মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে ২২ বছর ধরে শিকলবন্দী সাবেক পুলিশ সদস্য

রাজবাড়ী সদর উপজেলার বসন্তপুরের রাজাপুর গ্রামের মোক্তার মোল্লা। একসময় চাকরি করতেন পুলিশে। চাকরিরত অবস্থায়ই মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে ফেলেন তিনি।

এরপর বিভিন্ন স্থানে চিকিৎসা চললেও তাকে সুস্থ করা যায়নি। অবস্থা এতটাই ভয়াবহ যে পায়ে লোহার শিকল পরাতে বাধ্য হয় পরিবারের লোকজন। শিকলবন্দী অবস্থায় তার জীবন থেকে কেটে গেছে ২২ বছর।

তীব্র এই শীতের মধ্যেও লোহার বাধন খোলেনি মোক্তারের। কাউকে দেখলে অসহায় দৃষ্টিতে ফ্যাল ফ্যাল করে তাকিয়ে থাকেন। তার চাহনিতে অজানা কষ্ট বুকে চাপা দেয়ার ছাপ।

পরিবারের লোকজন জানান, মোক্তারকে উন্নত চিকিৎসা করাতে পারলে হয়তো তার সুস্থ হয়ে উঠার সুযোগ আছে। এজন্য সরকারি সহযোগিতা চান তারা।

জানা গেছে, রাজাপুর গ্রামের মৃত আসমত আলী মোল্লার ছেলে মোক্তার মোল্লা ১৯৭৫ সালের ২৫ অক্টোবর বুকভরা স্বপ্ন নিয়ে বাংলাদেশ পুলিশ বাহিনীতে কনস্টেবল পদে চাকরিতে যোগদান দেন। দাম্পত্য জীবনে তিনি এক ছেলে ও দুই কন্যা সন্তানের জনক।

পুলিশ বাহিনীতে চাকরির পর তার জীবন সুখেই কাটছিল। কিন্তু তার সেই সুখ বেশী দিন টেকেনি। ১৯৯৭ সালে মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে ফেলায় ওই বছরের ১ অক্টোবর চাকরি থেকে অবসর নিতে বাধ্য হন তিনি।

এরপর বিভিন্ন স্থানে চিকিৎসা সেবা নিয়েও আর সুস্থ হতে পারেননি। তার অবস্থা এতোটাই ভয়াবহ ছিল যে পায়ে লোহার শিকল পড়াতে বাধ্য হয় পরিবারের লোকজন। সেই ১৯৯৭ থেকে আজ পর্যন্ত দীর্ঘ ২২ বছর ধরে মোক্তার মোল্লার পায়ে শিকল বাধা রয়েছে।

মোক্তার মোল্লা মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে ফেলার পর জীবন যুদ্ধে নামে তার স্ত্রী তাসলিমা বেগম। শত কষ্টের মাঝেও সন্তানদের মানুষের মত মানুষ করার জন্য লেখাপড়া করান।

২০১৫ সালে মোক্তার মোল্লাকে নিয়ে স্থানীয় পত্রিকায় সংবাদ প্রকাশ হলে জেলা পুলিশ সুপারের হস্তক্ষেপে পুলিশে চাকরি হয় তার ছেলে তৈয়বুর রহমানের। কিন্তু চিকিৎসার অভাবে আজও পর্যন্ত শিকলমুক্ত হতে পারেননি তিনি।

মোক্তার মোল্লার স্ত্রী তাসলিমা বেগম বলেন, আমার ছেলেকে এসপি সাহেব চাকরি দিয়েছেন; এজন্য আমি পুলিশ বিভাগের প্রতি কৃতজ্ঞ। কিন্তু এই ছেলের বেতনের টাকায় আমার মেয়েদের লেখাপড়ার খরচ চালানো ও সংসার চালাতে হিমশিম খেতে হয়। আমার বিশ্বাস আমার স্বামীকে সরকারের পক্ষ থেকে যদি এখন ভালো চিকিৎসা করানো হয় তাহলে তিনি সুস্থ হয়ে উঠবেন।

বসন্তপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মীর্জা বদিউজ্জামান বাবু যুগান্তরকে বলেন, আমার ইউনিয়নের সাবেক পুলিশ সদস্য মোক্তার মোল্লা মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে দীর্ঘ ২২ বছর ধরে শিকলবন্দী রয়েছেন। যা অত্যান্ত হৃদয়বিদারক। উন্নত চিকিৎসা করাতে পারলে তার সুস্থ হবার সম্ভাবনা রয়েছে।

জীবনের এই পড়ন্ত বেলায় উন্নত চিকিৎসা নিয়ে শিকলমুক্ত হয়ে মুক্ত বাতাসে ঘুরবেন মোক্তার মোল্লা; এমনটিই চাওয়া পরিবার ও প্রতিবেশীদের।

বিএ-০৭/০৮-০১ (আঞ্চলিক ডেস্ক)