যশোরে মাদরাসাছাত্রীকে শ্লীলতাহানি, অধ্যক্ষসহ গ্রেফতার ৪

যশোরের শার্শায় পঞ্চম শ্রেণির এক মাদরাসাছাত্রীকে শ্লীলতাহানির অভিযোগে অভিযুক্ত শিক্ষক ও অধ্যক্ষসহ চারজনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। বুধবার রাতে ও বৃহস্পতিবার সকালে তাদের গ্রেফতার করে থানায় আনা হয়। এ ঘটনায় বৃহস্পতিবার সকালে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে শার্শা থানায় মামলা করা হয়েছে।

গ্রেফতাররা হলেন- শার্শা উপজেলার বাগআঁচড়া এলাকার গোলাম মোল্লার ছেলে অভিযুক্ত শিক্ষক শরিফুল ইসলাম, তদন্ত কমিটির প্রধান ও মাদরাসা পরিচালনা কমিটির সদস্য পল্লী চিকিৎসক নুরুল ইসলাম, ওই মাদরাসার অধ্যক্ষ মহসিন আলী ও অফিস সহকারী জামাল উদ্দিন।

ওই ছাত্রীর বাবা জিয়াউর রহমান বলেন, দীর্ঘদিন ধরে শার্শার বাগআঁচড়া সাতমাইল আলিম মহিলা মাদরাসার এবতেদায়ী শাখার সহকারী শিক্ষক শরিফুল ইসলাম পঞ্চম শ্রেণিতে পড়ুয়া আমার মেয়েকে শ্লীলতাহানি করে আসছে। এর আগেও ওই শিক্ষক তাকে কয়েকবার কুপ্রস্তাব দেয়। মেয়েটি লোকলজ্জার ভয়ে কাউকে কিছু বলেনি।

রোববার ওই শিক্ষক পঞ্চম শ্রেণির কক্ষে পাঠদানের সময় অন্যদেরকে লিখতে দিয়ে মেয়েটিকে কাছে ডেকে তার স্পর্শকাতর স্থানে হাত দেয়। এরপর তার আচরণ এতটাই বেপরোয়া হয়ে যায় যে বাধ্য হয়ে মেয়েটি মাদরাসার শিক্ষিকা শাহনাজ পারভীন ও বাড়ির স্বজনদের বিষয়টি বলে দেয়। মাদরাসার শিক্ষিকা বিষয়টি অধ্যক্ষ মহসিন আলীকে জানান।

এদিকে ওই ছাত্রীর বাবা বিষয়টি অধ্যক্ষসহ পরিচালনা কমিটিকে জানানোর পর প্রাথমিকভাবে ঘটনার সত্যতা পাওয়ায় ওই শিক্ষককে সাময়িকভাবে বরখাস্ত করা হয়। ঘটনা তদন্তে মাদরাসা পরিচালনা কমিটির সদস্য পল্লী ডাক্তার নুরুল ইসলামকে প্রধান করে তিন সদস্যের একটি কমিটি গঠন করা হয়। এরপর শুরু হয় দেন-দরবার ও সমঝোতা। ওই ছাত্রীর বাবা ন্যায় বিচারের পক্ষে থাকায় বিপাকে পড়ে শিক্ষক, অধ্যক্ষসহ পরিচালনা কমিটির সদস্যরা। এরপর হুমকি দেয়া হয় ওই ছাত্রীর বাবাকে। বাধ্য হয়ে গতকাল বুধবার রাতে থানায় অভিযোগ দায়ের করেন ওই ছাত্রীর বাবা।

বাগআঁচড়া পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রের ইনচার্জ এসআই শুকদেব রায় বলেন, অভিযোগ পাওয়ার পর রাতেই অভিযুক্ত শিক্ষক শরিফুল ইসলামকে গ্রেফতার করা হয়। তথ্য গোপন করার অভিযোগে গ্রেফতার করা হয় মাদরাসার অধ্যক্ষ মহসিন আলী ও অফিস সহকারী জামাল উদ্দিনকে। বৃহস্পতিবার সকালে গ্রেফতার করা হয় মাদরাসা পরিচালনা কমিটির সদস্য পল্লী ডাক্তার নুরুল ইসলামকে। তিনি ঘটনাটি মীমাংসার দায়িত্ব নিয়ে সমঝোতা করছিলেন।

মাদরাসার অধ্যক্ষ মহসিন আলী বলেন, এ ঘটনার দায়িত্ব পরিচালনা কমিটি নিয়েছে। কমিটি বসে বিষয়টি দেখবেন বলে আশ্বাস দেয়ায় আমি আর বিষয়টি নিয়ে কিছু বলেনি। তবে প্রাথমিকভাবে ঘটনার সত্যতা পাওয়ায় শিক্ষক শরিফুল ইসলামকে বরখাস্ত করা হয় এবং বিষয়টি শার্শা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে অবহিত করেছি। বুধবার রাতে আমাকে বাড়ি থেকে গ্রেফতার করে থানায় নিয়ে আসে পুলিশ।

মাদরাসা পরিচালনা কমিটির সভাপতি ইয়াকুব হোসেন বিশ্বাস বলেন, পরিবারের অভিযোগ পেয়ে এ ব্যাপারে সোমবার (২৯ এপ্রিল) মাদরাসা পরিচালনা কমিটির মিটিং ডেকে ওই শিক্ষককে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়। ৭ দিনের সময় দিয়ে ঘটনাটি তদন্ত করার নির্দেশ দেয়া হয়।

তারপরও বিষয়টি শিক্ষা অফিসার, এলাকার চেয়ারম্যান ও উপজেলা নির্বাহী অফিসারকে অবহিত করা হয়। বুধবার রাতে ও বৃহস্পতিবার সকালে পুলিশ তাদের গ্রেফতার করে থানায় নিয়ে গেছে। অন্যায়ের সঙ্গে জড়িতরা শাস্তি পাবে এটা আমিসহ সবাই চাই।

শার্শা থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা এম মশিউর রহমান জানান, ওই ছাত্রীর বাবার অভিযোগের ভিত্তিতে অভিযুক্ত শিক্ষকসহ চারজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এ ঘটনায় বৃহস্পতিবার সকালে নারী ও শিশু নির্যাতন আইনে থানায় একটি মামলা হয়েছে।

বিএ-১২/০২-০৫ (আঞ্চলিক ডেস্ক)