বিমান ছিনতাইকারী পলাশের লাশ নিতে চান না বাবা

ঢাকা থেকে দুবাইগামী বিমান ছিনতাইয়ের চেষ্টাকারী যুবক মো. পলাশ আহমদ র‌্যাবের তালিকাভূক্ত অপরাধী।সে নারী অপহরণ ও বিমান ছিনতাইয়ের মতো ঘটনায় নিজেকে জড়াবে এমনটি বিশ্বাস করতে পারছেন না বাবা মুদিদোকানি বাবা পিয়ার জাহান জর্দার।

পলাশের এমন অপকর্মে লজ্জিত বাবা পলাশের লাশ দেখতে চান না, এমনকি লাশ গ্রহণও করতে চান না।পলাশের পরিবারের কেউ লাশ দেখতেও যায়নি।

র‌্যাবের দেয়া তথ্যানুয়ায়ী, পলাশের বাড়ি নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁও উপজেলার পিরোজপুরের দুধঘাটা গ্রামে। তার বাবার নাম পিয়ার জাহান সরদার।

সোমবার পলাশের বাবা পিয়ার সর্দার জানান, পলাশ ছোট থেকেই তাদের অবাধ্য সন্তান ছিল। সে বখে গিয়েছিল বহু আগেই।তবে সে বিমান হামলার যে ঘটনা ঘটিয়েছে তা খুবই দুঃখজনক। সেই সঙ্গে পরিবারের জন্য মানহানিকর। এসব অপকর্মের জন্য পলাশের লাশ তিনি দেখতে চান না এমকি বাড়িতেও নিতে চান না বলে জানান পিয়ার জাহান সরদার।তবে পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে কথা বলে পলাশের লাশের বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেয়া হবে বলে জানান তিনি।

‘পলাশের লাশ আমি দেখতে চাই না। তবে পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে কথা বলে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেয়া হবে’-যোগ করেন পিয়ার সর্দার।

পলাশের বখে যাওয়ার বিষয়ে পিয়ার সর্দার জানান, চার ভাইবোনের মধ্যে সবার ছোট ছিল পলাশ। একমাত্র ছেলে সন্তান হওয়ায় পলাশের প্রতি সবার একটু বেশি ভালোবাসা ছিল। এসব কারণে সবার আদরে সে বেপরোয়া হয়ে উঠে।

পলাশের মৃত্যুর খবর শোনে মা শয্যাশায়ী হয়ে পড়েছে জানিয়ে পিয়ার সর্দার বলেন, ‘পলাশের খবর শোনার পর থেকে তার মা শয্যাশায়ী। তিনি বারবার মূর্ছা যাচ্ছেন।

ছেলের বখে যাওয়ার বিষয়ে আক্ষেপ করে মুদিদোকানি বাবা বলেন, ছেলে যে সুপথে ফিরে আসে সেজন্য আল্লাহর কাছে নামাজের পর দোয়া করতাম। ছেলেকেও অনেক বুঝিয়েছি, কাজ হয়নি।

দুবাই যাওয়ার জন্য বাবার কাছ থেকে পলাশ টাকা নেন।গত শুক্রবার সে তার বাবাকে জানায় সে আর বাংলাদেশে থাকবে না দুবাই চলে যাবে। এ কারণে সে বাবার কাছ থেকে ৫০০ দিরহাম দাবি করে। বাবা সেই টাকা দেন।

পলাশ সোনারগাঁর তাহেরপুর মাদ্রাসা থেকে দাখিল পাস করে সোনারগাঁ ডিগ্রি কলেজে ইন্টারমিডিয়েটে ভর্তি হয়। এরপর সে আর পড়ালেখা করেনি।

পলাশকে ২০১২ সালে তরুণী অপহরণের অভিযোগ এবং ৮ লাখ টাকা মুক্তিপণ আদায়ের অভিযোগে গ্রেফতার করা হয়েছিল।তখন তার বয়স ছিল মাত্র ১৮ বছর। এসব চাঞ্চল্যকর তথ্য জানিয়েছেন র‌্যাবের লিগ্যাল ও মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক মুফতি মাহমুদ খান।

সোমবার বেলা ৩টায় র‌্যাব সদর দফতরে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, পলাশ আগেও বিভিন্ন অপরাধের সঙ্গে জড়িত ছিল। ২০১২ সালের মার্চে পলাশ আহমেদ ও তার এক সহযোগীকে গ্রেফতার করা হয়। তার অপরাধ ছিল, সে একজন নারীকে অপহরণ করে আট লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করে। র‌্যাবের ক্রিমিনাল ডেটাবেইজে এ তথ্য লেখা আছে।

র‌্যাবের অপরাধী তথ্যভান্ডারের বিবরণ দিয়ে মুফতি মাহমুদ আরও জানান, পলাশের জন্ম ১৯৯৪ সালে। ২০১২ সালে যখন পলাশকে গ্রেফতার করা হয় তখন তার বয়স ছিল মাত্র ১৮ বছর। ওই সময়ই সে নিজেকে বিবাহিত বলে দাবি করে।

মুফতি মাহমুদ আরও জানান, বিমান ছিনতাই চেষ্টার ওই ঘটনার পর র‌্যাব-৭ ঘটনাস্থলে যায়। র‌র‌্যাবের বোমা ডিস্পোজাল ইউনিট সেখানে কাজ করে।পলাশের শরীরে বিস্ফোরকসদৃশ যা পাওয়া গেছে তাতে কোনো বিস্ফোরক ছিল না।এটা ভুয়া একটা জিনিস ছিল, যেখানে ভুয়া তার-সার্কিট দিয়ে ভেস্টের মতো তৈরি করা হয়েছিল।

এর আগে সকালে এক মুঠোফোন বার্তায় র‌্যাবের পক্ষ থেকে পলাশের পরিচয় শনাক্ত হওয়ার বার্তা জানানো হয়।র‌্যাব জানায়, ছিনতাই চেষ্টাকারী ওই যুবকের নাম মো. পলাশ আহমেদ। তার বাড়ি নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁওয়ে। সে বিমানের ঢাকা-চট্টগ্রাম অভ্যন্তরীণ রুটের যাত্রী ছিল।

প্রসঙ্গত বাংলাদেশ বিমানের দুবাইগামী একটি উড়োজাহাজ ছিনতাইয়ের চেষ্টা পাইলট-ক্রুদের তাৎক্ষণিক বুদ্ধিমত্তা ও যৌথবাহিনীর অভিযানে ব্যর্থ হয়েছে। রোববার বিকালে হযরত শাহজালাল (রহ.) আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে চট্টগ্রাম শাহ আমানত বিমানবন্দরের উদ্দেশে ছেড়ে যাওয়ার পর মধ্যাকাশে এ ঘটনা ঘটে।

এর পর অত্যন্ত সুকৌশলে ককপিটের দরজা বন্ধ করে বিমানটিকে শাহ আমানত বিমানবন্দরে জরুরি অবতরণ করেন পাইলট। সেখানে উদ্ধার অভিযানের সময় উড়োজাহাজে থাকা অস্ত্রধারী ছিনতাইকারীকে আহতাবস্থায় আটক করা হয়। পরে তার মৃত্যু ঘটে। এর আগে বিমানটির যাত্রী-ক্রুসহ সবাইকে নিরাপদে সরিয়ে নেয়া হয়।

বিএ-১৬/২৫-০২ (আঞ্চলিক ডেস্ক)