বাজারে নতুন পেঁয়াজ, কমছে দাম

ফরিদপুরের বাজারে উঠতে শুরু করেছে মুড়িকাটা পেঁয়াজ। এতে দুদিনের ব্যবধানে কেজিপ্রতি পেঁয়াজের দাম কমেছে ৬২ টাকা।

গত দুদিন আগেও কেজিপ্রতি পেঁয়াজ ২৩৭ টাকায় পাইকারি বিক্রি হলেও বর্তমানে তা ৬২ টাকা কমে প্রতিকেজি ১৭৫ টাকায় নেমে এসেছে। আর নতুন মুড়িকাটা পেঁয়াজ প্রতিকেজি পাইকারি বিক্রি হচ্ছে ১২০ টাকা থেকে ১৩০ টাকা দরে।

এখন থেকে দাম আর বাড়বে না বলে ধারণা করছেন পেঁয়াজ চাষীরা।

ফরিদপুরের পেঁয়াজের জন্য খ্যাত সালথা ও নগরকান্দায় বাজার ঘুরে এমন তথ্য জানা গেছে।

পেঁয়াজ চাষীরা জানান, চারা রোপণকৃত হালি পেঁয়াজ এখন বিক্রি প্রায় শেষ পর্যায়ে। আর গুঁটি থেকে উৎপাদিত মুড়িকাটা পেঁয়াজ বর্তমানে উঠতে শুরু করেছে। বেশি দাম পঁওয়ার আশায় অনেক চাষী তাদের ক্ষেত থেকে আগাম মুড়িকাটা পেঁয়াজ উঠাতে শুরু করেছেন। অনেক চাষী পেঁয়াজের পাশাপাশি পেঁয়াজ গাছের পাতা (সাঁই) বাজারে আনছেন। এর এক মোঠা বিক্রি করছেন ৫০ থেকে ৭৫ টাকায়।

ফরিদপুর সদরসহ ৯ উপজেলায় কম-বেশি পেঁয়াজ উৎপাদন হয়। এর মধ্যে সব চেয়ে বেশি পেঁয়াজ উৎপাদন হয় সালথা ও নগরকান্দা উপজেলায়। এর পরই চরভদ্রাসন, সদরপুর, বোয়ালমারীতে পেঁয়াজ আবাদ করা হয়।

এ সব উপজেলার কয়েকজন কৃষক আক্ষেপ করে বলেন, গত কয়েক বছর যাবৎ মৌসুমের সময় পেঁয়াজ কেজিপ্রতি ১২ থেকে ২০ টাকায় বিক্রি করেছি। এতে আমাদের উৎপাদন খরচ ওঠেনি। তাই গত কয়েক বছর যাবৎ আমরা পেঁয়াজ আবাদ কমিয়ে দিয়েছিলাম। দামের বিষয়ে সরকার যদি কেজিপ্রতি অন্তত ৩০ থেকে ৩৫ টাকা ধরে দিত তাহলে আমরা পেঁয়াজ আবাদ করে একদিকে যেমন লাভবান হতাম, আর পাশাপাশি আমাদের উৎপাদন খরচ উঠে আসত। কিন্তু ঊর্ধ্বতন মহলের পেঁয়াজ নিয়ে কোনো দিকনির্দেশনা ও কার্যকরী বাজার মনিটরিং না থাকায় এবার পেঁয়াজ নিয়ে সবারই বিপাকে পড়তে হয়েছে।

ফরিদপুরের সালথা হাটের ক্রেতা হালিম শেখ, জামাল ফকির বলেন, কী আর বলব, পেঁয়াজ দিয়ে তরকারি খেয়ে অভ্যাস হয়েছে, এখন আর পেঁয়াজ ছাড়া গৃহিণীরা রান্না করতে চায় না। বাধ্য হয়ে আগে যেখানে ১ থেকে ২ কেজি কিনতাম, এখন ১০০ কিংবা ২০০ গ্রাম কিনে কোনোরকমে খেতে হয়। সরকার যদি এই পেঁয়াজ চাষীদের দিকে একটু নজর দিত এবং মধ্যস্বত্বভোগীদের দিকে খেয়াল রাখত তাহলে হয়তো এমন অবস্থা আমাদের হতো না।

বোয়ালমারী উপজেলার চিতার বাজার, ময়েনদিয়া বাজার, জয় পাশা পেঁয়াজ বাজারের ব্যবসায়ীরা জানান, শনিবার বাজার শুরুর কয়েক ঘণ্টার মধ্যে চাষীরা আগাম জাতের মুড়িকাটা পেঁয়াজ নিয়ে হাজির হন। এ সময় ক্রেতারা ওই পেঁয়াজের দিকে ঝুঁকে পড়েন।

ব্যবসায়ী সামাদ শেখ জানান, চিতার বাজারের ১ মণ পেঁয়াজ নিয়ে যাই, হঠাৎ করে দেখি দাম কেজি প্রতি ৪০ টাকা কমে গেছে। পরে বাধ্য হয়ে সাত হাজার টাকা মণে সেই পেঁয়াজ বিক্রি করেছি।

এ এলাকার পেঁয়াজ চাষী হাসেম মোল্লা বলেন, হঠাৎ করে শনিবার থেকে এই বাজারে পেঁয়াজের দর মণ প্রতি দুই হাজার টাকা কমে গেছে।

চিতার বাজারের বণিক সমিতির সভাপতি মওলা বিশ্বাস জানান, গত দুই দিন ধরে পেঁয়াজের দর কমছে।

এদিকে জেলার সালথা উপজেলার মাঝারদিয়া, বালিয়াগট্টি বাজারে পুরনো পেঁয়াজ সর্বোচ্চ সাড়ে সাত হাজার টাকায় এবং মুড়িকাটা পেঁয়াজ সাড়ে ৫ হাজার টাকায় বিক্রি হয়েছে।

ফরিদপুর শহরের হাজী শরীয়াতুল্লাহ বাজার ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পদ নূর ইসলাম মোল্লা বলেন, শনিবার থেকে এ বাজারে পুরনো পেঁয়াজ ১৮০ টাকা কেজি এবং নতুন মুড়িকাটা পেঁয়াজ ১২০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।

ফরিদপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক কৃষিবিদ কার্তিক চন্দ্র চক্রবর্তী জানান, চলতি শীত মৌসুমে ফরিদপুরে আগাম জাতের মুড়িকাটা পেঁয়াজের আবাদ হয়েছে ছয় হাজার হেক্টর জমিতে। যে সব চাষী আগে পেঁয়াজ রোপণ করেছিলেন, তারা এখন উৎপাদিত পেঁয়াজ বাজারের আনতে শুরু করেছেন। এতে পেঁয়াজের দাম কমতে শুরু করেছে।

তিনি বলেন, আর ২ সপ্তাহ পরে অনেক চাষী আগাম জাতের পেঁয়াজ বাজারে তুলতে পারবেন।

জেলা কৃষি বিভাগ জানায়, এ জেলার ৯ উপজেলাতে পেঁয়াজ মৌসুমে ৪ লাখ ৬০ হাজার মেট্রিক টন পেঁয়াজের উৎপাদন হয়। চলতি শীত মৌসুমের আগাম জাতের মুড়িকাটা পেঁয়াজের উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ৬০ হাজার মেট্রিক টন। এ ছাড়াও এ জেলায় হালি পেঁয়াজ ও দানা পেঁয়াজও উৎপাদন হয়।

শনিবার পেঁয়াজ চাষীদের সঙ্গে মাঠে গিয়ে কথা বলে এসে ফরিদপুরের জেলা প্রশাসক অতুল সরকার সাংবাদিকদের জানান, চাষীরা অল্প কিছু দিনের মধ্যেই ঘরে তুলতে পারবে তাদের পেঁয়াজ। আর এতে করে পেঁয়াজের বাজার স্বাভাবিক হবে বলে আশা করা হচ্ছে।

বিএ-১৯/১৭-১১ (আঞ্চলিক ডেস্ক)