বেনাপোলে আশ্রয়ণ প্রকল্পের একাধিক ঘরে ফাটল!

মাঠের মধ্য দিয়ে নির্জন ২ কিলোমিটারের কাঁচা রাস্তা। বৃত্তিআঁচড়া নামক স্থান থেকে শুরু করে রাস্তাটি মিশেছে শার্শার আমড়াখালী বিজিবি চেকপোস্ট মহাসড়কে। এ সড়কের ঠিক মাঝখানে এক কিলোমিটারের মধ্যে নেই কোনো জনবসতি। চাষিরা ফসল তোলা ছাড়া সাধারণত এ রাস্তা অন্যরা ব্যবহার করে না। আর বর্ষার সময় সড়কটিতে হাঁটু কাদামাটি হওয়ায় চলাচলের অনুপযোগী হয়ে ওঠে।

চুরি, ডাকাতির ভয়ে এ সড়কটির নাম শত বছর ধরে চোরের রাস্তা। এখনও এ নামে চেনে সবাই। আর এ রাস্তাটির ওপর তৈরি করা হয়েছে সরকারি আশ্রয়ণ প্রকল্পের ৩১টি পাকা ঘর। তবে ঘরে বসবাস শুরু করার আগেই দেখা দিয়েছে বিভিন্ন জায়গায় ফাটল। নিম্নমানের উপকরণ দিয়ে তৈরি করা হয়েছে ঘরগুলো। এতে অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে।

তবে বিতর্ক হলে রাতারাতি পুটিং করে রং মিলিয়ে তা ঢাকার চেষ্টা করা হয়েছে সরেজমিনে গিয়ে এমনটি দেখা যায়। প্রধানমন্ত্রীর দেওয়া উপহারের ঘর ব্যবহারের আগেই এ অবস্থা, তাহলে দেশের অন্যান্য জেলার ন্যায় শার্শায় গৃহ নির্মাণেও অনিয়ম-দুর্নীতি হয়েছে কি? এমন প্রশ্নই এখন ঘুরপাক খাচ্ছে সাধারণ মানুষের মাথায়।

জানা যায়, মুজিব শতবর্ষ উপলক্ষে সারাদেশের ভূমিহীন ও গৃহহীন ৮ লাখ ৮৫ হাজার ৬২২টি পরিবারের তালিকা করে তাদের জমিসহ ঘর উপহার দিচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। মুজিববর্ষে কেউ গৃহহীন থাকবে না। বঙ্গবন্ধু কন্যার এই ঘোষণা বাস্তবায়নে আশ্রয়ণ প্রকল্পের আওতায় এরই মধ্যে ২ শতাংশ জমির সাথে পাকা ঘর পেয়ে বসবাস করছেন শার্শা উপজেলার ৫০টিরও বেশি পরিবার। হস্তান্তরের অপেক্ষায় রয়েছে বেনাপোল ইউনিয়নের দিঘিরপাড় মৌজায় এই ৩১টি ঘর। এরই মধ্যে একাধিক ঘরে ফাটল দেখা দিয়েছে।

বেনাপোলে গয়ড়া গ্রামের আলমগীর হোসেন জানান, জায়গাটি বর্তমান অবস্থায় সম্পূর্ণ বসবাসের অনুপযোগী। সাপ পোকা মাকড়ের আস্তানা। আর একেবারে রাস্তার ওপর ঘর করা হয়েছে। এতে ভবিষ্যতে রাস্তাটি পাকা হলে ব্যবহারকারীদের চলাফেরা ঝুঁকি হয়ে দাঁড়াবে। এছাড়া নিম্নমানের সামগ্রী দিয়ে ফাঁকা জায়গায় ঘরগুলো তৈরি করায় ঝড় বৃষ্টিতে টিকবে না। ইতিমধ্যে ব্যবহারের আগেই অনেক ঘরের মেঝে ও দেয়ালে ফাটল ধরেছে। কর্তৃপক্ষ চেষ্টা করলে হয়তো আরও ভালো আর নিরাপদ জায়গায় ঘরগুলো নির্মাণ করতে পারতেন।

উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা লাল্টু মিয়া জানান, প্রথম ধাপে ১ লাখ ৭১ হাজার টাকা ও কিছু ঘর ১ লাখ ৯০ হাজার টাকা নির্মাণ ব্যয়ে শার্শা উপজেলার ৭টি ইউনিয়নে মোট ৮৫টি ঘর হস্তান্তর করা হয়েছে। এ পর্যন্ত ঘর নির্মাণে অনিয়মের কোনো অভিযোগ পাওয়া যায়নি। নির্মাণ কাজের ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান প্রশ্নে তিনি জানান, কোনো ঠিকাদার নেই, উপজেলা কমিটির তত্ত্বাবধায়নে গৃহহীনদের ঘর নির্মাণ হয়েছে।

এই কমিটির সভাপতি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এবং স্ব স্ব ইউনিয়নের চেয়ারম্যানরা কমিটিতে যুক্ত আছে। এ পর্যন্ত উপজেলার উলাশী ইউনিয়নে ২৭টি, কায়বা ইউনিয়নে ৬টি, পুটখালী ইউনিয়নে ১০টি, গোগা ইউনিয়নে ৩টি, বাহাদুরপুর ইউনিয়নে ৪টি ও ডিহি ইউনিয়নে ৬টি ঘর হস্তান্তর হয়েছে এবং বেনাপোলের ৩১টি ঘর হস্তান্তরের অপেক্ষায় রয়েছে বলে জানান তিনি।

শার্শা উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা মীর আলিফ রেজা জানান, চোরের রাস্তায় নির্মিত ঘরগুলোর মধ্যে দুইটিতে ফাটল দেখা দেওয়ায় সেগুলো ইতিমধ্যে মেরামত করা হয়েছে। নতুন তোলা মাটির ওপর ঘর নির্মাণ করায় এ সমস্যা দেখা দিয়েছে। আগামী এক মাসের মধ্যে এসব ঘর তালিকাভুক্তদের মাঝে হস্তান্তর করা হবে। তবে ঘর হস্তান্তরের আগে বসবাসের ভালো পরিবেশ তৈরি করা হবে বলেও জানান তিনি।

এসএইচ (আঞ্চলিক ডেস্ক)