এলেন, দেখলেন, জয় করলেন- রাজশাহীতে প্রধানমন্ত্রীর জনসভা ছিল অনেকটা এমনই। দীর্ঘ পাঁচ বছর পর স্থানীয় রাজনৈতিক কোনো কর্মসূচিতে অংশ নিয়ে প্রধানমন্ত্রী যেন রাজশাহীবাসী তথা উত্তরাঞ্চলের মানুষের মন জয় করে ফিরেছেন।
তার এই আগমনে প্রাণ সঞ্চারিত হয়েছে উত্তরাঞ্চলের আওয়ামী লীগে। হাওয়া লেগেছে নৌকার পালে। ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার পর রাজশাহীর বিশাল জনতার মঞ্চে দাঁড়িয়ে প্রধানমন্ত্রী দেখিয়েছেন- নতুন স্মার্ট বাংলাদেশের স্বপ্ন। আর সেই স্বপ্নের বুননেই এখন একট্টা আওয়ামী লীগ। সাংগঠনিকভাবেও আগের যে কোনো সময়ের চেয়ে হয়ে উঠেছে শক্তিশালী এবং উজ্জীবিত।
রাজশাহীতে প্রধানমন্ত্রীর এই বিশাল জনসভা যেন জনস্রোতে রূপ নিয়েছিল। কেবল দলীয় নেতাকর্মীরাই নন; প্রধানমন্ত্রীর কথা শুনতে, তাঁকে একনজর দেখতে এবং তাঁর আগামীর স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ার স্বপ্ন সারথি হতে যেন ঢল নেমেছিল সাধারণ মানুষেরও। তাই প্রধানমন্ত্রীর এই জনসভা যেন জনসমুদ্রে রূপ নিয়েছিল গত ২৯ জানুয়ারি। রাজশাহীর ঐতিহাসিক মাদ্রাসা মাঠের সীমানায় কেবল এই জনসভা সীমাবদ্ধ ছিল না। এই জনসভা ছড়িয়ে পড়েছিল শহরের আনাচে-কানাচেও।
আওয়ামী লীগ নেতাদের দাবি স্মরণকালের সবচেয়ে বড় জনসভা ছিল এটি। যারা এতদিন ধরে বলছিলেন- বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকার জনসমর্থন হারিয়েছে। তাদের সেই তীর্যক মন্তব্যের দাঁতভাঙা জবাব ছিল রাজশাহীর জনসভা। এই বিশাল জনসমুদ্রে দাঁড়িয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আগামীর স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণে আবারও নৌকায় ভোট চেয়েছেন; আদায় করেছেন ওয়াদাও।
তাই বলা হচ্ছে- রাজশাহীর ঐতিহাসিক মাদ্রাসা মাঠের জনসভায় প্রধানমন্ত্রীর এই ভাষণের পর রাজশাহীসহ উত্তরাঞ্চলের আওয়ামী লীগ এখন দারুণভাবে উজ্জীবিত হয়ে উঠেছে। জনসভায় নেতাকর্মীদের প্রতি প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনার পর নেতায়-নেতায় দ্বন্দ্ব দূর হয়েছে। আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে নতুন করে মাঠ গোছাতে ঐক্যবদ্ধ হচ্ছেন সবাই।
আর তাই সর্বকালের সর্ববৃহৎ এই জনসভা দলীয় অন্তর দ্বন্দ্ব কাটিয়ে ওঠার নিয়ামক শক্তি হিসেবে কাজ করছে। জাতীয় নির্বাচনের জন্য আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনার জনসভায় দেওয়া বার্তা মাঠপর্যায়ে দারুণ কাজে লাগবে। এর মধ্য দিয়ে রাজশাহীসহ গোটা উত্তরাঞ্চলের শীর্ষ নেতাদের মধ্যে ঐক্য ফিরে আসলে আগামীতে এই অঞ্চলে আওয়ামী লীগকে আর কোনো আসন হারাতে হবে না। সর্বোচ্চ হাইকমান্ডের নির্দেশিত পথে চলতে তাই সবাই সবকিছু ভোলার চেষ্টা করবেন।
রাজশাহী জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি অনিল কুমার সরকার বলেন, রাজশাহীসহ গোটা উত্তরাঞ্চলে আওয়ামী লীগ এমনিতেই অনেক শক্তিশালী ও সুসংগঠিত। বিশেষ করে রাজশাহী সিটি মেয়র এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন দলের প্রেসিডিয়াম সদস্য হওয়ার পর পুরো উত্তরাঞ্চলের আওয়ামী লীগকে সংগঠিত করেছেন। আর প্রধানমন্ত্রীর রাজশাহীর জনসভা নেতাকর্মীদের মধ্যে দ্বিগুণ শক্তি সঞ্চারিত হয়েছে বলে মনে করেন এই প্রবীণ নেতা।
রাজশাহী মহানগর আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা মোহাম্মদ আলী কামাল বলেন, ২৯ জানুয়ারি জনসভা ছিল সর্বকালের সেরা। এই জনসভায় প্রধানমন্ত্রী স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণের স্বপ্ন দেখিয়েছেন। বর্তমানে দেশের মানুষ ডিজিটাল বাংলাদেশের সর্বোচ্চ সুবিধা ভোগ করছেন। স্মার্ট বাংলাদেশ হলে এই সুবিধা কোন পর্যায়ে পৌঁছাবে তা সাধারণ মানুষ সহজেই অনুমান করতে পারছেন। তাই রাজশাহীতে প্রধানমন্ত্রীর এই জনসভা আগামী দিনে আওয়ামী লীগের পক্ষে জনরায় এনে দেওয়ার ব্যাপারে সহায়ক শক্তি হিসেবে কাজ করবে বলেও মনে করছেন- রাজশাহীর এই প্রবীণ আওয়ামী লীগ নেতা।
বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ও রাজশাহী সিটি মেয়র এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার জন্যই এমন রাজশাহী ও এতো উন্নত দেশ আমরা পেয়েছি। তিনি ক্ষমতায় না থাকলে বাংলাদেশ ভঙ্গুর অর্থনীতির দেশ হতো। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু আমাদের স্বাধীনতা দিয়েছেন। আর তার সুযোগ্য কন্যা শেখ হাসিনা দেশ গড়ছেন। এত মহামারী, দুর্যোগ ও বৈশ্বিক সংকটের মধ্যেও বাংলাদেশ এখন সুন্দর সমৃদ্ধ-উন্নত দেশ। বাংলাদেশ উন্নয়নের শিখরে পৌঁছে গেছে। তবে আমরা এগিয়ে যেতে চাই আরও অনেক দূর। আর রাজশাহীর বিশাল জনসমুদ্রে দাঁড়িয়ে প্রধানমন্ত্রী যেই নির্দেশা দিয়েছেন আমরা সেই নির্দেশিত পথেই এগোতে চাই।
এ সময় প্রধানমন্ত্রীর রাজশাহীর ঐতিহাসিক জনসভা সফল করার জন্য রাজশাহীসহ উত্তরাঞ্চলের সকল জেলা ও উপজেলার নেতাকর্মী ও সাধারণ মানুষের প্রতি কৃতজ্ঞা প্রকাশ করেন আওয়ামী লীগ নেতা লিটন।
এদিকে আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য প্রফেসর ড. আব্দুল খালেক বলেন, এক সময় বলা হতো রাজশাহীতে জামাত-শিবির ও বিএনপির খুব শক্ত অবস্থান। কিন্তু গত ২৯ জানুয়ারি রাজশাহীতে যে জনসভা হয়েছে প্রমাণ করে দিয়েছে যে এই কথা সত্য নয়। এই জনসভা শুধু ঐতিহাসিক মাদ্রাসা ময়দানের মধ্যেই সীমাবদ্ধতা ছিল না। পুরো রাজশাহী শহরই জনসভাস্থলে পরিণত হয়েছিল। এটা শুধু আমরা না সবাই দেখেছে। তো আমাদের দেশের যারা সাধারণ ভোটার তারা কিন্তু এই বিষয়গুলো লক্ষ্য করেন। তারা যেখানে জনসমর্থন বেশি দেখেন সেখানেই ভোট দিতে চান। আর বেশ কিছুদিন থেকেই বিএনপি প্রচার করতে চাইছিল আওয়ামী লীগের জনসমর্থন কমে গেছে। তাদেরকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দিতে হবে- ইত্যাদি কথাগুলো বলছিল। এগুলো দেখে মানুষও ভাবছিল যে সত্যিই কী আওয়ামী লীগের জনসমর্থন কমে গেছে?
তো রাজশাহীর এই বিশাল জনসভাই প্রমাণ করে দিয়েছে যে, আওয়ামী লীগের জনসমর্থন কমেনি বরং আগের যে কোনো সময় চেয়ে বেড়েছে। এর ইতিবাচক একটি প্রভাব আগামী জাতীয় নির্বাচনে দেখা যাবে বলেও উল্লেখ করেন- এই আওয়ামী লীগ উপদেষ্টা।
এআর-০১/০৪/০২ (উত্তরাঞ্চল ডেস্ক)