নিজ বাড়িতে কবরের জায়গাও পেল না নয়ন বন্ড

শেষ পর্যন্ত নিজ বাড়িতে কবর দেয়ার জায়গা হলো না পুলিশের সঙ্গে ‘বন্দুকযুদ্ধে’ নিহত বরগুনার রিফাত শরীফ হত্যামামলার প্রধান আসামি সাব্বির আহমেদ নয়ন ওরফে নয়ন বন্ডের। স্থানীয়দের বাধার মুখে লাশ দাফন করতে হয়েছে তার মামাবাড়িতে।

মঙ্গলবার বিকালে বরগুনার গৌরচন্না ইউনিয়নে মামার বাড়িতে নামাজে জানাযা শেষে নয়ন বন্ডের দাফন সম্পন্ন হয়। এর আগে দুপুরে পুলিশের কাছ থেকে নয়নের মৃতদেহ গ্রহণ করে তার মামা মিজানুর রহমান।

মঙ্গলবার ভোর রাতে বরগুনা উপজেলা সদরের বুড়িরচর ইউনিয়নের পুরাকাটায় পুলিশের সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে নিহত হন রিফাত শরীফ হত্যামামলার প্রধান আসামি ও বরগুনার সন্ত্রাস জগতের গডফাদার নয়ন বন্ড।

তথ্যের সত্যতা নিশ্চিত করে বরগুনার পুলিশ সুপার (এসপি) মারুফ হোসেন জানান, দুপুর ১টার দিকে বরগুনা জেনারেল হাসপাতালের মর্গে নয়নের মৃতদেহের ময়নাতদন্ত হয়। পরে মৃতদেহ তার মামা মিজানুর রহমানের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। তিনি দাফনের জন্য নয়নের লাশ নিয়ে যান।

ময়নাতদন্ত শেষে নয়নের মৃতদেহ বরগুনা জেনারেল হাসপাতালের মর্গে নিয়ে রাখা হয়। সেখানে হাজারো উৎসুক জনতা ভীর জমায় শীর্ষ সন্ত্রাসী নয়ন বন্ডের মৃত মুখখানা দেখার জন্য। পুলিশের কড়া নিরাপত্তার মধ্যে তারা দীর্ঘ সময় লাইনে দাঁড়িয়ে শেষবারের মতো নয়ন বন্ডের মুখখানা দেখে যান।

পুলিশ জানিয়েছে, রিফাতের মৃতদেহ ময়নাতদন্ত শেষে দাফনের জন্য বরগুনা পৌর শহরের বিকেবি রোডের ধানসিঁড়ি এলাকায় নিয়ে যেতে যান তার স্বজনরা। কিন্তুতে তাতে বাধা দেন নয়নের অত্যাচারে অতিষ্ঠ এলাকাবাসী।

পরে নয়নের মৃতদেহ দাফনের জন্য পটুয়াখালীর দশমিনায় পুরাতন বাড়িতে নিয়ে রওয়ানা হন মামা মিজানুর রহমানসহ স্বজনরা। বিষয়টি পুরাতন বাড়ির লোকেরা জানতে পেরে নয়নের মৃতদেহ দশমিনায় নিয়ে যেতে নিষেধ করেন। সেখানে তার দাফন হবে না বলে জানিয়ে দেন।

এর ফলে মাঝপথে মৃতদেহ ফিরিয়ে আনেন নিহতের মামা মিজানুর রহমান। পরে তিনি মৃতদেহ বরগুনার গৌরীচন্না ইউনিয়নে নিজের গ্রামের বাড়িতে নিয়ে যান। সেখানে নামাজে জানাযা শেষে বিকালে পারিবারিক গোরস্তানে লাশ দাফন করা হয় বলে জানিয়েছে বরগুনা সদর থানা পুলিশ।

প্রসঙ্গত, গত ২৬ জুন সকাল সাড়ে ১০টায় বরগুনা সরকারি কলেজের সামনে নয়ন বন্ড তার সন্ত্রাসী বাহিনী নিয়ে রিফাত শরীফের ওপর হামলা করে। স্ত্রীর শত চেষ্টার পরেও তার সামনেই রিফাত শরীফকে নির্মমভাবে কুপিয়ে জখম করে নয়ন বন্ড ও তার সহযোগী রিফাত ফরাজী।

গুরুতর আহত কলেজছাত্র রিফাত শরীফকে উদ্ধার করে প্রথমে বরগুনা জেনারেল হাসপাতালে এবং পরে দুপুর ১টার দিকে বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ (শেবাচিম) হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। বিকাল সোয়া ৪টায় হাসপাতালের অপারেশন টেবিলে মৃত্যু হয় রিফাতের।

এ ঘটনায় রিফাতের বাবা দুলাল শরীফ বাদী হয়ে নয়ন বন্ড ও তার বাহিনীর সেকেন্ড-ইন কমান্ড রিফাত ফরাজীসহ ১২ জনকে নামধারী এবং ৪-৫ জনকে অজ্ঞাতনামা আসামি করে হত্যা মামলা দায়ের করেন। ওই মামলায় এজাহারভুক্ত ৪ জন ও হত্যার সঙ্গে জড়িত সন্দেহে আরো ৪ জন, মোট ৮ জনকে গ্রেফতার করে পুলিশ।

মঙ্গলবার ভোররাতে নয়ন বন্ডসহ আসামিদের পালানোর চেষ্টার খবর পেয়ে তাদের গ্রেপ্তারে বরগুনা সদরের বুড়িরচর ইউনিয়নের পুরাকাটা গ্রামে অভিযান চালায় পুলিশ। সেখানে নয়ন বন্ড বাহিনীর সঙ্গে ‘বন্দুকযুদ্ধে নয়ন বন্ড ঘটনাস্থলেই নিহত হন।

বিএ-১৩/০২-০৭ (আঞ্চলিক ডেস্ক)