ধুমকেতু এক্সপ্রেসে ভ্রমণ রাশিয়া প্রেসিডেন্ট পুতিনের

বাংলাদেশ সফরে এসে রেল ভ্রমণ করেছেন রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন! গত মঙ্গলবার রাজাশাহী থেকে ঢাকাগামী ধুমকেতু এক্সপ্রেসে ভ্রমণ করেন তিনি। ইউক্রেন-রাশিয়া সংঘাত নিয়ে গোটা বিশ্ব যখন উদ্বিগ্ন, ঠিক তখনই বাংলাদেশে এসে চুপিসারে রেল ভ্রমণ করেছেন পুতিন, যে কথা কেউ জানতেও পারেনি!

কী অবাক হচ্ছেন? এবার আসি আসল ঘটনায়। চলতি মাসের ১০ তারিখে রাজশাহী থেকে ঢাকাগামী ধুমকেতু এক্সপ্রেসের এক যাত্রীর টিকিটে নামের স্থলে ভ্লাদিমির পুতিন লেখা দেখা যায়। ‘খ’ বগিতে এসি ‘বি’ ক্লাসে ভ্রমণ করেন তিনি। ওই টিকিটের মূল্য ২ হাজার ৪৪৬ টাকা। টিকিটটি কাটা হয়েছে মে মাসের ৭ তারিখে।

এই রেলযাত্রীর টিকিটের ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ভাইরাল হয়ে যায়। এ নিয়ে ফেসবুকে পোস্ট করেছেন অবসরপ্রাপ্ত রেলপথ মন্ত্রণালয়ের সাবেক অতিরিক্ত সচিব মাহবুব কবীর মিলন। বিষয়টি নিয়ে তিনি একটি দীর্ঘ পোস্টও দিয়েছেন। যা ইতোমধ্যে ভাইরাল হয়েছে। সময় নিউজের পাঠকদের জন্য মাহবুব কবীর মিলনের ফেসবুক পোস্টটি হুবহু তুলে ধরা হলো-

‘ভ্লাদিমির পুতিন’ সাহেব কবে আমাদের দেশে এসে রেল ভ্রমণ করে গেলেন তা আমরা কেউ জানলাম না, এটা খুবই দুঃখজনক বিষয়। এভাবে চলতে থাকলে ‘বাইডেন’ সাহেব এসে রেলে উঠলে সেটাও হয়তো কেউ জানতে পারব না।

প্রয়াত জর্জ ওয়াশিংটন বা উইন্সটন চার্চিল টিকিট কাটলেও অবাক হবার কিছু নেই।

ফান করলাম। কিন্তু সরকারি সিস্টেমে ফান করার কোনো অবকাশ নেই।

জগতের কোথাও পাসপোর্ট কিংবা অথরিটির ভেরিফাইড নাম ছাড়া অন্য নামে রেল টিকিট করতে পারবে না। কারণ টিকিট করার সময় সিস্টেম তা যথাযথভাবে যাচাই করেই তবে টিকিট ইস্যু করবে। ভারতে রেল টিকিট করার আগে বিশাল এক ফর্ম পূরণ করতে হয় বলে জানি। জগতজুড়ে কেন এত কঠিন সিস্টেম?

কোনো দুর্ঘটনা ঘটলে যাতে যাত্রীর পরিচয় বের করা যায়। কোনো ধরনের নাশকতায় যাতে জড়িত যাত্রীকে শনাক্ত করা যায়। এছাড়াও আরও অনেক কারণ আছে। আমাদের রেল অনলাইন ডাটাবেজ করছে কোনো রকম ভেরিফিকেশন ছাড়াই। যাত্রীকে তার নাম ও এনআইডি নাম্বার দিয়ে রেল সার্ভারে রেজিস্ট্রেশন করতে হয়। কিন্তু তা এনআইডি সার্ভার ভেরিফিকেশন ছাড়াই।

এনআইডি সার্ভারের সাথে রেল হুক-আপ করেনি। ফলে যাত্রী রেলে রেজিস্ট্রেশন করার সময় যে কোনো নাম এবং ১৩ বা ১৭ ডিজিটের যে কোনো সংখ্যা বসিয়ে রেজিস্ট্রেশন করে টিকিট করতে পারে। যেমন ‘১১১১১১….’ বা ‘২২২৩৩৩৩৩…..’। জর্জ বাইডেন বা ভ্লাদিমির চার্চিল, যে নামই দিন, রেজিস্ট্রেশন হয়ে রেল টিকিট কাটতে পারবেন।

এতে ভয়াবহ ব্যাপার দুটি।

এক. যে কোনো নাম ও এনআইডি সংখ্যা বসিয়ে বিপদ ঘটানো। দুই. আপনার অরিজিনাল নাম ও এনআইডি নাম্বার যদি কেউ জানে, সে সেটা ব্যবহার করে টিকিট কেটে আপনাকে বিপদে ফেলতে পারে।

এনআইডি সার্ভার হুক-আপ না করে আন্দাজে এনআইডি নাম্বার ও নাম দিয়ে কোনো ডাটাবেজ তৈরি করে সেটা ব্যবহার করার সুযোগ তৈরি করে দেয়ার সিস্টেম চালু করার কোনো অবকাশ কোনো সরকারি দফতরের হতেই পারে না।

রেলে সাড়ে তিনমাস থাকাকালীন প্রাণান্তকর চেষ্টা করেছিলাম নির্বাচন কমিশন সার্ভারের সাথে রেলের হুক-আপ করানোর জন্য। সিএনএসবিডি আমার অনুরোধে সফটওয়্যারসহ সবকিছু রেডি করে ফেলেছিল। আফসোস! রেলের কোনো সাড়া পাইনি।’

এসএইচ-২৭/১৬/২২ (নিজস্ব প্রতিবেদক)