একটি বাড়ি নিয়েই গ্রাম

গ্রামের নাম বিষ্ণুপুর। সবাই ডাকে বেষ্টপুর বলে। আগে থেকেই গ্রামটি ছোট। লোক সংখ্যা কমতে কমতে এখন একেবারেই ছোট গ্রামে পরিণত হয়েছে। এখন একটি বাড়ি নিয়ে একটি গ্রাম। ফরিদপুরের বোয়ালমারী উপজেলার রূপাপাত ইউনিয়নে এক বাড়ি নিয়েই ওই গ্রামের অবস্থান।

উপজেলার দক্ষিণ দিকের সর্বশেষ প্রান্তর ওই বাড়িতে বসবাস করছে ৯টি পরিবার। বাবা-মা, ছেলে-মেয়ে, নাতি-নাতনিসহ মোট ৩৭জনের বসবাস। তাদের মধ্যে ভোটার রয়েছেন ১৫জন। এক বাড়ি, এক গ্রামের দক্ষিণ দিকে গোপালগঞ্জের কাশিয়ানী উপজেলার মহেশপুর ইউনিয়নের জয়নগর এবং উত্তরে বোয়ালমারীর টোংরাইল গ্রামের অবস্থান।

সরেজমিনে দেখা যায়, বোয়ালমারী উপজেলা সদর থেকে প্রায় ১০-১২ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত রূপাপাত ইউনিয়ন। ইউনিয়নের ৬ নম্বর ওয়ার্ডের অন্তর্গত টোংরাইল, সুতালীয়া, বনমালীপুর, কদমী গ্রামের মধ্যবর্তী গ্রাম হলো বিষ্ণুপুর।

প্রায় ৬০ শতাংশ জায়গায় বিষ্ণুপুর গ্রামটি শুরু থেকেই কয়েকটি হিন্দু পরিবারসহ ৭-৮ বাড়ি নিয়ে গঠিত ছিল। গ্রামের চারদিকে ফসলি জমি, ও কাদামাটিতে পরিবেষ্টিত। খালি পায়ে কাদামাটি ও পানি পেরিয়ে কোনো রকমে ঢুকতে হয় রাস্তাবিহীন ও উন্নয়নবঞ্চিত এই গ্রামে। বছরের ছয় মাস পানি, ছয় মাস ফসলি জমির ভেতর দিয়েই চলাচল করতে হয় গ্রামটির বাসিন্দাদের।

বিষ্ণুপুর গ্রামের বাসিন্দা সলেমান মোল্লা (৬০) জানান, নানা বঞ্চনা, দুর্ভোগ ও দুর্গতি এবং রাস্তাঘাট না থাকায় অনেকেই গ্রাম ছেড়ে চলে গেছেন। আমরা একটা পরিবার গ্রামটিকে টিকিয়ে রেখেছি। এলাকার চেয়ারম্যান, মেম্বাররা আসেন শুধু ভোটের সময়। ভোট চলে গেলে তাদের দেখা যায় না। এমপিদের কোনদিন আমাদের গ্রামে আসতে দেখিনি। তবে সাবেক এমপি আব্দুর রহমান সাহেব বিদ্যুৎ লাইনের ব্যবস্থা করে দিয়েছেন। এজন্য টিকে আছি। বিদ্যুতের জন্য টেলিভিশন ও মোবাইল চালানো যায়।

গ্রামের আরেক বাসিন্দা হেমায়েত মোল্লা বলেন, আমাদের মূল সমস্যা যাতায়াতের। দেড় কিলোমিটার দূরে প্রাইমারি স্কুল, দুই কিলোমিটার দূরে হাইস্কুলে গিয়ে ছেলেমেয়েরা পড়াশোনা করে। গ্রামে নেই মসজিদ। আধা কিলোমিটার দূরে গিয়ে প্রতি বছর দুই ঈদের নামাজ এবং প্রতি শুক্রবার জুমার নামাজ পড়তে হয়। গ্রামটি ছোট হওয়ায় উন্নয়ন বঞ্চিত এবং অবহেলিত।

গ্রামের পার্শ্ববর্তী টোংরাইল গ্রামের বাসিন্দা মহানন্দ বিশ্বাস, রিপন বিশ্বাস ও রমেন বিশ্বাস জানান, বিষ্ণুপুর গ্রামের যাতায়াত ব্যবস্থা খুবই খারাপ। যাতায়াতের জন্য রাস্তাঘাট নেই। ছোট একটি আইল দিয়ে চলাচল করেন তারা। বিশেষ করে বর্ষা মৌসুমে গ্রামের লোকজন নৌকা ছাড়া বাড়ি থেকে বের হতে পারেন না।

শুকনো মৌসুমেও তাদের কাদা মাড়িয়ে চলতে হয়। ফলে গ্রামের বাসিন্দাদের অনেক দুর্ভোগ পোহাতে হয়।
স্থানীয় ইউপি সদস্য (মেম্বার) রবিন বিশ্বাস বলেন, রাস্তা তৈরির জন্য বরাদ্দ দেওয়ার পরও রাস্তা করা সম্ভব হয়নি। কারণ অন্যদের জমির ওপর দিয়ে রাস্তা করতে গেলে জমির মালিকরা বাধা দেন। আমাদের সাধ্যমতো উন্নয়ন করার চেষ্টা করেছি। বিভিন্ন ভাতার কার্ডসহ সরকারি সুযোগ-সুবিধা দিয়েছি গ্রামের বাসিন্দাদের।

বোয়ালমারী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ঝোটন চন্দ্র বলেন, ওই গ্রামের কথা আমি জানি না। খোঁজখবর নেবো। আমি গ্রামটি দেখতে যাবো।

তথ্য অনুযায়ী, সিলেটের বিশ্বনাথ উপজেলার ‘শ্রীমুখ’ গ্রামটি এশিয়ার সবচেয়ে ছোট গ্রাম। সিলেটের বিশ্বনাথ উপজেলার খাজাঞ্চি ইউপিতে অবস্থিত শ্রীমুখ গ্রামটি। সরকারি গেজেটভুক্ত এই গ্রামটিতে স্বাধীনতার আগে থেকেই বসবাস করে আসছে একটি মাত্র পরিবার। সে হিসেবে দ্বিতীয় ছোট গ্রাম ফরিদপুরের বিষ্ণুপুর।

এসএইচ-১৫/২০/২১ (আঞ্চলিক ডেস্ক)