মুক্তিযোদ্ধার সনদপত্র ছিঁড়ে ফেললেন চিকিৎসক

টাঙ্গাইল জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন এক মুক্তিযোদ্ধার চিকিৎসা নথি থেকে মুক্তিযোদ্ধার সনদপত্র ছিঁড়ে ফেলার অভিযোগ উঠেছে। গত ২১ নভেম্বর হাসপাতালের অর্থোপেডিক সার্জারি বিভাগের প্রধান ও সহযোগী অধ্যাপক ডা. মো. শহীদুল্লাহ কায়সারের বিরুদ্ধে এ অভিযোগ উঠেছে।

তবে এ অভিযোগ অস্বীকার করেছেন ডা. মো. শহীদুল্লাহ কায়সার। তিনি শেখ হাসিনা মেডিকেল কলেজের সহযোগী অধ্যাপক, টাঙ্গাইল জেনারেল হাসপাতালের অর্থোপেডিক বিভাগের বিভাগীয় প্রধান এবং বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশন (বিএমএ) টাঙ্গাইল জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক।

এ ঘটনায় সোমবার তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করেছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।

ওই মুক্তিযোদ্ধার নাম মো শাজাহান ভূঁইয়া। তার বাড়ি কালিহাতী উপজেলার মহেলা গ্রামে।

অভিযোগে বলা হয়, মুক্তিযোদ্ধা মো. শাজাহান ভূঁইয়া তার পায়ের হাড় ফেটে যাওয়ায় গত ১৭ নভেম্বর চিকিৎসা নিতে টাঙ্গাইল জেনারেল হাসপাতালের মুক্তিযোদ্ধা শয্যায় ভর্তি হন। গত ২১ নভেস্বর অর্থোপেডিক সার্জারি বিভাগের প্রধান ও সহযোগী অধ্যাপক ডা. মো. শহীদুল্লাহ কায়সার রোগীকে চিকিৎসা দিতে যান।

এ সময় রোগীর চিকিৎসা নথিতে রাখা মো. শাজাহানের মুক্তিযুদ্ধের সনদ দেখে তিনি নার্সকে বলেন, এই গুরুত্বপূর্ণ সনদ এখানে কেন? এই সনদ কি রোগীর চিকিৎসা করবে নাকি ডাক্তার করবে। আমরা অত্যন্ত গুরুত্ব দিয়েই মুক্তিযোদ্ধাদের চিকিৎসা করি। এই বলে তিনি সনদটি ফাইল থেকে টান দিয়ে খুলে রোগীর বিছানায় রাখেন। খোলার সময় সনদটির কিছু অংশ ছিড়ে যায়।

এ ঘটনায় মুক্তিযোদ্ধা ও তার স্বজনরা ক্ষুব্ধ হন।

মুক্তিযোদ্ধা শাজাহান ভূঁইয়ার জামাতা আল আমিন জানান, তার শ্বশুর একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা। মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে ভাতাসহ সরকারি সকল সুযোগ-সুবিধা পেয়ে থাকেন। মুক্তিযুদ্ধের সনদ দেখিয়েই হাসপাতালে মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য সংরক্ষিত শয্যায় ভর্তি হয়েছিলেন। সেজন্য সনদের কপিটি চিকিৎসা নথিতে রাখা ছিল।

এ ঘটনা প্রকাশের পর মুক্তিযোদ্ধাদের মাঝে অসন্তোষের সৃষ্টি হয়। সামাজিক যোগযোগ মাধ্যমেও ব্যাপক সমালোচনা হয়।

সোমবার সকালে কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের সভাপতি ও মুক্তিযুদ্ধকালীন কাদেরিয়া বাহিনীর প্রধান বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী বীরউত্তম হাসপাতালে চিকিৎসাধীন মুক্তিযোদ্ধা মো. শাজাহানকে দেখতে যান।

টাঙ্গাইলের জেলা প্রশাসক মো. শহীদুল ইসলাম জানান, এ ব্যাপারে খোঁজখবর নিয়ে যথাযথ ব্যবস্থা নেয়া হবে।

টাঙ্গাইল জেনারেল হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. নারায়ন চন্দ্র সাহা জানান, এ ঘটনায় হাসপাতালের সহকারী পরিচালক ডা. সদর উদ্দিনকে প্রধান করে তিন সদস্য বিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। তদন্ত কমিটিকে তিন কার্য দিবসের মধ্যে প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে।

এ ব্যাপারে অধ্যাপক ডা. শহীদুল্লাহ কায়সার জানান, তিনি মুক্তিযোদ্ধার সনদ ছিড়েননি। পেশাগত, সাংগঠনিক ও রাজনৈতিকভাবে হীন স্বার্থ উদ্ধারের জন্য একটি চক্র তাকে সামজিকভাবে তার সম্মান ক্ষুণ্ণ করতে তিলকে তাল করে বিভ্রান্তি ছড়াচ্ছে।

বিএ-১৬/২৫-১১ (আঞ্চলিক ডেস্ক)