স্বাস্থ্য কর্মকর্তাকে পেটালেন সেই চেয়ারম্যান

পটুয়াখালীর বাউফলের সালিশ বৈঠকে কিশোরীকে বিয়ে করা সেই আলোচিত চেয়ারম্যান শাহীন হাওলাদারের বিরুদ্ধে এক স্বাস্থ্য কর্মকর্তাকে মারধরের অভিযোগ উঠেছে।

শনিবার বেলা ১১টায় পটুয়াখালীর বাউফল উপজেলার কনকদিয়া ইউপি কার্যালয়ে আল আমিন সিকদার নামে স্বাস্থ্য সহকারী কর্মকর্তাকে কিল ঘুষি আর লাথি মারেন এই চেয়ারম্যান। এতে ঘটনাস্থলেই অজ্ঞান হয়ে পড়েন তিনি।

এ সময় তিনি অশ্লীল ভাষায় গালিগালাজ করেন ইউনিয়ন সহকারী স্বাস্থ্য পরির্দশক তাসলিমা নাজনিন এবং উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা অফিসার (ইউএইচও) প্রশান্ত কুমার সাহাকে।

শাহিন হাওলাদার (৬০) বাউফলের কনকদিয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান। তিনি ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদকের দায়িত্বে রয়েছেন।

ভুক্তভোগী আল আমিন সিকদার বলেন, সরকারের নির্দেশনা অনুযায়ী রেজিস্ট্রেশন করে কনকদিয়া ইউনিয়নে ৬০০ জনকে করোনা টিকা দিতে কার্যক্রম শুরু করি। কিন্তু তিনি (চেয়ারম্যান) বেলা ১১টায় উপস্থিত হয়ে আমাদের বলেন-যারা ভ্যাকসিন নিতে আসছে তাদের ভোটার আইডি কার্ডের ফটোকপি রেখে দিতে। সরকারি নির্দেশনা অনুযায়ী রেজিস্ট্রেশনের কথা বললে তিনি (চেয়ারম্যান) ক্ষিপ্ত হয়ে এলোপাতাড়ি কিল-ঘুষি এবং লাথি মারেন। এতে অজ্ঞান হয়ে ফ্লোরে পড়ে যাই। একপর্যায়ে সহকর্মীদের সেবায় সুস্থ হয়ে উঠি। এরপর শুনি তাসলিমা আপা (ইউনিয়ন সহকারী স্বাস্থ্য পরির্দশক) ও ইউএইচও স্যারকে গালাগালি করেছেন তিনি।

তাসলিমা নাজনিন বলেন, যে ভাষায় গালাগালি করেছে তা মুখে শোভা পায় না।

উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা প্রশান্ত কুমার সাহা বলেন, স্বাস্থ্যকর্মী আল আমিন সিকদার ভ্যাকসিন কার্যক্রম শেষ করে আমাকে রাতে ফোনে জানিয়েছে। আমরা এ ব্যাপারে সরকারি বিধি অনুযায়ী আইনি ব্যবস্থা নেব।

অভিযুক্ত চেয়ারম্যান শাহীন হাওলাদার বলেন, নিজেদের দোষ ঢাকতে তারা মিথ্যা অভিযোগ করেছে। টিকা দিতে এসে স্বাস্থ্যকর্মীরা স্বজনপ্রীতি করছেন। ফলে বিশৃঙ্খলা দেখা দিলে প্রতিবাদ করেছি। কাউকে মারধর কিংবা গালাগালির অভিযোগ সত্য না।

গত ২৫ জুন শালিস বৈঠকে এক কিশোরীকে জোরপূর্বক বিয়ে করে ব্যাপক সমালোচিত হন। তিনি ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদকের দায়িত্বে রয়েছেন।

জানা গেছে, কনকদিয়া ইউনিয়নের নারায়ণপাশা গ্রামের রমজান (২৫) নামের এক যুবকের সঙ্গে একই ইউনিয়নের চুনারপুল এলাকার নবম শ্রেণির ছাত্রী নছিমনের প্রেমের সম্পর্ক ছিল। কিন্তু এ সম্পর্ক মেনে নিতে পারেননি নছিমনের বাবা নজরুল ইসলাম। তিনি এ বিষয়টি কনকদিয়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান শাহিন হাওলাদারকে জানান।

চেয়ারম্যান শাহিন হাওলাদার গত ২৫ জুন ইউনিয়ন পরিষদে সালিশ বৈঠক ডাকেন। ওই বৈঠকে রমজান ও নছিমনসহ দুই পরিবারের সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন।

সালিশ বৈঠকে মেয়ে দেখে পছন্দ হয়ে যাওয়ায় তাকে বিয়ের প্রস্তাব দেন চেয়ারম্যান শাহিন হাওলাদার। মেয়ের বাবা এ বিয়েতে সম্মতি প্রকাশ করলে ওই দিন বাদ জুমা চেয়ারম্যানের আয়লা বাজারস্থ বাসায় কাজী ডেকে এনে ৫ লাখ টাকা কাবিনে নছিমনকে বিয়ে করেন।

এসএইচ-২০/০৮/২১ (আঞ্চলিক ডেস্ক)