩ থেকে ২০০৪ সাল পর্যন্ত রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে দর্শন বিভাগে অধ্যাপনা করেন। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে ৩১ বছর শিক্ষকতার পর ২০০৪ সালে তিনি অবসর নিয়েছেন।

হাসান আজিজুল হক উপন্যাস, ছোটগল্প, নাটক ছাড়াও বিভিন্ন বিষয়ে বিশ্লেষণধর্মী রচনা লিখে দেশের সাহিত্যাঙ্গনে নিজের অবস্থান মজবুত করেছেন। বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অবসরে যাওয়ার পর থেকেই রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের অদূরে বিশ্ববিদালয় হাউজিং সোসাইটিতে (বিহাস) নিজ বাড়ি ‘উজান’-এ লেখালেখি নিয়ে মগ্ন ছিলেন হাসান আজিজুল হক।

এসএইচ-২৪/১৪/২১ (নিজস্ব প্রতিবেদক)