রাজাকারের তালিকায় বরিশালের মুক্তিযোদ্ধা ও শহীদ জায়ার নাম!

মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয় থেকে প্রকাশিত রাজাকারের তালিকায় বরিশালের ভাতাপ্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধা অ্যাডভোকেট তপন চক্রবর্তী ও তার মা শহীদ জায়া ঊষা চক্রবর্তীর নাম অন্তর্ভুক্ত হওয়ায় ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে মুক্তযোদ্ধা ও সামাজিক-সাংস্কৃতিক অঙ্গনে। মুক্তিযোদ্ধা তপন কুমার চক্রবর্তীর বাবা সুধির চক্রবর্তীকে পাকিস্তানি সেনারা বাসা থেকে ধরে নিয়ে নির্মমভাবে হত্যা করে।

রাজাকারের তালিকায় দেখা যায়, বরিশাল সদর উপজেলার ১০৭ জন রাজাকারের তালিকায় মুক্তিযুদ্ধে সহযোগীতা করার দায়ে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর হাতে নিহত সুধির চক্রবর্তীর স্ত্রী প্রয়ত ঊষা রানী চক্রবর্তীর নাম ৪৫ নম্বর ক্রমিকে এবং তার ছেলে মুক্তিযোদ্ধা তপন চক্রবর্তীর নাম রয়েছে ৬৩ নম্বরে।

বরিশালের বিশিষ্ট সংস্কৃতজন নজরুল ইসলাম চুন্নু বলেন, শহীদ সুধির চক্রবর্তীর পরিবার বরিশালের সামাজিক-সাংস্কৃতিক ও প্রগতিশীল রাজনৈতিক অঙ্গনে দীর্ঘ বছর ধরে অবদান রাখছে। তার নাতনী ডা. মনিষা চক্রবর্তী বাসদ বরিশাল জেলা শাখার সদস্য সচিব এবং গত বছর জুলাই মাসে অনুষ্ঠিত বরিশাল সিটি নির্বাচনে মেয়র পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে দেশব্যাপী আলোচনায় আসেন।

মুক্তিযোদ্ধা বাবা ও শহীদ জায়া ঠাকুরমার নাম রাজাকারের তালিকায় অন্তর্ভূক্ত হওয়ায় সোমবার দুপুরে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে দেওয়া এক স্টাটাসে ডা. মনিষা চক্রবর্তী বলেন, ‘মানুষের জন্য নিঃস্বার্থ কাজ করার পুরস্কার পেলাম আজ। ধন্যবাদ আওয়ামী লীগকে। সদ্য প্রকাশিত রাজাকারদের গেজেটে আমার বাবা এবং ঠাকুরমার নাম প্রকাশিত হয়েছে। আমার বাবা অ্যাডভোকেট তপন কুমার চক্রবর্তী একজন গেজেটেড মুক্তিযোদ্ধা, যার ক্রমিক নং ১১২, পৃষ্টা ৪১১৩।

তিনি নিয়মিত মুক্তিযোদ্ধা ভাতাও পেয়ে থাকেন। আজ রাজাকারের তালিকায় তিনি ৬৩ নাম্বার রাজাকার। আমার ঠাকুরদা অ্যাডভোকেট সুধির কুমার চক্রবর্ত্তীকে পাকিস্তানী মিলিটারি বাহিনী বাসা থেকে ধরে নিয়ে গিয়ে হত্যা করে। তিনিও ভাতাপ্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে স্বীকৃত। তাঁর সহধর্মিণী আমার ঠাকুমা উষা রানী চক্রবর্ত্তীকে রাজাকারের তালিকায় ৪৫ নম্বারে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।

শ্রমজীবী খেটে খাওয়া মানুষদের জন্য আমার রাজনীতি করার খেসারত দিতে হচ্ছে আমার মুক্তিযোদ্ধা বাবাকে। ধন্যবাদ আওয়ামী লীগ সরকারকে। আমরা জেল খেটেছি, নির্যাতন সহ্য করেছি কিন্তু অন্যায়ের কাছে মাথানত করিনি। ভয় দেখিয়ে আমাদের কিছু করা যাবে না।’

এ প্রসঙ্গে মনীষা চক্রবর্তী বলেন, ‘বিষয়টি খুবই বিষ্ময়কর। কারণ, আমাদের পরিবার স্বাধীনতার বহু আগে থেকেই প্রগতিশীল রাজনীতির সঙ্গে জড়িত। আমার ঠাকুরদাকে মুক্তিযুদ্ধের সময় মুক্তিযোদ্ধাদের সহায়তা করার কারণে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী ও রাজাকারেরা নির্মমভাবে হত্যা করে। আমার বাবা সরাসরি মুক্তিুযুদ্ধে অংশ নেন। তিনি গেজেটভুক্ত মুক্তিযোদ্ধা। এরকম একটি পরিবারকে রাজাকারের তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করা অবশ্যই নিন্দনীয় এবং ষড়যন্ত্র। এর সঙ্গে যে চক্র জড়িত তাদের শনাক্ত করে বিচারের আওতায় আনা হোক।’

এ বিষয়ে জানতে চাইলে জেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডের সাবেক ডেপুটি কমান্ডার মহিউদ্দিন মানিক বীর প্রতীক ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ‘আমরা এ ঘটনায় ক্ষুব্ধ ও হতবাক। অবিলম্বে এ তালিকা সংশোধন করে ওই পরিবারের সম্মান সুরক্ষা করা হোক। এই অসম্মানের জন্য তাদের কাছে দুঃখ প্রকাশ করা উচিত।’

যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা এমজি ভুলু বলেন, একজন শহীদের স্ত্রী ও মুক্তিযোদ্ধা পুত্রের নাম রাজাকারের তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হওয়া দুর্ভাগজনক।

বরিশালের জেলা প্রশাসক এস.এম অজিয়র রহমান বলেন, তিনি বিষয়টি মৌখিকভাবে শুনেছেন। জেলা প্রশাসন থেকে এই নামের তালিকা দেওয়া হয়নি। তালিকা হাতে পেলে যাচাই-বাচাই করে ভুল-ত্রুটি সংশোধনের উদ্যোগ নেওয়া হবে।

বিএ-০৯/১৬-১২ (আঞ্চলিক ডেস্ক)