ইউএনও ও থানার ওসির বিরুদ্ধেমামলা সিটি করপোরেশনের

ইউএনও

বরিশালের সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ( ইউএনও ) মুনিবুর রহমান শোভনের বিরুদ্ধে এবার দুটি পৃথক মামলা করেছেন সিটি করপোরেশনের একজন কাউন্সিলর এবং একজন কর্মকর্তা, যেখানে তার বিরুদ্ধে ‘সিটি করপোরেশনের নিয়মিত কাজে বাধাদান ও হামলার’ অভিযোগ আনা হয়েছে। একটি মামলায় সদর থানার ওসিকেও অভিযুক্তের তালিকায় রাখা হয়েছে।

জেলা জজ আদালতে দায়ের করা এই মামলা দুটি উপজেলা প্রশাসনের সাথে নগর ভবনের সাম্প্রতিক মুখোমুখি অবস্থানকে নতুন মাত্রা দিল।

এর আগে সরকারি বাসভবনে হামলার ঘটনায় ইউএনও মি. রহমান নিজে বাদী হয়ে একটি মামলা করেছিলেন।

গত বৃহস্পতিবার রাতে পরিচ্ছন্নতা অভিযানকে কেন্দ্র করে ইউএনও’র সরকারি বাসভবনে একদল মানুষ হামলা চালায়। পরে এ নিয়ে মামলা হয় এবং পুলিশ একজন কাউন্সিলরসহ বেশ কয়েকজনকে গ্রেপ্তার করে যারা মেয়র সেরনিয়াবাত সাদিক আব্দুল্লাহর অনুসারী বলে পরিচিত।

গ্রেপ্তারকৃত সবার জামিন আবেদনই রবিবার নাকচ করে দিয়েছে আদালত।

এসব ঘটনাপ্রবাহের জেরে গত তিনদিন ধরে বরিশালে পরিচ্ছন্নতা কর্মকাণ্ড বন্ধ রেখেছিল সিটি করপোরেশনের পরিচ্ছন্নকর্মীরা।

তবে রোববার থেকে তারা আবার পরিচ্ছন্নতা কর্মকাণ্ড শুরু করেছেন বলে খবরে জানা যাচ্ছে।

যে দুটি মামলা করা হয়েছে তার একটি মামলার বাদী সিটি করপোরেশন একজন কাউন্সিলর রফিকুল ইসলাম খোকন।

তার আইনজীবী কাইয়ুম খান কায়সার জানান, অভিযোগে তারা বলেছেন, “বুধবার রাতে বরিশাল সিটি কর্পোরেশনের পরিচ্ছন্নতা কর্মীরা অব্যবহৃত ব্যানার, পোস্টার পরিষ্কার করতে ইউএনও’র বাসায় গেলে তাদেরকে বাধা দেয়া হয়। এরপর ঘটনাস্থল পর্যবেক্ষণ করতে প্যানেল মেয়র সেখানে যান এবং বাকবিতণ্ডার এক পর্যায়ে ইউএনও’র নির্দেশে সেখানে উপস্থিত আনসাররা প্যানেল মেয়র এবং তার কর্মীদের লক্ষ্য করে গুলিবর্ষণ করে।”

অন্যদিকে সিটি কর্পোরেশনের একজন কর্মকর্তাও সিটি করপোরেশনের পরিচ্ছন্নতা অভিযানে বাধাদান ও হামলার অভিযোগ এনে মামলা করেছেন, যেখানে তিনি ইউএনও ও কোতয়ালি থানার ওসি নুরুল ইসলাম সহ ৪০-৫০ জনকে অভিযুক্ত করেছেন।

“অভিযোগ সেখানেও একই ধরণের। সিটি কর্পোরেশনের কর্মীরা তাদের দায়্ত্বি পালনে যাওয়ার পর তাদের বাধা দেয়া হয় এবং এক পর্যায়ে ইউএনওর নির্দেশে তাদের মারধর ও গুলি করা হয়”, বলেন মি. কাওসার।

আদালত মামলা দুটি গ্রহণ করে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনকে বা পিবিআইকে তদন্ত করতে নির্দেশ দিয়েছে এবং আগামী ২৩শে সেপ্টেম্বরের মধ্যে প্রতিবেদন জমা দিতে বলেছে।

১৮ই অগাস্ট বুধবার রাতে বরিশাল সদর উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা মুনিবুর রহমানের সরকারি বাসভবনে হামলা করা হয় বলে অভিযোগ ওঠে। ঐ ঘটনার পরদিনই ইউএনও মুনিবুর রহমান বাদী হয়ে একটি মামলা দায়ের করেন এবং সেই মামলায় অভিযোগ তোলেন যে ‘সিটি কর্পোরেশনের মেয়রের নির্দেশে’ একটি দল ইউএনও’কে ‘ঘিরে ফেলে এবং প্রাণনাশের’ হুমকি দেয়।

সেসময় ইউএনও’র বাড়িতে থাকা আনসার সদস্যদের সাথে হামলাকারী দলের সদস্যদের কয়েক দফা সংঘর্ষ হয় বলে অভিযোগ করেন মি. রহমান।

তবে বুধবার রাতেই মেয়র সেরনিয়াবাত সাদিক আবদুল্লাহ অভিযোগ তোলেন যে ইউএনও’র বাসায় দায়িত্বরত আনসার সদস্যরা তার নেতাকর্মীদের দিকে গুলি ছোঁড়ে এবং তাদের মধ্যে কয়েকজন আহত হন।

ইউএনও’র বাসায় হামলার সাথে জড়িত থাকার সন্দেহে এখন পর্যন্ত অন্তত ১৮ জনকে আটক করা হয়েছে বলে জানিয়েছে কোতোয়ালী থানা পুলিশ।

এই ঘটনার জের ধরে শুক্রবার বাংলাদেশ অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশন বরিশালের মেয়র সেরনিয়িাবাত সাদিক আবদুল্লাহকে গ্রেফতার করার দাবি জানায়।

অন্যদিকে প্রশাসন ক্যাডারের কর্মকর্তাদের সংগঠন বাংলাদেশ অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশনের বিবৃতির তীব্র সমালোচনা করেন মেয়রের ঘনিষ্ঠ আওয়ামী লীগ নেতারা।

একই সাথে তারা ইউএনও’র বাসায় হামলার ঘটনাকে ‘নাটক’ আখ্যায়িত করেন এবং বলেন যে এ ঘটনা নিয়ে পুলিশ ও প্রশাসন বাড়াবাড়ি করছে, এবং পুলিশ প্রশাসনের তদন্তে তাদের কোন আস্থা নেই।

এই বিষয়ে প্রথম তিনদিন মেয়র আবদুল্লাহর কোনো বক্তব্য না পাওয়া গেলেও শনিবার সন্ধ্যায় তিনি এক সংবাদ সম্মেলন করেন।

সাংবাদিকদের মি. আবদুল্লাহ বলেন, “আমরা ঘটনার বিচার বিভাগীয় তদন্ত চাই। ঘটনার পুরো ভিডিওটি দেখতে চাই। যদি অন্যায় আমার হয়ে থাকে, আমার বিচার অবশ্যই হবে।”

তিনি বলেন ইউএনও’র বাসায় সংঘর্ষের সময় তার নেতাকর্মীদের দু’জনের চোখ নষ্ট হয়েছে।

বরিশালে সিটি কর্পোরেশনে মেয়র সাদিক আবদুল্লাহর বিরুদ্ধে অভিযোগ তুলে মামলা করার দুই দিনের মধ্যে এবার বিরুদ্ধে অভিযোগ এনে সদর উপজেলার ইউএনওর মামলা

আবদুল্লাহ সংবাদ সম্মেলনে জানান যে সংঘর্ষের ঘটনার জের ধরে মামলা-গ্রেফতার আতঙ্কে বরিশাল সিটি কর্পোরেশনের পরিচ্ছন্নতা কর্মীরা পরিচ্ছন্নতা কাজ বন্ধ রেখেছিলেন। শনিবার রাতে সংবাদ সম্মেলনে তিনি পরিচ্ছন্নতা কর্মীদের কাজে ফেরার অনুরোধ জানান।

রোববার সকালে দেখা যায় পরিচ্ছন্নকর্মীরা আবার কাজে ফিরেছেন।

সংঘর্ষের ঘটনার জের ধরে শনিবার বরিশাল নগরীতে মেয়রের বিরুদ্ধে করা মামলা প্রত্যাহারের দাবিতে মানববন্ধন করা হয়। ঘটনার পর বুধবার রাতে বরিশাল থেকে বাস ও লঞ্চ চলাচল সাময়িকভাবে বন্ধ হলেও পরদিন সকাল থেকে বাস ও লঞ্চ চলাচল আবার স্বাভাবিক হয়।

এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে নগরীতে অস্থিরতা তৈরি হতে পারে, এমন আশঙ্কায় বরিশাল নগরে বিজিবি মোতায়েন করার চিন্তা করা হলেও শুক্রবার বরিশালের বিভাগীয় কমিশনার বিজিবি মোতায়েনের সম্ভাবনা নাকচ করে দেন।

এসএইচ-১৬/২২/২১ (আঞ্চলিক ডেস্ক)